প্রতীকী ছবি।
মাঝ আকাশে দুর্যোগের মুখে পড়ার ঠিক ১০ মিনিট আগে কেবিনে ‘সিট বেল্ট সাইন’ অন করেছিলেন পাইলট।
সোমবার মুম্বই থেকে কলকাতায় আসার পথে বিকেলে প্রবল ঝড়-ঝঞ্ঝার মুখে পড়ে ভিস্তারার একটি বিমান। আহত হন আট জন যাত্রী। সেই ঘটনায় যে তদন্ত শুরু হয়েছে, তাতে প্রাথমিক ভাবে এই ‘সিট বেল্ট অন’ সংক্রান্ত তথ্যই উঠে এসেছে। ঘনিষ্ঠ মহলে পাইলটও জানিয়েছেন, আকাশে ওই ঝঞ্ঝা কবলিত এলাকার আভাস পেয়ে আগে থেকেই তিনি যাত্রীদের সতর্ক করে দিয়েছিলেন।
পাইলট তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে এ-ও জানিয়েছেন, আকাশের ঝঞ্ঝা কবলিত ওই অংশটি পেরোতে তাঁর সময় লেগেছে মাত্র সাত সেকেন্ড। আর তার মধ্যেই চার দিক থেকে ধেয়ে আসা প্রবল হাওয়ার ধাক্কা কার্যত ওলটপালট করে দেয় বিমানকে। অবস্থা যে এতটা খারাপ হবে, তা তিনি আগাম অনুমান করতে পারেননি। ওই ঝঞ্ঝা থেকে বেরোনোর পথও খোঁজার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু কোনও দিকেই বেরোনোর রাস্তা খুঁজে পাননি।
ঘটনার তদন্তে নেমেছে ‘এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন বুরো’ বা এএআইবি। এর জন্য দিল্লি থেকে এএআইবি-র তিন কর্তা মঙ্গলবার সকালে উড়ে আসেন কলকাতায়। তদন্ত শেষ করে দুপুরের উড়ান ধরেই তাঁরা আবার দিল্লি ফিরে যান।
কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, মুম্বই থেকে এ শহরে আসার পথে সোমবার ভিস্তারার ওই বিমানটি বিকেল চারটে নাগাদ ঝঞ্ঝার মুখে পড়ে। পাইলট ঘটনার কথা জানান এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি)-কে। বিমানের ভিতরে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। সেই ঝাঁকুনিতে আসন থেকে পড়ে গিয়ে আহত হন আট জন যাত্রী।
প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, বিমানে থাকা ১২৩ জন যাত্রীর মধ্যে যে আট জন আহত হয়েছেন, সম্ভবত তাঁরা সিট বেল্ট পরার নির্দেশ মানেননি। সিট বেল্ট পরা অবস্থাতেও যদি যাত্রীরা ছিটকে পড়ে আহত হতেন, তা হলে আরও বেশি সংখ্যক যাত্রীর জখম হওয়ার ঘটনা ঘটত।
ওই বিমানের যাত্রী তিমিরবরণ দাস শিরদাঁড়ায় চোট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। এ দিন কলকাতায় এসে তদন্তকারীরা তাঁর সঙ্গে হাসপাতালে দেখা করতে যান। কিন্তু, কোভিড-প্রোটোকলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে চার্নক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই অনুমতি দেননি। এর পরে তদন্তকারীরা ভিডিয়ো কলে তিমিরবরণবাবুর সঙ্গে কথা বলেন বলে সূত্রের খবর।
‘ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন’ (ডিজিসিএ)-এর এক কর্তার কথায়, “আকাশে কোথায় খারাপ আবহাওয়া থাকতে পারে,
ককপিটে বসে আগেই তার সঙ্কেত পাওয়ার কথা পাইলটের। সোমবার ভিস্তারার পাইলট তা পেয়েওছিলেন। এ ক্ষেত্রে এটিসি-র কোনও ভূমিকা নেই। পাইলটকে সতর্ক করার কথা এটিসি-র নয়। ওই সময়ে ওই আকাশপথ এড়িয়ে যেতে চাইলে পাইলট এটিসি-র পরামর্শ অনুযায়ী রুট পরিবর্তন করতে পারতেন।”
ওই বিমানের যাত্রী সুদীপ রায়ের কপালে চোট লাগে। তাঁর বাড়ি আসানসোলে। মুম্বইয়ে কাজে গিয়েছিলেন। এ দিন তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অবশ্য বলেন, ‘‘আমি সিট বেল্ট পরেই ছিলাম। আচমকা মনে হল, একশোতলা থেকে নীচে পড়ে যাচ্ছি। সেই সময়ে বিমানের সিলিংয়ে আমার মাথা ঠুকে যায়। তাতে মাথায় চোট লাগে।”