সল্টলেকের সেক্টর তিনের সেই বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।
সল্টলেকের তিন নম্বর সেক্টরের জিসি-৩০। সাজানো গোছানো ছিমছাম দোতলা বাড়ি। বাইরে থেকে দেখলে বিশ্বাস করা যায় না, এই বাড়িতেই সকালে ঘটে গিয়েছে হত্যাকাণ্ড। স্নানঘর থেকে উদ্ধার হয়েছে বৃদ্ধার রক্তাক্ত দেহ। পাশেই ডাইনিং টেবিলের কাছে পড়ে ছিলেন বৃদ্ধও। তবে তাঁর দেহে প্রাণ ছিল। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, বৃদ্ধা স্ত্রীকে খুন করে বৃদ্ধ নিজে আত্মঘাতী হতে চেয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বাইপাসের ধারের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এই বাড়ির কাণ্ডকারখানা যেন বিশ্বাসই করতে পারছেন না দম্পতির প্রতিবেশীরা। তাঁদের অবিশ্বাসের অন্যতম কারণ, নৈঃশব্দ্য।
যদুনাথ মিত্র এবং তাঁর স্ত্রী মন্দিরা মিত্রের বাড়ির ঠিক পাশেই থাকেন রাজেশ চিরমার। তিনি নিকটবর্তী ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। যদুনাথ আগে সেনাবাহিনীতে চিকিৎসক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। তাঁকে ‘ডাক্তারবাবু’ বলেই চিনতেন রাজেশরা। ‘ডাক্তারবাবু’দের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কও ভাল ছিল। রাজেশ তাই বিশ্বাসই করতে পারছেন না, এমন একটি ঘটনা নাকের ডগায় কী ভাবে ঘটে গেল! কী ভাবে তাঁরা ঘুণাক্ষরেও টের পেলেন না? কেন ওই বাড়ির দোতলা থেকে কোনও শব্দ হল না?
সংবাদমাধ্যমে রাজেশ জানিয়েছেন, বৃদ্ধ দম্পতি সাধারণত চুপচাপই থাকতেন। তাঁদের মধ্যে কোনও অশান্তির আঁচ বাইরে থেকে পাওয়া যায়নি। এলাকায় চিকিৎসা সংক্রান্ত কোনও ক্যাম্প হলেও বৃদ্ধ যেতেন। স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই ছিলেন শান্ত স্বভাবের। বুধবার সকালে পরিচারিকা এবং আবর্জনা সংগ্রহ করার কর্মী ওই বাড়িতে যান। তাঁদের চিৎকারেই ঘটনার কথা জানতে পারেন রাজেশরা। তাঁরা ওই বাড়িতে ছুটে যান। দেখা যায়, ঘর রক্তে ভেসে যাচ্ছে। ডাইনিংয়য়ের চেয়ারের উপর শরীর এলিয়ে পড়ে আছেন বৃদ্ধ ‘ডাক্তারবাবু’। তাঁর গলার কাছ থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পাশেই স্নানঘরে পড়ে ছিল পড়শিদের চেনা ‘কাকিমা’র দেহ। সেখানে তিনটি ছুরিও ছিল। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। তারা দেহটি উদ্ধার করে এবং অবিলম্বে বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, ওই বাড়ি থেকে একটি ‘সুইসাইড নোট’ উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে শুরুর দিকে চারটি লাইন বাংলায় লেখা। বৃদ্ধ সেই চিঠিতে দাবি করেছেন, স্ত্রীকে খুন করে তিনি নিজে আত্মঘাতী হচ্ছেন। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তবে এখনই তারা কোনও সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না। দম্পতির দুই কন্যার মধ্যে এক জন বিদেশে থাকেন। অন্য জনের ঠিকানা রাজারহাট। খবর পেয়ে তিনিও ছুটে এসেছিলেন বাবার বাড়িতে। বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে যান তিনিও। পুলিশ পড়শিদের সঙ্গে কথা বলে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে। প্রাথমিক ভাবে অনুমান, মানসিক অবসাদের কারণে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বৃদ্ধ।