West Bengal Lockdown

ইফতারের খুশিতে অশ্বিনীদের পাশে দাঁড়ালেন রবিউলেরা

রবিউল, জিয়াউরেরা আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, জাতপাতের বিচার না করে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হবে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা কিছু হিন্দু পরিবারের হাতে।

Advertisement

মেহবুব কাদের চৌধুরী

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৬
Share:

প্রতীকী ছবি

প্রতি বছর রমজান মাসের প্রথম দিন মণ্ডপ বেঁধে গ্রামের মুসলিমদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন হত। এমনটা দেখেই অভ্যস্ত বারাসত থেকে দশ কিলোমিটার দূরের হাসিয়া গ্রামের রবিউল ইসলাম, জুলফিকার মোল্লা, মনিরুল ইসলাম, জিয়াউর রহমানরা। শবে বরাতের দিন ওঁরা ভেবেছিলেন, এ বার যদি অন্য ভাবে পালন করা যায় দিনটা! তার পরেই পাশের পাড়ার হিন্দুদের বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন উত্তর ২৪ পরগনার ওই গ্রামের জনা কুড়ি যুবক।

Advertisement

শনিবার ওই গ্রাম ও আশপাশের প্রায় চারশো দুঃস্থ হিন্দু পরিবারের হাতে চাল-ডাল-আলুর পাশাপাশি ইফতারের বিশেষ খাদ্যসামগ্রী তুলে দিলেন। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দূরত্ব-বিধি বজায় রাখা আবশ্যিক। অতএব ইফতার পার্টি আয়োজনের প্রশ্ন নেই। এমন পরিস্থিতিতে রবিউল, জিয়াউরেরা আগেই পরিকল্পনা করে রেখেছিলেন, জাতপাতের বিচার না করে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হবে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা কিছু হিন্দু পরিবারের হাতে। সেই মতো এ দিন সকালে দূরত্ব-বিধি মেনে ৪০০টি পরিবারকে একটি করে ব্যাগ উপহার দেওয়া হয়। তাতে যেমন ছিল চাল, ডাল, আলু, তেল, তেমনই ইফতারের মূল উপকরণ খেজুর, ছোলা এবং ফল। প্রত্যেককে মাস্ক এবং স্যানিটাইজ়ারও দেওয়া হয়।

রবিউলের কথায়, ‘‘লকডাউনের জন্য সব ধর্মের মানুষই আর্থিক কষ্টে আছেন। মুসলমান ভাইদের পাশে তো থাকছিই। পাশাপাশি, আর্থিক কষ্টে থাকা হিন্দুদেরও ইফতারের জিনিস দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’ এমন উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত অনেকেই। তাঁদেরই এক জন হাসিয়া সংলগ্ন সুন্দরীবাঁক গ্রামের বাসিন্দা লখিন্দর নায়েক। পেশায় দিনমজুর। লখিন্দরের কথায়, ‘‘মুসলিম পাড়ার ছেলেরা আমাদের যে এই ভাবে সম্মান দেবে, কখনও ভাবিনি।’’ আপ্লুত অশ্বিনী রপ্তানের কথায়, ‘‘এত দিন রবিউল, জুলফিকার, জিয়াউর ভাইদের বাইরে থেকে বিচার করেছি। বুঝলাম, মানুষকে বিচার করা উচিত তাঁর কাজ দিয়ে।’’

Advertisement

দিনের শেষে জিয়াউর বলছেন, ‘‘এলাকায় চাঁদা তুলে তহবিল তৈরি করেছি। এই কাজে আমাদের পাশে বড় ভরসা স্থানীয় বাসিন্দা জেলা বন এবং ভূমি কর্মাধ্যক্ষ এ কে এম ফারহাদ।’’ আর ফারহাদের কথায়, ‘‘ভরসা কিছুই নয়। ওঁদের প্রস্তাব শুনে ভাল লেগেছিল। রমজান সহমর্মিতা ও সহিষ্ণুতার মাস। তার উপরে এমন কঠিন সময়। ওঁরা একজোট হয়ে যা করলেন, তাতে উৎসাহ দিতে সামান্য সাহায্য করেছি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement