চিনা ভাষায় তৃণমূলের দেওয়াল লিখন। তপসিয়ায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক
এ বার ভোট প্রচারেও চিনের প্রবেশ!
ভোটের আবহে শহরের দেওয়াল জুড়ে কোথাও কার্টুন, কোথাও লেখা ‘খেলা হবে’ স্লোগান। প্রার্থীর নাম ও প্রতীক-সহ চিরাচরিত লিখনেও ভরেছে শহরের দেওয়াল। তারই মধ্যে স্বতন্ত্র কসবা বিধানসভা এলাকার একাংশের দেওয়াল। কারণ, সেখানে ভোটের প্রচার চালাতে দেওয়াল সেজে উঠেছে চিনা লিপিতে!
কসবা বিধানসভা এলাকায় ইস্ট তপসিয়া রোডের উপর দিয়ে গিয়েছে মা উড়ালপুল। আর তার নীচে পরপর দেওয়াল জুড়ে চিনা লিপিতে লিখে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেছে তৃণমূল। নিছক ভোট প্রচারই নয়, নন্দীগ্রামে প্রচারে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোট পাওয়ার ঘটনার প্রতিবাদও বাঙ্ময় হয়ে উঠেছে এই চিনা লিপিতেই— ‘দিদির জন্য প্রার্থনা, শত্রুদের ছাড়ব না’। পাশের দেওয়ালে আবার বাংলায় লেখা ‘খেলা শুরু’। শহরের চিনারা অবশ্য এমন অভিনব ভোট প্রচারে বেশ খুশি। বলছেন, ‘‘বেশ ছন্দ মিলিয়ে হয়েছে প্রতিবাদ।’’
শহরে চিনাদের লোকসংখ্যা ক্রমশ কমছে। ১৯৬২ সালে ভারত-চিন যুদ্ধের সময়ে তাঁরা এক সময়ে প্রায় খোলসের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিলেন। অবিশ্বাসের সেই চোরাবালি এখনও কিছুটা আছে। ভারত স্বাধীন হওয়ার আগে এ দেশেই জন্মানো চিনাদের আজও ভারতীয় নাগরিকত্ব নেই। অনেকেই পাড়ি জমিয়েছেন কানাডা, ব্রিটেন বা অস্ট্রেলিয়ায়। তবু টেনেটুনে বর্তমানে কলকাতায় চিনাদের সংখ্যা হাজার পাঁচেক হবে বলে ধারণা শহরের আধ ডজন চিনা রেস্তরাঁর কর্ত্রী মনিকা লিউয়ের। মা উড়ালপুলের নীচে ওই দেওয়াল লিখন এখনও দেখা হয়ে ওঠেনি তাঁর। তবে অভিনব ওই প্রচার খুশি করেছে ট্যাংরার বাসিন্দা, আর এক তরুণ রেস্তরাঁ-কর্তা ওয়াল্টার চেনকে। তিনি জানালেন, এ শহরে বসবাসকারী চিনাদের বেশির ভাগই হাকা ভাষায় কথা বলেন। কিন্তু দেওয়াল লিখনগুলি লেখা হয়েছে ম্যান্ডারিন ভাষায়। ওয়াল্টারের কথায়, ‘‘আমরা তো এ দেশেরই নাগরিক। কলকাতার বাসিন্দা। আমাদের জন্য চিনা ভাষায় দেওয়াল লিখন তো হওয়াই উচিত।’’
কসবা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী জাভেদ খান বলছেন, ‘‘আমার বিধানসভা এলাকা মিনি ইন্ডিয়া। ভারতীয় চিনারাও একই পরিবারের অঙ্গ। ওঁরা অনেকেই এ রাজ্যের ভোটার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আহত হওয়ার পরে এই ঘটনার প্রতিবাদ ছড়িয়ে দিতেই চিনা ভাষায় দেওয়াল লেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’’
তবে দলীয় রাজনীতিতে কলকাতার চিনাদের এখনও পর্যন্ত ততটা সক্রিয় হতে দেখা যায়নি। স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রের দাবি, ২০০৯ থেকেই এ তল্লাটে চিনা ভাষায় দেওয়াল লিখন দেখা যায়। তবে ওয়াল্টাররা বলছেন, গত লোকসভা ভোট থেকে এর চল বেড়েছে। কিন্তু যে ভাবে স্রেফ প্রচার করতে নয়, মুখ্যমন্ত্রীর আহত হওয়ার ঘটনার প্রতিবাদও করা হয়েছে চিনা ভাষায়, সেই অভিনবত্বে মজেছেন শহরের চিনারা। ইস্ট তপসিয়া রোডের উল্টো দিকের বসবাসকারী কয়েকটি চিনা পরিবারের সাহায্যেই এই বার্তা দেওয়ার কাজ হয়েছে।
স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের মালিক রাজু বাসনেট বলছেন, ‘‘৪০ বছর ধরেই এই এলাকায় আছি। আমার অনেক চিনা বন্ধু আছে। তারা বেশির ভাগ সময়েই হিন্দিতে কথা বলে। ওদের জন্য চিনা ভাষায় ভোটের প্রচার দেখে বেশ ভাল লাগছে।’