দরকারি: শহরে লকডাউন বলবৎ করতে প্রয়োজন হচ্ছে বহু গার্ডরেলের। মহাজাতি সদনের পাশের রাস্তা ঘেরা হয়েছে এ ভাবেই। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এমনিতে সেগুলির দরকার পড়ে সভা-সমাবেশ হলে বা কোনও বড় দুর্ঘটনার পরে রাস্তা আটকাতে। কোথাও তদন্ত করতে গিয়ে জায়গাটি ঘিরে রাখতেও মাঝেমধ্যে সেগুলি চেয়ে নেন তদন্তকারীরা। আর লাগে পুজোর ভিড় সামলাতে। কিন্তু, লকডাউনের জেরে শহর ঘিরতে হঠাৎ করেই গার্ডরেলের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সূত্রের খবর, লকডাউনের গত ৩৭ দিনে কলকাতা ঘিরে রাখতে ব্যবহার করা হচ্ছে প্রায় ১৪ হাজার গার্ডরেল। যার দাম প্রায় সাত কোটি টাকা!
লালবাজারের ট্র্যাফিক বিভাগের এক কর্তা জানান, কলকাতা পুলিশের ‘প্ল্যানিং অ্যান্ড সার্ভে’ এবং ‘রোড মার্কিং সেকশন’ গার্ডরেল সংক্রান্ত বিষয় দেখাশোনা করে। মূলত রোড মার্কিং সেকশনই গার্ডরেলের হিসেব রাখা এবং কলকাতা পুলিশ এলাকায় সেগুলি বণ্টনের দায়িত্বে আছে। নির্দিষ্ট সময় অন্তর গার্ডরেল তৈরির জন্য দরপত্র ডাকা হয়। সেখানেই স্থির হয় তার দাম। গার্ডরেল মূলত তৈরি হয় বজবজ, টিটাগড়-সহ আরও কয়েকটি জায়গায়। ওই পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘লোহার তৈরি এক-একটি গার্ডরেলের দাম পড়ে ৩৮০০ টাকা থেকে শুরু করে প্রায় পাঁচ-সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। আমাদের কাছে থাকা ১৪ হাজার গার্ডরেলই কাজে লেগে গিয়েছে। সেগুলির দাম গড়ে পাঁচ হাজার টাকা করে হলে অঙ্কটা দাঁড়ায় সাত কোটি টাকায়। টাকাটা বড় কথা নয়। লকডাউনের মধ্যে দরপত্র ডেকে নতুন বরাত দেওয়া হবে কী করে?’’
পুলিশের আর এক কর্তা জানান, কিছু গার্ডরেল রাখা হয় লালবাজারে। আর বেশির ভাগটাই থাকে বিদ্যাসাগর সেতুর নীচে পুলিশের গুদামে। সেখান থেকেই যে ট্র্যাফিক গার্ড বা থানা এলাকায় যখন যেমন দরকার পড়ে, সেই অনুযায়ী নিয়ে যাওয়া হয়। এমনি সময়ে শহরে খুব বেশি হলে ১০ হাজার গার্ডরেল লাগে। রবিবার ব্রিগেডে সমাবেশ হলে ছ’-সাত হাজার গার্ডরেলেই হয়ে যায়। তবে টানা লকডাউন সামলাতে আর কন্টেনমেন্ট জ়োন হিসেবে পাড়া ঘিরতে বাড়তি চার হাজার গার্ডরেল লেগে গিয়েছে।
আরও পড়ুন: এনআরএস হাসপাতালে একসঙ্গে ৮ রোগী করোনায় সংক্রমিত
আরও পড়ুন: বেড়েই চলেছে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা, দেশে মৃত্যু বেড়ে ১২২৩
সমস্যা সমাধানে তাই গার্ডরেলের পাশাপাশি এলাকার বাসিন্দাদের বুঝিয়ে আর স্থানীয় ডেকরেটরদের সাহায্যে বাঁশ-দড়ি দিয়েই পাড়া ঘিরছে পুলিশ। রাজ্য সরকারের প্রকাশ করা ২৬৪টি কন্টেনমেন্ট জ়োনের মধ্যে পাঁচটি রয়েছে উত্তর কলকাতার একটি থানা এলাকায়। সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক বললেন, ‘‘শুধু আমারই এখনও পর্যন্ত দেড় হাজার গার্ডরেল লেগেছে। তাতেও হচ্ছে না। আর কত চাইব, কোথা থেকেই বা আসবে! বাধ্য হয়ে তাই এলাকার ডেকরেটরদের বাঁশ আর দড়ি দিতে বলেছি।’’ পূর্ব কলকাতার সিআইটি রোড এবং দক্ষিণ কলকাতার বেশ কিছু পাড়া ঘিরতে আবার ভাগাভাগির গার্ডরেল ব্যবস্থা চালানো হচ্ছে। পুলিশ সূত্রের খবর, জরুরি প্রয়োজনে গার্ডরেল
মজুত রাখা হচ্ছে গিরিশ পার্ক মোড়ে। সেখান থেকে প্রয়োজনে সারা দিনের জন্য গার্ডরেল নিলে রাতে সেগুলি যথাস্থানে রেখে আসতে হবে পুলিশকেই। সকালে ফের নেওয়া যাবে প্রয়োজন হলে। কিন্তু কোনও মতেই গার্ডরেল আটকে রাখা চলবে না! এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘রাতে গার্ডেনরিচ, মেটিয়াবুরুজের মতো যে এলাকায় লোক দেরিতে ঘুমোন, সেখানে নিয়ে গিয়ে লাগানো হয় গার্ডরেলগুলি। সকালে সংশ্লিষ্ট থানা ফেরত দিয়ে গেলে তখন আমরা নিতে পারি।’’ পুলিশের একাংশ জানাচ্ছেন, গার্ডরেল চুরিও যায়। তবে এই পরিস্থিতিতে চুরি গেলে আর রক্ষে নেই। বাধ্য হয়ে তাই যক্ষের ধনের মতো গার্ডরেলের হিসেব রাখতে হচ্ছে পুলিশকে!