ছবি পিটিআই।
তাঁদের নিজেদের সংসারেই অর্থের টানাটানি। তা সত্ত্বেও লকডাউনের শহরে অভুক্তদের পাশে দাঁড়াতে দু’বার ভাবেননি ওঁরা। ১০ কিলোমিটার দূরত্ব পেরিয়ে দু’বেলা তাঁদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন রান্না করা খাবার এবং খাদ্যসামগ্রী।
ওঁরা হলেন বেহালা পর্ণশ্রীর বাসিন্দা রানা নাথ এবং দীপঙ্কর সোম। রানা পেশায় অটোচালক। দীপঙ্কর কাজ করেন একটি বেসরকারি সংস্থায়। আপাতত দু’জনেরই উপার্জনের পথ বন্ধ। এই পরিস্থিতিতেও তাঁরা লকডাউনে বিপাকে পড়া অসহায় মানুষদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন রান্না করা খাবার। এই কাজে রানা এবং দীপঙ্কর পাশে পেয়েছেন ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘকে। গড়িয়াহাটে সঙ্ঘের দফতর থেকে খাবার নিয়ে রানার অটোয় করে দু’জনে পৌঁছে যাচ্ছেন পর্ণশ্রীরই গোয়ালপাড়া এলাকায়। সেখানে দূরত্ব-বিধি মেনে প্রায় ৫০ জনের হাতে প্রতিদিন ওই খাবার তুলে দিচ্ছেন স্থানীয় ক্লাবের সদস্যেরা। গত দশ দিন ধরে চলছে তাঁদের এই কর্মযজ্ঞ।
রানা এবং দীপঙ্কর দাবি করলেন, যে হেতু প্রায় ১০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে এই খাবার আনা হচ্ছে, তাই তাঁদের সংক্রমণ হলে তা যাতে এলাকায় ছড়িয়ে না-পড়ে, সে জন্য ওই ক্লাবের সদস্যদের মাধ্যমে তা অভুক্ত মানুষগুলির হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
নিজেদের আয় বন্ধ প্রায় এক মাস। তার পরেও এমন ভাবনা কেন? দীপঙ্কর বললেন, ‘‘চোখের সামনে দেখছি, লকডাউনের মধ্যে এলাকার অনেকেরই খাবার জোটানো দুঃসহ হয়ে উঠছে। তখনই ঠিক করি, ওঁদের মুখে কিছু তুলে দিতে হবে। কিন্তু নিজেদের সামর্থ্য তো সীমিত। তাই ঠিক করি, কারও সাহায্য নিয়ে ওই পরিবারগুলির পাশে দাঁড়াব।’’ রানা জানালেন, কেউই যখন প্রায় পাশে নেই তখন দীপঙ্কর তাঁকে জানান, গড়িয়াহাটের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে তাঁর একটু-আধটু যোগাযোগ আছে। সেখানে গিয়ে দু’জন দেখা করেন সন্ন্যাসীদের সঙ্গে। রানা ও দীপঙ্করকে তাঁরা জানান, প্রতিদিন তাঁরা ৫০ জনের মতো খাবার দিতে পারবেন। কিন্তু সেই খাবার পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে অন্য কাউকে। দীপঙ্কর জানান, এর পরেই গত ১১ এপ্রিল থেকে তিনি এবং রানা অটোয় করে ওই খাবার সরবরাহ করা শুরু করেন।
গড়িয়াহাট থেকে পর্ণশ্রী। লকডাউনের মধ্যে অটো নিয়ে যেতে দেখে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের মুখেও পড়তে হয়েছে দু’জনকে। তবে তাঁরা দাবি করছেন, গাড়িতে লোকজনকে দেওয়ার খাবার রয়েছে শুনে পুলিশ ছেড়ে দিয়েছে। শুধু এক বেলা রান্না করা খাবার পৌঁছেই থেমে নেই রানা ও দীপঙ্কর। রানা বলেন, ‘‘বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে সাহায্য চেয়েছি। কেউ দিয়েছেন চাল, ডাল। কেউ আবার তেল, আলু। সেগুলি আমরা তুলে দিয়েছি ওই সব পরিবারের হাতে। এক বেলা তাঁরা নিজেরাই রান্না করে নিচ্ছেন।’’
সোমবার খাবার পৌঁছে দেওয়ার পরে রানা ও দীপঙ্কর ফোনে জানালেন, অর্থকষ্টের মধ্যেও তাঁরা এই বিপদে মানুষের পাশে থাকতে চান। তবে কত দিন পারবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তাঁরা।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)