RG Kar Financial Irregularities

সন্দীপদের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের ১৫টি অভিযোগ জমা সিবিআইয়ের কাছে, আরজি করে কী কী ‘দুর্নীতি’

আরজি করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি। ১৫টি অভিযোগের কথা বলেছিলেন তিনি। এই ঘটনায় ইডি, সিবিআই তদন্তের দাবিও করেছিলেন।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০২৪ ১০:২৮
Share:

আরজি কর হাসপাতালের আর্থিক অনিয়মের তদন্ত করছে সিবিআই। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আরজি কর হাসপাতালে আর্থিক অনিয়মের মামলার তদন্ত করছে সিবিআই। সেই সূত্রেই রবিবার সকাল থেকে সিবিআইয়ের আধিকারিকেরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। সন্দীপ ঘোষ-সহ হাসপাতালের একাধিক আধিকারিক এবং কর্মচারীর বাড়িতে হানা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। চলছে জিজ্ঞাসাবাদ।

Advertisement

আরজি করে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ প্রকাশ্যে আনেন হাসপাতালের প্রাক্তন অতিরিক্ত সুপার আখতার আলি। তিনি এই ঘটনায় ইডি এবং সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করাতে চেয়ে কলকাতা হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। আখতার প্রথমে কলকাতা পুলিশের কাছে আরজি করের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ করেন। পরে বিকাশ ভবনে রাজ্য ভিজিল্যান্স কমিশনেও অভিযোগ জমা দেন। সুরাহা না হওয়ায় আদালতের দ্বারস্থ হন বলে জানিয়েছেন। অভিযোগপত্রে মোট ১৫টি অনিয়মের উল্লেখ করেছেন তিনি। মূল অভিযুক্ত হিসাবে সন্দীপ ছাড়াও নাম নিয়েছেন ফরেন্সিক মেডিসিন বিভাগের কর্তা দেবাশিস সোম এবং সুপার সঞ্জয় বশিষ্ঠের।

আখতারের করা যে ১৫টি অভিযোগ সিবিআই খতিয়ে দেখছে, সেগুলি হল—

Advertisement
  • সরকারের টাকার অনিয়ম।
  • সরকারের সম্পত্তি স্বাস্থ্য ভবন এবং কলেজ কাউন্সিলের অনুমতি ছাড়াই বিভিন্ন ব্যক্তি বা সংগঠনকে দেওয়া। ফুড স্টল, ক্যাফে, ক্যান্টিনের মতো জায়গা টেন্ডার না ডেকেই বণ্টন করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
  • সরবরাহকারীদের কাজের বরাত দেওয়ার বিষয়ে স্বজনপোষণের অভিযোগ। এ ক্ষেত্রে তিন জন সরবরাহকারীর নাম করেছেন আখতার। বিপ্লব সিংহ ছাড়াও নাম করা হয়েছে সুমন হাজরা এবং আফসর খানের।
  • কোটি কোটি টাকার কাজের বরাত গুটি কয়েক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকেই দেওয়া হয়। তাঁদের বরাত পাওয়ার যোগ্যতা নেই বলেও অভিযোগ।

আরজি করের আর্থিক দুর্নীতি সম্বন্ধে আখতার আলির অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।

  • আর্থিক ব্যবস্থার নিয়মকানুন ইচ্ছাকৃত ভাবে অমান্য করা হয় আরজি কর হাসপাতালে।
  • অ্যাকাউন্ট আধিকারিকদের কথায় গুরুত্ব না দেওয়া এবং বিভিন্ন সময়ে পছন্দের ব্যক্তিদের জন্য নানা সুযোগ-সুবিধা চেয়ে নেওয়া।
  • হাসপাতালের পরিকাঠামো এবং বৈদ্যুতিক বিভিন্ন কাজ রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরকে দিয়ে না করানোর অভিযোগ। ওই কাজের জন্য বরাত দেওয়া হয় বাইরের সংস্থাকে।
  • হাসপাতালের মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষা সংক্রান্ত কাজের জন্য বরাদ্দ টাকা নিয়েও অনিয়মের অভিযোগ।
  • বেআইনি ভাবে হাসপাতালের বিভিন্ন কাজের বরাত দেওয়া এবং টেন্ডার সংক্রান্ত সুবিধার জন্য মাঝপথে বরাত ভেঙে দেওয়া।
  • হাসপাতালের জৈব বর্জ্য বা ‘বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট’ বেআইনি ভাবে বাইরে বিক্রি করা হয় বলে অভিযোগ।
  • কলকাতা পুরসভার চোখ এড়িয়ে বিভিন্ন বেনামি ব্যবসা চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। তার মধ্যে ছেলেদের মেন হস্টেল, মহিলাদের নতুন হস্টেলে ক্যান্টিন চালানো এবং হাসপাতালের মধ্যে ক্যাফে চালানোর কথাও রয়েছে।
  • হাসপাতালের চুক্তিভিত্তিক কর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ।
  • আর্থিক সুবিধা লাভের জন্য বেআইনি ভাবে হাসপাতালের মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ার সার্ভিসের (এমইএস) আধিকারিকদের বদলি। এই কাজের সঙ্গে আরজি করের মেডিক্যাল এডুকেশন প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর তনুশ্রী মণ্ডলও জড়িত বলে অভিযোগ করেছেন আখতার।
  • হাসপাতালের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে ২০ শতাংশ হারে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ। এর সপক্ষে অডিয়ো প্রমাণ জমা দেওয়া হয়েছে।
  • কোভিডের সময়ে সরকারের তরফে হাসপাতালের জন্য যে তহবিল তৈরি করা হয়েছিল, সেই টাকার নয়ছয় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ। ওই টাকা দিয়ে একটি জিম তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন আধিকারিকের দফতরে বিলাসবহুল আসবাবপত্রও ওই টাকায় কেনা হয়েছে বলে অভিযোগ।

অভিযোগপত্রে আখতার জানিয়েছেন, কয়েক মাস আগে তিনি এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ভবনের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য নিয়োগ পর্ষদের চেয়ারম্যান সুদীপ্ত রায় তাঁকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করার হুমকি দেন। শুভব্রত দাস নামে এক জনের বিরুদ্ধেও হুমকি দেওয়ার অভিযোগ করেছেন আখতার। সুদীপ্তের বিরুদ্ধে আরও কিছু অভিযোগ করেছেন তিনি। জানিয়েছেন, আরজি কর থেকে জিনিসপত্র মাঝেমধ্যেই সুদীপ্ত সিঁথি এলাকায় নিজের নার্সিংহোমে নিয়ে যেতেন। হাসপাতালের সরবরাহকারীদের দিয়ে তিনি নিজের বাগানবাড়ির পরিচর্যাও করাতেন বলে অভিযোগ। এই অভিযোগ করার জন্য প্রাণনাশের হুমকিও তাঁকে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন আখতার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement