lockdown

বাজার-বিলাসে যে লুকিয়ে বিপদ, বুঝেও বুঝছে না শহর

লকডাউনে হাতে অফুরান সময়। উৎসাহেরও অন্ত নেই। অতএব, চলো বাজারে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০৪:২৪
Share:

চলছে ভ্রুক্ষেপহীন বিকিকিনি। বৃহস্পতিবার, স্ট্র্যান্ড রোডে। ছবি: সুমন বল্লভ

আগে যিনি সপ্তাহে এক বার বাজারে যেতেন, এখন তিনিই হয়তো থলে হাতে বেরিয়ে পড়ছেন রোজ। আগে যে বাড়িতে মুদিখানার সামগ্রী আসত মাসে এক বার, এখন সেই বাড়ির লোকেরাই হয়তো সপ্তাহে তিন দিন দৌড়চ্ছেন সেখানে। লকডাউনে হাতে অফুরান সময়। উৎসাহেরও অন্ত নেই। অতএব, চলো বাজারে।

Advertisement

বাজারের ভিতরে দূরত্ব-বিধি মানারও বালাই নেই। ঘেঁষাঘেঁষি ভিড়েই চলছে কেনাকাটা। পাকা আমটি নাকের কাছে ধরে চোখ বুজে সুগন্ধ জরিপই হোক বা মাছের গায়ে হাত দিয়ে কানকো পরখ করা, রসিয়ে বাজার করার অভ্যাস ছাড়তে পারেননি অনেকেই। অথচ, এই বাজারের পদে পদেই যে লুকিয়ে বিপদ, সে কথা আজ কারও অজানা নয়। বাঙালির চিরকালীন এই বাজার-বিলাস নিয়েই এ বার উঠেছে প্রশ্ন।

চলতি সপ্তাহে চেন্নাইয়ের কোয়ামবেড়ু পাইকারি আনাজ বাজারে কোভিড সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত ত্রাসের সৃষ্টি করেছে তামিলনাড়ুতে। ওই বাজার থেকে অন্তত ২৬০০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে খবর। যার জেরে গোটা দেশে করোনা সংক্রমণের নিরিখে এক লাফে তিন নম্বরে উঠে এসেছে তামিলনাড়ু। এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে কলকাতাতেও মানুষের সতর্ক হওয়া দরকার বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক ও প্রশাসকেরা।

Advertisement

আরও পড়ুন: ‘অবহেলায়’ মৃত্যু বৃদ্ধের, দেহ ছুঁলেন না কেউই

আরও পড়ুন: বাস-ট্যাক্সি-অটো, স্বাভাবিক হওয়ার পথে সব পরিবহণ

এর আগে নিউ আলিপুর বাজারে ভিড় ঠেকাতে মানুষের কাছে আনাজপাতি পৌঁছতে উদ্যোগী হয়েছিল পুলিশ। বেশ কিছু জায়গায় বাজার সরিয়ে ফাঁকা মাঠে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোথাও বা বিক্রেতাদের বসা নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘বাজারে দূরত্ব-বিধি বজায় রাখতে কিছু পদক্ষেপ করা হলেও কে কী ভাবে বাজার করবেন, তা ব্যক্তিগত সচেতনতারও বিষয়। গ্লাভস, মাস্ক পরে বাজার করতে আসাটাই কাম্য।’’

উত্তর কলকাতার ছাতুবাবুর বাজারে মাস্ক বা গ্লাভসবিহীন কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না বিক্রেতারা। মাসখানেক বন্ধ থাকার পরে এক গুচ্ছ নতুন নিয়ম করে সদ্য খুলেছে পাতিপুকুর পাইকারি বাজার। সেখানে খুচরো কারবারিদের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে বলে জানান মাছ কারবারিদের সংগঠনের সম্পাদক দেবাশিস জানা। হাওড়ার পাইকারি মাছ বাজার অবশ্য গোটা লকডাউন-পর্বে টানা খোলা থেকেছে। কিন্তু বাজার সমিতির সম্পাদক সৈয়দ আনোয়ার মাকসুদ উদ্যোগী হয়ে বাজারে লেনদেনের সময়টা সকালের দু’ঘণ্টায় আটকে রাখতে চাইছেন। আড়ত-মালিকেরা এবং বাজারের মোটবাহক-কর্মচারীরা যাতে আলাদা সময়ে বাজারে আসেন, সেটাও দেখা হচ্ছে। এই প্রথম পাইকারি মাছ বাজারে ঢোকার লাইন দেখা যাচ্ছে। তবে মাছ বাছার সময়ে গ্লাভস পরার চল এখনও বহুল প্রচলিত নয়।

দু’জন বিক্রেতার মধ্যে দূরত্ব বজায় রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল গড়িয়াহাট বাজার, যদুবাবুর বাজার ও শরৎ বসু রোড বাজারে। কালীঘাট ও বাঁশদ্রোণী বাজারে ঢোকা-বেরোনো নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগী হয়েছে পুলিশ। সম্প্রতি বাঘা যতীন বাজারে কিন্তু মাছ কিনতে ক্রেতাদের ধাক্কাধাক্কি করতেও দেখা গিয়েছে। একই চিত্র দেখা গিয়েছে যাদবপুর এবং আজাদগড়ের মাছ ও আনাজের বাজারে।
বিক্রেতারা সামাজিক দূরত্বের কথা বললেও তা শুনতে নারাজ ক্রেতাদের অনেকেই। গ্লাভস ছাড়াই মাছের গায়ে হাত দিয়ে টিপে দেখা চলছে। পুলিশের অবশ্য দাবি, টহলদার দল বাজারে বাজারে ঘুরে হাল-হকিকত দেখছে। মেডিসিনের চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বললেন, ‘‘অজানা কিছু স্পর্শের আগে গ্লাভস পরা উচিত।’’

জনস্বাস্থ্য চিকিৎসক সমুদ্র সেনগুপ্তেরও মত, ‘‘সাবধানের মার নেই। অজানা কিছু স্পর্শ করার আগে হাতে গ্লাভস থাকাই ভাল।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement