প্রতীকী চিত্র।
লকডাউনে অন্য রাজ্যে আটকে পড়া পশ্চিমবঙ্গের বাসিন্দাদের সাহায্য করতে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির কাছে আগেই আবেদন করেছে এ রাজ্যের সরকার। কিন্তু সেই অনুরোধে ওই সব রাজ্য কতটা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে বেঙ্গালুরুতে এ রাজ্যের অন্তত একশো মানুষ আটকে পড়েছেন বলেই খবর। তাঁদের অভিযোগ, কারও চিকিৎসা সম্পূর্ণ হয়নি, কারও শুরুই হতে পারেনি। জিনিসপত্রের দাম নিয়ে কালোবাজারি চলছে বেঙ্গালুরুতে। মোটা টাকা খরচ করেও অত্যন্ত নিম্ন মানের থাকার জায়গা পেয়েছেন তাঁরা। এমন পরিস্থিতিতে তাঁদের আবেদন, দ্রুত এই রাজ্যের সরকার তাঁদের ফেরার ব্যবস্থা করুক।
হাওড়ার পাঁচলার বাসিন্দা হাফিজুর রহমান মিদ্যার ছেলে দীর্ঘদিন হৃদ্যন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। বছর তেরোর ছেলের অস্ত্রোপচারের জন্য গত ১৪ তারিখ থেকে বেঙ্গালুরুতে সপরিবার রয়েছেন তিনি। সেখান থেকে মোবাইলে হাফিজুর বলেন, ‘‘এখানে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ছেলের অস্ত্রোপচারের জন্য এসেছিলাম। ছেলের বেশ কিছু শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছিল। তার পরেই বেঙ্গালুরুতে লকডাউন ঘোষণা হল। হাসপাতাল রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিল। হাসপাতালের কাছাকাছি একটি অতিথিশালায় প্রচুর টাকা ঘরভাড়া দিয়ে থাকছি। হাতের টাকা শেষ হয়ে আসছে। ভীষণ আতঙ্কে রয়েছি।``
একই অবস্থা শিলিগুড়ির গোষ্ঠবিহারী দাস, বীরভূমের মুরারইয়ের ফিলিপ দাস বা হুগলির হরিপালের বিশ্বনাথ দাসেদের। গোষ্ঠবিহারীবাবু স্ত্রী রঞ্জনাদেবীর কিডনির চিকিৎসায় বেঙ্গালুরুতে গিয়েছিলেন গত ২০ মার্চ। তাঁর কথায়, ‘‘১১ তারিখে শিলিগুড়ি থেকে বেরিয়ে রামেশ্বরম ঘুরে বেঙ্গালুরু পৌঁছই। আচমকা লকডাউনের জন্য হাসপাতালের বহির্বিভাগের পরিষেবা বন্ধ হয়ে যায়। স্ত্রীর চিকিৎসা শুরুই হয়নি। অতিথিশালার ঘুপচি ঘরের মধ্যে সারাক্ষণ বন্দি হয়ে আছি।’’
বীরভূমের মুরারইয়ের বাসিন্দা ফিলিপ দাস বাবার হৃদ্যন্ত্রের চিকিৎসার জন্য সপ্তাহ দুয়েক আগে বেঙ্গালুরু গিয়েছিলেন। তাঁর কথায়, ‘‘বাবার হৃৎপিণ্ডে অস্ত্রোপচার হয়েছে। ভর্তি রয়েছেন। আগামী ৩০ তারিখে হাসপাতাল থেকে বাবার ছাড়া পাওয়ার কথা। সেই মতো ট্রেনের টিকিটও কাটা ছিল। বাবাকে হাসপাতাল থেকে বার করে অতিথিশালার ঘুপচি ঘরে রাখতে হবে। একটা ঘরে সকলে থাকায় সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে। আবার টাকাও শেষ হয়ে আসছে।’’
নদিয়ার হরিণঘাটার বাসিন্দা সমীর মজুমদার প্রস্রাবের সমস্যা নিয়ে বেঙ্গালুরু পৌঁছন সপ্তাহ দুয়েক আগে। তাঁর কথায়, ‘‘হাসপাতালে কিছু পরীক্ষানিরীক্ষা হয়েছিল। তার পরেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়।’’ হুগলির হরিপালের বিশ্বনাথ দাস অসুস্থ মেয়ে ও শ্বশুরমশাইকে নিয়ে বেঙ্গালুরুতে গৃহবন্দি। বিশ্বনাথবাবুর কথায়, ‘‘কোনও চিকিৎসাই শুরু হয়নি ওদের। বাড়িও ফিরতে পারছি না। জিনিসপত্রের আগুন দাম। কালোবাজারি চলছে।’’
ভেলোরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে আটকে পড়া বিধাননগর পুর এলাকার তিন নম্বর ওয়ার্ডের দুই বাসিন্দার জন্য তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ২০ হাজার টাকা পাঠানো হয়েছে বলে জানান বিধাননগরের ডেপুটি মেয়র তাপস চট্টোপাধ্যায়।
ভিন্ রাজ্যে আটকে পড়েছেন, হাতে টাকা নেই, এ রাজ্যের এমন মানুষদের সাহায্য করার জন্য সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে অনুরোধ করার দায়িত্ব রাজ্যের মুখ্যসচিবকে দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ রাজ্যের ওই সব বাসিন্দা যাতে থাকা-খাওয়ার ন্যূনতম সুবিধাটুকু পান, রাজ্যগুলিকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করার অনুরোধ করছে পশ্চিমবঙ্গ। বৃহস্পতিবার ১৮টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়ে বিপদে থাকা এ রাজ্যের শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ করেছেন মমতা। ইতিমধ্যে
সেই অনুরোধে সাড়া দিয়ে মহারাষ্ট্র সরকার পদক্ষেপ করেছে। এ জন্য শুক্রবার মহারাষ্ট্র সরকারকে ধন্যবাদও দেন মমতা। অন্য রাজ্যে আটকে থেকে কারও অসুবিধার কথা জানতে পারলে পদক্ষেপের আশ্বাস দিয়েছে রাজ্য সরকার।