ছবি সংগৃহীত।
শহরের সরকারি হাসপাতালেরোগী-ভোগান্তির ছবিটা আজও অব্যাহত। অভিযোগ, সেখানে চিকিৎসা পেতে এসে হয়রানির মুখে পড়ছেন রোগী ও তাঁদের পরিজনদের একটা বড় অংশ। তবে এর মধ্যেই কিছু আশার আলো দেখা যাচ্ছে। যেমন, এসএসকেএম হাসপাতালে বিনামূল্যে রোবোটিক সার্জারি চালুর কথা ভাবছে প্রশাসন।
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে এই পরিষেবা দিতে চলেছে এসএসকেএম। তার জন্য পরিকাঠামো তৈরির কাজ চলছে দ্রুত গতিতে। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, ওই পরিষেবা চালু হলে বহু মানুষ উপকৃত হবেন। কারণ, কয়েক লক্ষ টাকা খরচের ওই অত্যাধুনিক পরিষেবা রোগীরা পাবেন বিনামূল্যে।
দেশের প্রায় ৮০টি হাসপাতালে রোবোটিক অস্ত্রোপচারের সুবিধা রয়েছে। এ বার এই রাজ্যের সরকারি হাসপাতালেও সেই পরিষেবা চালু করার পদক্ষেপ করল সরকার। স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘পিজিতে ওই পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা হয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রচেষ্টায় সরকারি স্তরে আরও উন্নত চিকিৎসা পরিষেবা দিতে এই পদক্ষেপ।’’ পরিকাঠামো তৈরি দ্রুত শেষ হওয়ার পরে রোবোটিক অস্ত্রোপচারের যন্ত্রও বসানো হবে।
সূত্রের খবর, কয়েক বছর আগে অত্যাধুনিক অস্ত্রোপচার পদ্ধতিতে রোবটের ব্যবহারের জন্য স্বাস্থ্য দফতরে প্রস্তাব পাঠান এসএসকেএম কর্তৃপক্ষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাতে প্রাথমিক ভাবে অনুমোদন দেন। তার পরেই প্রক্রিয়া শুরু করে স্বাস্থ্য দফতর। সেই মতো পিজি-র কয়েক জন চিকিৎসককে নিয়ে রোবোটিক সার্জারি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে ইউরোলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক দিলীপ পালকে।
সূত্রের খবর, পিজির প্রধান ব্লকের উল্টো দিকে যে ন’তলা বহির্বিভাগ ভবন রয়েছে, তার পাঁচতলায় অপারেশন থিয়েটার কমপ্লেক্স তৈরি করছে পূর্ত দফতর। তার জন্য বরাদ্দ হয়েছে প্রায় দু’কোটি টাকা। তিনটি অপারেশন থিয়েটার থাকবে। কমিটির সুপারিশ মতো তার একটি শুধু রোবোটিক অস্ত্রোপচারের জন্যই তৈরি হচ্ছে। আপাতত ইউরোলজি বিভাগের অধীনে রাখা হয়েছে ওই বিষয়টিকে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, সপ্তাহে এক-এক দিন তা ভাগ করে দেওয়া হবে স্ত্রীরোগ, শল্য-সহ অন্যান্য বিভাগের জন্যও। যন্ত্রটি আসার পরে প্রত্যেক বিভাগ থেকে এক-দু’জন চিকিৎসককে তা ব্যবহারের প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। কারণ যে কোনও বিষয়ের শল্য চিকিৎসকদের কাছে রোবোটিক অস্ত্রোপচার একটি নতুন অধ্যায়।
মাস আটেক আগে ওই যন্ত্র পিজিতে এনে কমিটির চিকিৎসকদের সামনে প্রদর্শন করা হয়। তা হাতেকলমে পরখ করেন ওই চিকিৎসকেরা। তাঁদেরই এক জন, পিজির শল্য বিভাগের শিক্ষক-চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার বলেন, ‘‘রোবোটিক সার্জারি মানুষের দক্ষতাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যাবে। ল্যাপারোস্কোপিক পদ্ধতিতে আমরা হাতকে দু’রকম ভাবে ঘোরাতে পারি। কিন্তু রোবটের হাতের ‘আঙুল’ সাত রকম ভাবে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরতে পারে। সরকারি হাসপাতালে এই অস্ত্রোপচার একটা নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।’’ তিনি জানান, পিজিতে কয়েক কোটি টাকা দামের যে যন্ত্রটি আনার পরিকল্পনা হয়েছে, তাতে সিটি স্ক্যান, ইউএসজি-র সুবিধাও থাকবে। অর্থাৎ অস্ত্রোপচার করার সময়েই রোগীর সংশ্লিষ্ট অঙ্গপ্রত্যঙ্গের পরীক্ষাও করা যাবে।
চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, স্তন ক্যানসার, কিডনি, মূত্রথলি, মূত্রাশয়, পাকস্থলীর উপরের অংশের ক্যানসার-সহ বিভিন্ন রোগের জটিল ও সূক্ষ্ম অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে সহজেই করা সম্ভব হবে। ইউরোলজিস্টরা জানাচ্ছেন, পেলভিসের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে অস্ত্রোপচার বেশ জটিল। রোবোটিক সার্জারিতে সেটাও অত্যন্ত সহজ হবে। দীপ্তেন্দ্র আরও বলেন, ‘‘স্তন ক্যানসারে রোবোটিক সার্জারি ব্যবহারের বিষয়ে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে আমেরিকার মেয়ো ক্লিনিকের প্রধানের সঙ্গে বৈঠকও করব।’’
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, যেখানে পিজিতে অন্য অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে তারিখ পেতে কখনও বছর ঘুরে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে, সেখানে রোবোটিক অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রেও কি একই পরিণতি হতে চলেছে? পিজির এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘তেমনটা হয়তো হবে না। কারণ রোবোটিক সার্জারিতে রোগীকে অস্ত্রোপচারের পরে এক-দু’দিনের মধ্যে ছেড়ে দেওয়া হয়। সরকারি স্তরে এই পরিষেবা চালু হলে প্রচুর মানুষ উপকৃত হবেন।’’