Kolkata Police

সংক্রমণের ঝুঁকি উড়িয়েই মানুষের পাশে শহরের পুলিশ

সারা বছর শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধ ঠেকানোর কাজ করা মানুষগুলি এখন অতি তৎপর করোনাভাইরাসের মোকাবিলায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০২০ ০১:৪০
Share:

ফাইল চিত্র। পিটিআই।

সংক্রমণ এড়ানোর ভরসা বলতে শুধু মাস্ক। তবুও কর্তব্যে কোনও ঢিলেঢালা মনোভাব নেই কারও। লকডাউনে কখনও বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন কেউ। আবার কেউ অসুস্থ রোগীকে নির্দ্বিধায় পৌঁছে দিচ্ছেন হাসপাতালে। এমনকি করোনা-আক্রান্ত সন্দেহ হলেও পিছপা হচ্ছেন না কেউ। আবার লকডাউন উপেক্ষা করে জমায়েত করা বেপরোয়াদের লাঠি উঁচিয়ে তাড়া করে সমাজকে করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচানোর মরিয়া লড়াই করছে সেই কলকাতা পুলিশই।

Advertisement

সারা বছর শহরের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা, চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধ ঠেকানোর কাজ করা মানুষগুলি এখন অতি তৎপর করোনাভাইরাসের মোকাবিলায়। বিদেশ কিংবা অন্য রাজ্য থেকে আসা লোকজন রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন কিংবা লুকিয়ে রয়েছেন জানতে পারলেই ছুটছেন শক্ত-সমর্থ চেহারার মানুষগুলি। তাঁদের বুঝিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে। কখনও জোরও করছেন। আবার সংক্রমণ থেকে দূরে রাখতে ফুটপাতবাসীদের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছেন ওই পুলিশকর্মীরা। গত কয়েক দিন ধরে এটাই কলকাতা পুলিশের প্রতিটি থানার ছবি।

শনিবারই ভবানীপুরে ক্যানসার আক্রান্ত এক সঙ্কটজনক রোগী ওষুধ না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভবানীপুর থানায় সেই খবর পৌঁছয় একটি ওষুধের দোকান থেকে। থানার তরফে ফোন করা হয় ওষুধের ডিস্ট্রিবিউটরকে। তার পরে ওষুধ পেয়ে সুস্থ হন সেই রোগী।
আবার গত শুক্রবার বৌবাজার থানার পুলিশ ৭২ বছরের অসুস্থ বৃদ্ধা ভগবতী দে-র বাড়িতে মুদিখানার দ্রব্য ও আনাজ পৌঁছে দেয়। দু’দিন ধরে খাওয়া জুটছিল না ওই বৃদ্ধার। রবিবার ডায়ালিসিসের পরে হালতুর নমিতা কর্মকারকে পূর্ব যাদবপুর থানার ওসি নিজের গাড়িতে চাপিয়ে বাড়ি পৌঁছে দেন।

Advertisement

গত এক সপ্তাহ ধরে এ ভাবেই শহরবাসীর পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন কলকাতা পুলিশের কর্মীরা। লকডাউনে পরিচারিকার কাজ হারানো বৈদ্যবাটির বাসিন্দা ৫৮ বছরের ঊষাদেবীকে গাড়ি ভাড়া করে তাঁর বাড়িতে পাঠিয়েছে ফুলবাগান থানার পুলিশ। আবার লকডাউনে আটকে পড়া ভিন্‌ রাজ্যের ছয় বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে চিৎপুর থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার আর্থিক সাহায্য করে বাড়ি ফিরিয়েছে। বাজারে ভিড় ঠেকাতে নিউ
আলিপুর থানা বাসিন্দাদের বাড়িতে ফোন করে তাঁদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাড়িতে পৌঁছে দিচ্ছে। বেনিয়াপুকুর থানা দায়িত্ব নিয়েছে নিজের এলাকার পথশিশুদের খাবারের। এক্সাইড মোড় থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বসবাসকারী ফুটপাতবাসীদের দু’বেলা খাবারের ব্যবস্থা করছে সাউথ ট্র্যাফিক গার্ড।

ব্যতিক্রম নয় রবিবারও। এ দিন পোস্তা থানা এলাকায় অ্যাম্বুল্যান্সের লোকজন করোনা আক্রান্ত সন্দেহে এক রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত পোস্তা থানার পুলিশকর্মীরাই ওই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু তাঁদের কাছে মাস্ক থাকলেও গ্লাভস ছিল না। এ ভাবে গ্লাভস ছাড়া কাউকে ছুঁলে তাঁরাও সংক্রামিত হতে পারেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন কোনও
কোনও পুলিশকর্মী।

ক্ষুব্ধ এক পুলিশকর্মীর কথায়, ‘‘এমন রোগীকে হাসপাতালে পাঠাতে গেলে বিশেষ অ্যাম্বুল্যান্স, পোশাক, মাস্ক, গ্লাভস, স্যানিটাইজ়ার দরকার। অথচ পুলিশকে শুধু মাত্র সার্জিক্যাল মাস্ক ছাড়া আর কিছুই দেওয়া হয়নি। পুরসভাও সব দায়িত্ব পুলিশের ঘাড়ে চাপাচ্ছে।’’

তা সত্ত্বেও মানবিকতার এই লড়াইয়ে শহরবাসীর দিকে বিনা গ্লাভসে সাহায্যের হাত বাড়ানো বন্ধ থাকবে না বলেই জানাচ্ছেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement