পাশে: দুঃস্থদের খাবার পরিবেশনে ব্যস্ত কিরণকুমার গুপ্ত। নিজস্ব চিত্র
মদের ঠেক হটিয়ে মাজার বাঁচিয়ে আগেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি। পাশাপাশি, একমাত্র হিন্দু প্রতিনিধি হিসেবে তিনি রাজ্যের কোনও ওয়াকফ সম্পত্তির মোতায়াল্লি (কর্ণধার)। লকডাউনের মরসুমে যাঁর হাত দিয়ে ভবানীপুর এলাকার প্রায় একশো দুঃস্থ মানুষ রোজ খাবার পাচ্ছেন।
এ রাজ্যে সরকারি নথিভুক্ত প্রায় ষোলো হাজার ওয়াকফ সম্পত্তির মধ্যে কলকাতায় রয়েছে দেড় হাজারের মতো। তারই একটি, ভবানীপুরের যোগেশ মিত্র রোডের ‘সৈয়দ বদরুদ্দিন শাহ ওয়াকফ এস্টেট’। যার মোতায়াল্লি কিরণকুমার গুপ্ত। বছর পঁচিশ আগে বিহারের মুঙ্গের থেকে আসা কিরণকুমার ভবানীপুরে এসে গাড়ি চালাতে শুরু করেন। সেই সময়ে তাঁর চোখে পড়ে যোগেশ মিত্র রোডের অবহেলিত মাজারটি। তাঁর এক আত্মীয়ের বাড়ির পাশেই ছিল সুফি সৈয়দ বদরুদ্দিন শাহের কবরস্থান। তার উপরেই প্লাস্টিকের ছাউনি দিয়ে চোলাইয়ের আসর বসত। ভবানীপুর থানা ও ওয়াকফ বোর্ডে বারবার দরবার করে চোলাইয়ের ঠেক হটিয়ে মাজারের সুষ্ঠু পরিবেশ ফেরানো সম্ভব হয়েছিল। শুধু তাই নয়, সরকারি ওয়াকফ সম্পত্তির তালিকায় মাজারটিকে নথিভুক্ত করিয়েছেন কিরণকুমার। পাশেই তৈরি হয়েছে ‘সৈয়দ বদরুদ্দিন শাহ ওয়েলফেয়ার সোসাইটি’ পরিচালিত কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও পথশিশুদের জন্য স্কুল।
এই ক’দিন কিরণবাবুকে সামনে থেকে কাজ করতে দেখা ভবানীপুর থানার এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই বিপর্যয়ের সময়ে বহু মানুষ জনসেবা করছেন। তেমনই এক জন কিরণবাবু। প্রচারবিমুখ এই মানুষ যে ভাবে রাতদিন দুঃস্থদের পাশে রয়েছেন, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।’’
এমন মানুষকে পেয়ে নিজেদের গর্বিত মনে করছেন রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান তথা হাইকোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি আব্দুল গনি। তিনি বলেন, ‘‘চারদিকে ধর্মীয় সঙ্কীর্ণতা যখন মাথাচাড়া দিচ্ছে, তখন কিরণবাবুর মতো মানুষেরা সম্প্রীতির নজির গড়ছেন। লকডাউনের সময়ে সব ধর্মের মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করছেন তিনি। এমনকি, সংক্রমণ ঠেকাতে তাঁদের মাস্ক, স্যানিটাইজ়ার বিলি করছেন। আমরা শীঘ্রই ওঁকে পুরস্কৃত করব।’’ এই সমাজের কিরণবাবুর মতো মানুষদের যে প্রয়োজন, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন স্থানীয় কাউন্সিলর অসীমকুমার বসু।
মাজারে গিয়ে দেখা গেল, খাবার খেতে আসা প্রত্যেকের হাত সাবান-জল দিয়ে ধোয়ানো হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে মাস্ক। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে তাঁদের দাঁড় করিয়ে বা বসিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে। যাঁর উদ্যোগে এই আয়োজন সেই কিরণবাবু বলছেন, ‘‘যত দিন লকডাউন চলবে, তত দিন এঁরা দু’বেলা খাবার পাবেন। এই কঠিন সময়ে সকলকে এগিয়ে আসতেই হবে।’’