West Bengal Lockdown. India Lockdown

পরিবার খাবে কী, দুশ্চিন্তায় কাশ্মীরি শালওয়ালারা

তালতলার ইমদাদ আলি লেনে থাকেন নুর। ভিডিয়ো কলে কথা বলতে বলতে তাঁর চোখে জল।

Advertisement

ঋজু বসু

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০৬:৪৯
Share:

ফাইল চিত্র।

তালাবন্দি থাকা বা কার্ফু কাকে বলে, এ জীবনে কম দেখেননি তাঁরা। তবু প্রিয়জনেদের থেকে দূরে, অনিশ্চয়তা ভরা এই অচলাবস্থায় দিশাহারা বোধ করছেন নুর মহম্মদ ডার বা সাবির আহমেদ পণ্ডিতেরা। করোনার সংক্রমণ এড়াতে লকডাউনের সময়ে আটকে পড়া ভিন্ রাজ্যের শ্রমিকদের দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনকেই নিতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। তাঁদের খাবার ও থাকার জায়গা দেওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসার ব্যবস্থাও নিশ্চিত করতে হবে। তবু কলকাতা বা অন্যত্র আটকে থাকা কাশ্মীরি শালওয়ালারা বুঝতে পারছেন না কী রয়েছে তাঁদের ভাগ্যে। শীতের মরসুম শেষে কলকাতায় থাকার রসদ ফুরোতে বসেছে। আবার পরিবারের কাছে ফিরতেও আঁকুপাঁকু করছেন তাঁরা। তালতলা, মেটিয়াবুরুজ, বেহালা ছাড়াও লক্ষ্মীকান্তপুর ও দুর্গাপুরে ৫০-৬০ জন কাশ্মীরি শালওয়ালা এখন কার্যত বন্দি।

Advertisement

তালতলার ইমদাদ আলি লেনে থাকেন নুর। ভিডিয়ো কলে কথা বলতে বলতে তাঁর চোখে জল। ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া ছোট ছেলের ছবি দেখাচ্ছেন আর বলছেন, ‘‘কোনও ভাবেই কি ফেরা সম্ভব নয় এখন?’’

করোনাভাইরাস কত দূর ছোঁয়াচে, দেশে ফেরার পথে নিজের সংক্রমণ বা পরিজনেদের সংক্রমিত করার আশঙ্কা কতটা, তা বুঝলেও তিনি এখানে থাকলে পরিবার কী ভাবে বাঁচবে, তা মাথায় ঢুকছে না নুরের। বলছেন, ‘‘নিজে কী খাব, কী-ই বা পাঠাব, খোদাই জানেন!’’ ২৪ মার্চ উড়ানের ও ২৭ মার্চ ট্রেনে ফেরার টিকিট বাতিল করেছেন নুর। সাবির আহমেদ পণ্ডিতেরও তিন সন্তান, স্ত্রী ও বৃদ্ধা মা রয়েছেন বাড়িতে। সোমবার বেলেঘাটার বিভিন্ন খদ্দেরের বাড়ি থেকে ৮০ হাজার টাকা তোলার কথা ছিল। মঙ্গলবার ফেরার তারিখ। এখন সব শিকেয়। শাল, কম্বল, সোয়েটারের কারবারি কাশ্মীরিদের ব্যবসা চলে বিশ্বাসের ভিত্তিতে। শেষ মুহূর্তে টাকা আদায় করে ফেরেন তাঁরা। অনেকেরই ১০-২০ হাজার থেকে লাখখানেক টাকা প্রাপ্য। বদগামের রুসুগ্রামের নুর বলছেন, ‘‘সেনার গুলির ভয় না-থাকলেও এটাও তো প্রায় কার্ফু। বঙ্গালেও ঘরবন্দি হয়ে কার্ফু দেখব ভাবিনি।’’ শালওয়ালাদের প্রশ্ন, এই বিপদে কে পাশে দাঁড়াবে তাঁদের? করোনা না-হোক, খিদেয় পরিবারটা শেষ হওয়ার আশঙ্কায় ঘুম আসছে না শহরে বন্দি ভূস্বর্গের অতিথিদের।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement