গ্রাফিক: তিয়াসা দাস।
দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণা হয়েছে মঙ্গলবার। তার ঠিক পরেই দু’টি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল কলকাতার উত্তর শহরতলিতে। দু’জনেই ভারত সঞ্চার নিগম লিমিটেড (বিএসএনএল)-এর ঠিকাকর্মী। বিএসএনএলের ঠিকা বা চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সংগঠন কনট্রাক্টর্স ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন অব বিএসএনএলের এক নেতা বলেন, ‘‘অনটন এবং এই লকডাউনের সময় অনিশ্চয়তার জেরেই আত্মঘাতী হয়েছেন ওই দুই কর্মী।’’
মঙ্গলবার নৈহাটির গরিফায় বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন ৪৪ বছরের সুজয় ঘোষ। তিনি সন্তোষপুর টেলিফোন এক্সচেঞ্জে কাজ করতেন। তাঁর আত্মীয় অপূর্ব ঘোষ। তিনি নিজেও বিএসএনএলের ঠিকা কর্মী। তিনি বলেন, ‘‘গত ১৩ মাস ধরে সুজয়, আমি সবাই অন্যদের মতোই রোজ অফিস যাচ্ছি। পার্থক্য একটাই। অন্যেরা মাসের শেষে বেতন পান। আমরা পাচ্ছি না।” অপূর্ব জানিয়েছেন, সুজয়ের দুই সন্তান, প্রথম এবং দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। স্ত্রী ছাড়াও রয়েছেন বৃদ্ধা মা। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন তিনি। একদিকে বেতন পাচ্ছিলেন না। তার উপর লকডাউন ঘোষণার পর সংসার চলবে কীভাবে তা নিয়ে উৎকণ্ঠায় ছিলেন। অপূর্বের দাবি এই সব কারণেই আত্মঘাতী হয়েছেন সুজয়।
পরের দিন অর্থাৎ বুধবার আত্মহত্যা করেছেন বারাসত হৃদয়পুরের বাসিন্দা অনুকূল রায়। বছর ৪২-এর অনুকূলও প্রায় এক বছর ধরে বেতন পাচ্ছেন না। বিএসএনএলের চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের সংগঠনের যৌথ ফোরামের নেতা অমিতাভ ভট্টাচার্য বলেন,‘‘প্রায় ৫ হাজার মানুষ বেতন পাচ্ছেন না।এঁরা কিন্তু প্রায় ২০ বছর ধরে কাজ করছেন।” তিনি অভিযোগ করেন,‘‘দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। এই মার্চে একটা সুরাহা হওয়ার আশা ছিল। কিন্তু তার মধ্যেই করোনা আতঙ্ক এবং লকডাউন। তার জেরে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা। যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে বেতন পাচ্ছেন না, তাঁরা বিভিন্ন পথে সামান্য রোজগার করে পরিবার কোনও মতে চালাচ্ছিলেন। কিন্তু তার মধ্যেই এই লকডাউন সেই আয়ের পথ বন্ধ করে দিয়েছে।” আর সেই কারণেই আত্মহত্যা বলে দাবি বিএসএনএল কর্মীদের।
আরও পড়ুন: করোনা রুখতে শুধু লকডাউন যথেষ্ট নয়, দাবি হু-র
আরও পড়ুন: অবস্থা সঙ্কটজনক, নয়াবাদের করোনা আক্রান্ত বৃদ্ধ রয়েছেন অক্সিজেন সাপোর্টে
তবে এই দু’জনের আত্মহত্যার কারণ কী তা এখনও জানা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। কোনও ক্ষেত্রেই কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি বলেও জানিয়েছে তারা।