এ ভাবেই বিভিন্ন জায়গায় ওষুধ, খাবার ও বেবি ফুড পৌঁছে দিচ্ছে 'আপনজন সমন্বয়'। নিজস্ব চিত্র।
হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপটির নাম ‘আপনজন সমন্বয়’। গ্রুপের যাঁরা সদস্য, তাঁদের কেউ কেউ সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় উচ্চপদে কর্মরত, কেউ এখনও পড়ুয়া, কেউ আবার তথ্যপ্রযুক্তকর্মী। অনেকে আবার বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গেও যুক্ত। ওঁরা সকলেই নিজের মতো করে শহরবাসীর পাশে দাঁড়াতে চাইছেন। সে কারণে ফেসবুক-হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন গ্রুপের মাধ্যমে নিজেদের ফোন নম্বর ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তাঁদের চেষ্টা অনেকাংশেই সফল বলে জানাচ্ছেন ওই গ্রুপের সদস্যেরা।
রবিবারই যেমন একটা হোয়াটস্অ্যাপ মেসেজ এসেছে— ‘‘আমার মাকে একটু সাহায্য করবেন? আমি লন্ডনে আছি। কলকাতায় ফিরতে পারিনি। মা রাজারহাটের ফ্ল্যাটে একাই রয়েছে। খাবার আর ওষুধের ব্যবস্থা করে দেবেন প্লিজ?’’ শুধু হোয়াটস্অ্যাপেই নয়, ফোনেও অনুরোধ আসছে। সোমবার দুপুরেই একটা ফোন এসেছিল ওই গ্রুপের এক সদস্যের কাছে। প্রশ্ন করা হয়, ‘‘আপনারা কি হোম ডেলিভারি করেন? খাবার প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। আমাদের বয়স হয়েছে, রাস্তায় বেরোতে ভয় পাচ্ছি।’’
হোয়াটস্অ্যাপ হোক বা ফোন, খবর পেলেই সেখানে সাহায্য নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ‘আপনজন সমন্বয়’। বাজার করা থেকে ওষুধ কিনে দেওয়া, টাকার সঙ্কট থাকলে খাবারও কিনে দিয়ে আসছেন ওঁরা। শুধু তাই নয়, লকডাউনের মধ্যে এই গ্রুপের সদস্যেরা পালা করে রক্ত দান করতেও চলে যাচ্ছেন ব্লাড ব্যাঙ্কে।
আরও পড়ুন: করোনা চিকিৎসায় প্রস্তুত মেডিক্যাল, তৈরি ৩০০টি আইসোলেশন বেড
আরও পড়ুন: নিয়ম ভাঙার মধ্যেও ব্যতিক্রমী শহরের দুই বাজার
ওই গ্রুপের সদস্য দেবাশিস রায় বলছিলেন, ‘‘গত শনিবার সকালে লন্ডন থেকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ আসে আমার কাছে। এক ভদ্রলোকের মা সেখানে একা থাকেন। খাবার এবং ওষুধ পৌঁছনোর অনুরোধ করেন তিনি। জানার পর আমি রাজারহাট এলাকায় আমাদের এক সদস্যকে বিষয়টি জানাই। সময় নষ্ট না করেই ওই বৃদ্ধার কাছে পৌঁছন আমাদের সদস্য নির্মল ঘোষ।’’ দেবাশিসবাবু জানান, গিয়ে দেখা যায়, সত্যিই ওই বৃদ্ধা একা। আগে পরিচারিকা বৃদ্ধার দেখভাল করতেন, লকডাউনের কারণে এখন আর আসছেন না। গত কয়েক দিন ধরে তিনি অসহায় বোধ করছিলেন। আপতত ওই বৃদ্ধাকে ওষুধ, কলা, দুধের প্যাকেট, চিনি-সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দিয়ে এসেছেন নির্মলবাবু। প্রয়োজন পড়লে ফোন করতেও বলেছেন।
ঠিক একই ভাবে গত সপ্তাহে এমনই একটি ফোন এসেছিল কসবা রাজডাঙা এলাকা থেকে। ফোন করে এক বৃদ্ধা জানতে চান, হোম ডেলিভারি করা হয় কি না। আপনজন সমন্বয়ের এক সদস্য বলেন, ‘‘ওই পরিবারটি আর্থিক ভাব সচ্ছল। কিন্তু করোনা আতঙ্কের জেরে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। মেয়ে কেনিয়া থেকে ফিরেছেন। রয়েছে তাঁর এক নাতনিও। জামাই বিদেশ থেকে ফিরে হৃদয়পুরে গৃহ পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। সেই সময়সীমা পেরিয়ে গেলেও, রাজ্যে লকডাউনের পরিস্থিতিতে কসবায় আসতে পারছেন না। তাই সাহায্যের আকুতি।’’ ওই গ্রুপের সদস্য রাহল সরকার নামে এক যুবক তাঁদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন খাবার সামগ্রী।
সাহায্য যিনি চেয়েছিলেন, সেই মমতা ভৌমিক বলেন, “আমরা খুবই উপকৃত হয়েছি। ওঁদের অতিরিক্ত টাকাও দিতে চেয়ে ছিলাম। কিন্তু নেননি। এতো ভাবাই যায় না।”
(এই খবরে প্রকাশিত তথ্যগুলি আমাদের দফতরে পাঠিয়েছিলেন দেবাশিস রায়। সেই তথ্যের ভিত্তিতেই এই খবর।)
‘আপনজন সমন্বয়’-এর কয়েক জন সদস্যের ফোন নম্বর— রাহুল সরকার ৯৮৩১৯৭২৪১২, দেবাশিস রায় ৯৮৭৪৯৮৮৬৬৪, তন্দ্রিল দত্ত ৮০১৭৭৯৫১১০, সুমিত মণ্ডল ৯৮৩০৩৮২২১৬
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)