সাহায্য: প্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করছেন আটকে পড়া শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যেরা। মঙ্গলবার, ভাঙড়ে। —নিজস্ব চিত্র
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মার্চের ২৩ থেকে দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। অন্য সব কারখানার মতো বন্ধ ইটভাটাগুলিও। অথচ ওই সব ইটভাটায় রয়ে গিয়েছেন ভিন্ রাজ্যের একাধিক পরিযায়ী শ্রমিক ও তাঁদের পরিবার। ভাটা চালু থাকলে মাটি মাখা থেকে শুরু করে পাকা ইট তৈরি পর্যন্ত কাজ করার পরে সপ্তাহ শেষে শ্রমিকেরা রেশনের টাকাটুকু পান। ওই ব্যবস্থাকে ‘ফুরোন’ বলে। কিন্তু এখন চুল্লি বন্ধ। কাজ বন্ধ। ফলে
বর্তমানে রেশনের টাকাও আর পাচ্ছেন না কেউ।
এই অবস্থায় রাজারহাট-ভাঙড় এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা যেমন নিজে থেকে এগিয়ে এসেছে তেমনই আবার কোনও কোনও থানা নিজের এলাকার ইটভাটার শ্রমিকদের জন্য একটি আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে সাহায্য চেয়েছে।
রাজারহাট-ভাঙড় (২) নম্বর এলাকায় কাজ করা ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার তরফে সুপ্রিয়া রায়চৌধুরী জানিয়েছেন, তিনি খোঁজ নিয়ে দেখেছেন মোট পাঁচটি ইটভাটায় দুশোর মতো মানুষ আটকে রয়েছেন। যাঁরা কাজ বন্ধের জন্য রেশনের টাকা পাচ্ছেন না। এমনকি অনেকে পরিবার নিয়েই লকডাউনের সময়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার কথা ভাবছিলেন। সুপ্রিয়ার কথায়, ‘‘আমরা সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের আটকাই। কারণ স্ত্রী-সন্তান নিয়ে এখান থেকে হেঁটে ঝাড়খণ্ড, বিহারে ফিরতে গিয়ে তাঁরা রাস্তায় না খেতে পেয়ে মারা যেতেন।’’ তিনি আরও জানান, এর পরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের সাহায্যের জন্য আবেদন করা হয়। প্রথম ধাপে যে ভাবে সাড়া মিলেছে তা থেকে ১৮০টি পরিবারকে গত দু’সপ্তাহ চাল, ডাল, আলু, তেল এবং হাত ধোয়ার সাবান দেওয়া হয়েছে।
একটি পরিবার মানে চার-পাঁচ জন করে সদস্য। ফলে এই খাদ্যসামগ্রী ফুরিয়ে গেলে তার পরে তাঁদের কী ভাবে চলবে, সে কথা মাথায় রেখে ওই সংগঠনটি একটি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কাছে আবেদন করে। লন্ডনের একটি সংস্থার সঙ্গেও তারা চিঠি দিয়ে যোগাযোগ করে। দু’তরফ থেকেই সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে চিঠিও চলে এসেছে। তাতে আগামী জুন মাস পর্যন্ত পরিবারগুলিকে অন্তত খাবারের সমস্যায় পড়তে হবে না বলেই জানাচ্ছেন সুপ্রিয়া। তবে তাঁরা মাত্র পাঁচটি ইটভাটার শ্রমিকদেরই সাহায্য করতে পারছেন। তার বাইরে রাজারহাট, ভাঙড় (১) এবং (২) নম্বর ব্লক এবং বারাসতে প্রায় শ’খানেকের উপরে ইটভাটা রয়েছে।
রাজারহাট-ভাঙড়ের ওই পাঁচটি ইটভাটা ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগরেও রয়েছে প্রায় ১১টির মতো ইটভাটা। সেখানেও ভিন্ রাজ্য থেকে আসা একাধিক শ্রমিক পরিবার আটকে রয়েছে লকডাউনের জন্য। জয়নগর ১ নম্বর ব্লক ও জয়নগর থানার তরফে ৩০০ জনকে মঙ্গলবার সকালেই এক সপ্তাহের জন্য চাল, ডাল, আলু, তেল-সহ
আনুষঙ্গিক সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও ওই এলাকার জন্য এ দিন এক হাজার কিলোগ্রাম চাল, ৪০০ কিলোগ্রাম আটা, ২০০ কিলোগ্রাম ডাল ও ২০০ লিটার তেল পাঠিয়েছে। আবার বারুইপুর ডিভিশন থেকেও তাদের এলাকার ১৪টি ইটভাটাতেই সাপ্তাহিক রেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বারুইপুরের পুলিশ সুপার রশিদ মুনির খান জানান, চাল, ডাল, তেল এবং আলুর ব্যবস্থা করা হয়েছে পরিবারগুলির জন্য।