গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
জুনিয়র ডাক্তারদের গণ কনভেনশনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সেই রিকশাচালকদেরও, যাঁরা গত ৮ সেপ্টেম্বর আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে হেদুয়া থেকে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত মিছিল করেছিলেন। শুক্রবার বিকেল ৪টে থেকে এসএসকেএমের অডিটোরিয়ামে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট’। এসএসকেএমের অডিটোরিয়ামে হবে সেই কর্মসূচি। এত দিন চিকিৎসকদের পাশে থেকে যাঁরা আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন, তাঁদের প্রায় সকলের প্রতিনিধিকেই ডাকা হয়েছে গণ কনভেনশনে। আমন্ত্রিত প্রবীণ চিকিৎসক, বিশিষ্ট অভিনেতা, পরিচালক থেকে আইটিকর্মী, মোহনবাগান-ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা। জুনিয়র ডাক্তার সূত্রে খবর, এত দিন কী ঠিক বা ভুল তাঁরা করেছেন, আগামী দিনে কী করা উচিত, কর্মসূচিতে সে সবই শুনবেন সমাজের সকল স্তরের মানুষজনের থেকে।
আরজি কর হাসপাতালে নির্যাতিতার বিচার, সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতালে নিরাপত্তা এবং পরিকাঠামো সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। এই আন্দোলনের পরবর্তী রূপরেখা কী হবে, কোন পথে এগোবে আন্দোলন, তা স্থির করতে শুক্রবার বিকেলে গণ কনভেনশনের ডাক দিয়েছে রাজ্যের ২৩টি সরকারি মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তারদের মঞ্চ ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট’-এর প্রতিনিধিরা। জুনিয়র ডাক্তারদের সূত্রে জানা গিয়েছে, দুই রোগীর পরিবারকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে গণ কনভেনশনে। এক রোগীর ফুসফুস প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। দ্বিতীয় জনের হার্টের সমস্যা ছিল। আন্দোলনের সময় হার্টের অস্ত্রোপচার হয়েছিল ওই রোগীর। চিকিৎসকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই রোগী আন্দোলনের জন্য পোস্টার লিখেছেন। আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে নেমেছিলেন মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের সমর্থকেরাও। তাঁদের কয়েক জনকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে গণ কনভেনশনে। শুক্রবার কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকছেন আইটি কর্মীরাও। এক জন আইনজীবীকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। ‘রাত দখল’ কর্মসূচি করেছেন যে মেয়েরা, তাঁদের প্রতিনিধিদেরও ডাকা হয়েছে। অভিনেত্রী দেবলীনা দত্ত, সোহিনী সরকার, চৈতি ঘোষাল, পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, গায়িকা অন্বেষা দত্ত, মীর, সমাজকর্মী বোলান গঙ্গোপাধ্যায়, মীরাতুন নাহার, চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকারকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে কর্মসূচিতে। জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে বলা হয়েছে, ‘‘এত দিন সকলে আমাদের পাশে নিঃস্বার্থ ভাবে ছিলেন। এ বার আমাদের পালা। আমরা কী ঠিক করেছি, কী ভুল করেছি, সকলের থেকে শুনতে চাই। কী করা উচিত, শুনতে চাই।’’
কর্মসূচিতে কী কী বিষয়ে আলোচনা হবে, তা ইতিমধ্যে জুনিয়র ডাক্তারদের সংগঠন স্থির করে ফেলেছে বলে সূত্রের খবর। হাসপাতালে হাসপাতালে হুমকি সংস্কৃতি (থ্রেট কালচার) নিয়েও কর্মসূচিতে কথা হতে পারে। হাসপাতালের নিরাপত্তা আরও জোরদার এবং পরিকাঠামো উন্নত করার জন্য ইতিমধ্যে বেশ কিছু বার্তা দিয়েছে রাজ্য সরকার। সরকার পক্ষের সঙ্গে দু’দফা বৈঠকে এই দাবিগুলিই তুলে ধরেছিলেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। ওই সূত্র মারফত আরও জানা গিয়েছে, সরকারের তরফে পাওয়া প্রতিশ্রুতিগুলি কার্যকর হওয়ার পথে কতটা এগিয়েছে— তা নিয়েও আলোচনা হবে। বৃহস্পতিবারই মুখ্যসচিব মনোজ পন্থকে সাত দফা দাবি জানিয়ে ইমেল করেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। তাঁদের অভিযোগ, মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে যে প্রতিশ্রুতিগুলি দেওয়া হয়েছিল, সেগুলি পালন করা হচ্ছে না। জুনিয়র ডাক্তারদের একটি সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, এখনও পূরণ না হওয়া ওই দাবিগুলির কথা প্রশাসনকে স্মরণ করিয়ে দিতেই তাঁরা মুখ্যসচিবকে মেল করেন। ওই বিষয়গুলি নিয়েও গণ কনভেনশনে আলোচনা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
পাশাপাশি, প্রতিবাদ কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার যে অভিযোগ উঠছে, সে বিষয়টিও উঠে আসতে পারে। উল্লেখ্য, আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে বুধবার কলকাতার একটি মলে কর্মসূচি করতে চেয়েছিলেন এসএসকেএমের জুনিয়র ডাক্তারেরা। কিন্তু ‘অভ্যন্তরীণ নীতির’ কারণ দেখিয়ে তাঁদের সেই কর্মসূচি করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। এই গণ কনভেনশনও প্রথমে ‘ধন ধান্য’ অডিটোরিয়ামে হওয়ার কথা ছিল বলে দাবি জুনিয়র ডাক্তারদের। প্রথমে আশ্বাস মিললেও পরে কোনও এক ‘অজ্ঞাত কারণে’ তাঁদের অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।