টহল: মেটিয়াবুরুজের অলিগলিতে মঙ্গলবার চলছে নজরদারি। এ ভাবেই তা চলবে শহরের অন্যত্র। নিজস্ব চিত্র
লকডাউনের মেয়াদ আগেই বাড়িয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার সেই মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার মধ্যেই শহরে লকডাউন সফল করতে রাস্তায় নামলেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষ কর্তারা। বড় রাস্তাই শুধু নয়, অলিগলিতে বিরাট বাহিনী নিয়ে জনসাধারণকে সচেতন করার চেষ্টা শুরু করেছে লালবাজার। শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে পুলিশ মঙ্গলবার মাঠে নামিয়েছিল মুম্বইবাসী সঞ্চালক শাকিল আনসারিকেও। তিনিও এ দিন গার্ডেনরিচ-মেটিয়াবুরুজ এলাকার বিভিন্ন গলিতে ঘুরে জনসাধারণকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করেন। ওই সঞ্চালক নিজে গার্ডেনরিচের আদি বাসিন্দা।
লালবাজার জানিয়েছে, এ দিন অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (৩) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহের নেতৃত্বে একটি বাহিনী স্থানীয় পুলিশকে নিয়ে সকাল থেকে গার্ডেনরিচের বিভিন্ন গলিতে লকডাউন বিধি কার্যকর হচ্ছে কি না, তা দেখে। বাসিন্দাদের সচেতন করা হয় করোনাভাইরাস নিয়ে। পরে বন্দর এলাকার ডিসি সৈয়দ ওয়াকার রেজার নেতৃত্বে একাধিক থানার আধিকারিকেরা বিরাট বাহিনী নিয়ে মেটিয়াবুরুজ-রাজাবাগানের আক্রা রোড, গার্ডেনরিচ রোড, মিঠা তালাও-সহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মানুষকে সচেতন করেন। কোনও কোনও জায়গায় গাড়ির কনভয় নিয়েও প্রচার চালানো হয়েছে বলে সূত্রের খবর। রাস্তায় নজরদারির সঙ্গে আকাশপথে ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হয়েছে ওই এলাকাতেই। পুলিশের একাংশের মতে, বুঝিয়ে-সুঝিয়ে বাসিন্দাদের বাড়িতে রাখাই লক্ষ্য।
আরও পড়ুন: করোনা-সঙ্কটে নজরে থাকুন সমাজে কোণঠাসা গোষ্ঠীর মানুষেরাও
গত সপ্তাহে কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় লকডাউন মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তবে পুলিশ সূত্রের খবর, ওই চিঠির জন্য নয়, গোটা শহরেই লকডাউন সফল করতে চলতি সপ্তাহকে গুরুত্ব দিচ্ছে লালবাজার। কমিশনার বাহিনীর কর্তাদের কাছে তাঁদের এলাকার প্রতিদিনের রিপোর্ট চেয়েছেন।
আরও পড়ুন: চিনার পার্কের হাসপাতালে চিকিৎসকের করোনা মেলায় উদ্বেগে অন্যরা
এক পুলিশকর্তা জানান, লকডাউন মানা হচ্ছে কি না, সোমবারই পুলিশ কমিশনার বাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের রাস্তায় নেমে তা দেখতে বলেছিলেন। সেই মতো এ দিন বাহিনীর কর্তারা নিজ নিজ এলাকায় নজরদারি চালান। রাস্তায় নামা কোনও গাড়িকেই ছাড় দেওয়া হয়নি তল্লাশি থেকে। ওসি, এসিরা ছাড়া ডিসিরাও নববর্ষের দিনে সক্রিয় ছিলেন লকডাউন কার্যকর করতে। এ দিন নিউ আলিপুরে দেখা যায়, রাস্তায় নামা গাড়ির চালকদের ফোন নম্বর লিখে রাখছেন পুলিশকর্মীরা। আবার বিকেলে উল্টোডাঙা, বেলগাছিয়া, তপসিয়া-সহ বিভিন্ন এলাকায় তিনটি ড্রোনের মাধ্যমে নজরদারি চালানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত লকডাউন বিধি না-মানায় শহরে গ্রেফতার হয়েছেন ৬০২ জন। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ৯৫টি গাড়ি। এ দিন রাস্তায় বেরোনোর জন্য এক যুবককে কান ধরে ওঠবোস করানোর অভিযোগ ওঠে পুলিশের বিরুদ্ধে। পুলিশ জানায়, বিকেলে ময়দান থানা এলাকার ডাফরিন রোড ও রেড রোডের মোড় দিয়ে খিদিরপুরের ওই বাসিন্দা হেঁটে যাচ্ছিলেন। পুলিশ বাইরে আসার কারণ জানতে চায় তাঁর কাছে। ওই যুবকের উত্তরে সন্তুষ্ট না-হয়ে পুলিশকর্মীরা রাস্তার মধ্যেই কান ধরে তাঁকে ওঠবোস করান বলে অভিযোগ।
পুলিশের একাংশ জানিয়েছে, আইন ভাঙলেও প্রকাশ্যে ওঠবোস করানো যায় না। ওই যুবক অভিযোগ দায়ের না-করলেও বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান এক পুলিশকর্তা। সংবাদমাধ্যমের কাছে ওই যুবকের দাবি, তিনি শ্রমিকের কাজ করেন। টাকার খোঁজে বাইরে বেরিয়েছিলেন।
(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)