CMRI

‘সুস্থ’ প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে উঠছে প্রশ্ন

চিকিৎসকদের মতে, প্রসব পরবর্তী ছ’ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার পরিভাষায় যা ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নামে পরিচিত। ছ’ঘণ্টা পার হলে সাধারণত প্রসূতির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ধরে নেন চিকিৎসকেরা। অথচ ১৮ ঘণ্টা পরে কী ভাবে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি হয়ে ওই মহিলার মৃত্যু হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিজনেরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৭:২৮
Share:

শোকার্ত: হাসপাতালে পিঙ্কি ভট্টাচার্যের শাশুড়ি রিনা ভট্টাচার্য। বৃহস্পতিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

সকালে সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। সন্ধ্যায় তাঁকে সুস্থই দেখে গিয়েছিলেন বাড়ির লোকেরা। অথচ সন্তান জন্ম দেওয়ার আঠারো ঘণ্টা পরে মৃত্যু হল তাঁর। যদিও এমন ঘটনা কম হলেও অসম্ভব নয়। সিএমআরআই (ক্যালকাটা মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট) হাসপাতালে এক প্রসূতির মৃত্যু ঘিরে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে তাতে এমনই বক্তব্য স্ত্রী-রোগ চিকিৎসকদের।

Advertisement

বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন হাওড়ার বাসিন্দা পিঙ্কি ভট্টাচার্য। বেসরকারি হাসপাতাল সূত্রের খবর, রাত আড়াইটের কিছু পরে পিঙ্কির শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে থাকে। বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা নাগাদ হৃদ্‌রোগে মৃত্যু হয় তাঁর। চিকিৎসকদের মতে, প্রসব পরবর্তী ছ’ঘণ্টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। চিকিৎসার পরিভাষায় যা ‘গোল্ডেন আওয়ার’ নামে পরিচিত। ছ’ঘণ্টা পার হলে সাধারণত প্রসূতির শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল ধরে নেন চিকিৎসকেরা। অথচ ১৮ ঘণ্টা পরে কী ভাবে সঙ্কটজনক পরিস্থিতি হয়ে ওই মহিলার মৃত্যু হল, সেই প্রশ্ন তুলেছেন পরিজনেরা।

স্ত্রীরোগ চিকিৎসক অভিনিবেশ চট্টোপাধ্যায় জানান, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে অকস্মাৎ মায়ের মৃত্যু সচরাচর হয় না। কিন্তু হতে পারে। এ ধরনের মৃত্যুর অন্যতম কারণ পালমোনারি এম্বোলিজম এবং অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড এম্বোলিজম। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা ময়না-তদন্তের পরেই বোঝা যাবে। একই বক্তব্য আর এক বেসরকারি হাসপাতালের স্ত্রীরোগ চিকিৎসক চন্দ্রিমা দাশগুপ্তেরও।

Advertisement

দুই চিকিৎসকের মতে, সন্তান প্রসবের সময় রক্তের ঘনত্ব বৃদ্ধি হওয়ায় তা জমাট বাঁধতে পারে। অস্ত্রোপচারের পরে জমাট বাঁধা সেই রক্ত ধমনী দিয়ে ফুসফুসে আটকালে বিপত্তির আশঙ্কা থাকে। ফুসফুস এবং হৃৎপিণ্ড কাজ না করায় রোগী হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হলে তাকে ‘পালমোনারি এম্বোলিজম’ বলে। অন্য দিকে, মাতৃগর্ভে সন্তানের চারপাশে যে তরল (ফ্লুইড) থাকে তার অংশ রক্তধমনী দিয়ে ফুসফুসে গেলেও একই বিপদ হতে পারে। চিকিৎসকদের কাছে যা ‘অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড এম্বোলিজম’ নামে পরিচিত।

পরিজনেদের প্রশ্ন, চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে ছিলেন পিঙ্কি। তা হলে রোগীকে বাঁচাতে কেন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হল না?

অভিনিবেশের মতে, ‘‘পালমোনারি এম্বোলিজম বা অ্যামনিয়োটিক ফ্লুইড এম্বোলিজম হলে প্রতিরোধ করার কিছু থাকে না। এই ধরনের এম্বোলিজম বেশি মাত্রায় হলে মৃত্যুর হার ৯৯ শতাংশ।’’ চন্দ্রিমা বলেন, ‘‘অনেক সময়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা বোঝা যায় না। হঠাৎই এমন ঘটে রোগীর বিপদ বাড়িয়ে তোলে। তা ছাড়া রোগীর আগে কোনও অসুখ ছিল কি না দেখতে হবে।’’ তিনি জানান, হৃদ্‌রোগ বা মস্তিষ্কের অজানা অসুখ থাকলেও তা প্রসবের সময়ে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, আপাতদৃষ্টিতে পিঙ্কির শারীরিক সমস্যা ছিল না।

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান আরতি বিশ্বাস বলেন, ‘‘প্রসূতির মৃত্যু সংবেদনশীল বিষয়। রোগীর ‘বেড হেড’ টিকিট না দেখে কিছু বলা সম্ভব নয়। গর্ভবতী হওয়ার আগে ও পরে, অস্ত্রোপচারের সময়ে এবং পরপরই রোগীর শারীরিক অবস্থা কেমন ছিল তা গুরুত্বপূর্ণ। হার্টের সমস্যা ছিল কি না, পর্যবেক্ষণ ঠিকঠাক হয়েছে কি না, সবই দেখা উচিত।’’
প্রসূতির এ ধরনের মৃত্যুকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ আখ্যা দিয়ে ‘বেঙ্গল অবস্টেট্রিক অ্যান্ড গাইনোকোলজিক্যাল সোসাইটি’ জানিয়েছে, এ ধরনের মৃত্যুর নজির রয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তার তদন্ত প্রয়োজন। পাশাপাশি চিকিৎসক নিগ্রহের নিন্দাও করা হয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement