Pavlov Hospital

Pavlov Hospital: পাভলভ-কাণ্ডে সুপার, শোকজের জবাব না দিলে ব্যবস্থা, জানালেন রাজ্য স্বাস্থ্য অধিকর্তা

পাভলভ মানসিক হাসপাতালের সুপার অবিলম্বে শোকজের ‘সদুত্তর’ না-দিলে তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জুন ২০২২ ১৯:১৯
Share:

পাভলভ হাসপাতাল পরিদর্শনে স্বাস্থ্যভবনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র।

পাভলভ মানসিক হাসপাতালের সুপার অবিলম্বে শোকজের ‘সদুত্তর’ না-দিলে তাঁর বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। সোমবার ওই কথা জানিয়েছেন রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী। তাঁর কথায়, ‘‘ওঁকে (পাভলভের সুপারকে) উত্তর দেওয়ার জন্য সময় দেওয়া হয়েছে। সময় মতো সদুত্তর দিতে না পারলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ করব।” সুপার ওই কারণ দর্শানোর কী জবাব দেন, তা-ও দেখতে চায় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

Advertisement

সোমবার আরও একবার স্বাস্থ্য ভবনের ‘মেন্টাল হেলথ’ বিভাগের আধিকারিকরা পাভলভ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। তাঁরা হাসপাতালের মহিলা ওয়ার্ডটি পরিদর্শন করেন। কথা বলেন হাসপাতালের সুপার এবং নার্সিং স্টাফদের সঙ্গেও। পাভলভ হাসপাতালের বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলি খাতায়কলমে খতিয়ে দেখতেই স্বাস্থ্যকর্তাদের সরাসরি পাভলভে আগমন বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর।

তবে পাভলভ পরিদর্শনে-যাওয়া স্বাস্থ্য আধিকারিকদের কাছে হাসপাতাল পরিদর্শনের কারণ জানতে চাইলে তাঁরা বলেন, “আমরা কিছু বলতে পারব না। যা বলার রাজ্য স্বাস্থ্যসচিব বা স্বাস্থ্য অধিকর্তা বলবেন।” পাভলভে পরিদর্শনে যাওয়া স্বাস্থ্য দফতরের পদস্থ এক কর্তা জানান, তাঁরা মাঝেমধ্যেই এই ধরনের পরিদর্শন করেন। এটি ‘রুটিন ভিজিট’। বিশেষ কোনও পরিদর্শন নয়। অন্তত তাঁর বক্তব্য এমনই।

Advertisement

তবে সোমবারই স্বাস্থ্য ভবনের এক কর্তা জানিয়েছেন, নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই গত এপ্রিল এবং মে মাসে স্বাস্থ্য ভবনের আধিকারিকরা পাভলভ হাসপাতাল পরিদর্শন করেন। সেই রিপোর্টেই পাভলভের দুর্দশার বর্ণনা উঠে এসেছিল। ওই হাসপাতালের ১৩ জন রোগীকে একটি অন্ধকার ‘কুঠুরি’তে বন্ধ করে রাখা এবং তাঁদের ‘ডায়েট’ সংক্রান্ত যে ছবি স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে ধরা পড়েছে, সেই দুর্দশার কারণ কী, সেই ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছে। গত ১৩ জুন, সোমবার একটি চিঠিতে পাভলভের সুপারকে সাত দিনের মধ্যে ব্যাখ্যা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হিসাব মতো সেই সাত দিন শেষ হচ্ছে এই সোমবার।

সোমবার পাভলভ হাসপাতালে ঘন্টা দুয়েক স্বাস্থ্যকর্তারা পরিদর্শন করেন। তার পরে তাঁরা বৈঠকও করেন হাসপাতাল প্রশাসনের সঙ্গে। বৈঠকের বিষয়ে পাভলভ হাসপাতালের সুপার গণেশ প্রসাদের কাছে জানতে চাইলে উনি কিছু জানাতে চাননি। শুধু বলেন, ‘‘আমার লোটাকম্বল বাঁধাই আছে।’’ এখন দেখার, সুপার শোকজের চিঠির জবাবে কী লেখেন। এবং তাঁর সেই জবাবের ভিত্তিতে কি ব্যবস্থা নেয় রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর।

অস্বাস্থ্যকর ঘরে রোগীদের বন্দি করে রাখা, খারাপ খাবার খেতে দেওয়া— এমন নানা অভিযোগ উঠেছিল পাভলভ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। সেই নিয়ে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল সুপারের কাছে। স্বাস্থ্য দফতরের পর্যবেক্ষণ রিপোর্টে উঠে এসেছি, হাসপাতালের অন্ধকার এবং স্যাঁতসেঁতে দু’টি মাত্র ঘরে ১৩ জন রোগীকে বন্ধ করে রাখা হয়েছিল। ওই ঘরটির অবস্থাও বিপজ্জনক।

হাসপাতালে খাবারের মান নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন পর্যবেক্ষকেরা। স্বাস্থ্যকর্তাদের নজরে পড়েছে, মানসিক অসুস্থদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ‘ডায়েট কমিটি’ নেই। অপরিষ্কার পাত্রে রোগীদের খাবার পরিবেশন করা হয়। রোগীদের দেখার জন্য যে নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা আছেন, তাঁরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করেন না।

গোটা বিষয়টি সম্পর্কে তখনই মনোসমাজকর্মী রত্নাবলী রায় বলেছিলেন, ‘‘হাসপাতালের বাইরের সৌন্দর্যের তুলনায় ভিতরের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে নজর দিলে এই অবস্থা হত না। রোগীদের ওই ধরনের বদ্ধ ঘরে রাখলে তাঁরা তো কোনও দিন সুস্থ হবেন না। কিন্তু আমার প্রশ্ন, কেন ওই ১৩ জনকে এই অবস্থায় রাখা হয়েছে? এ তো কুঠুরিতে রাখার শামিল! ২০১৫ সালেই এই ধরনের ‘কালকুঠুরি’ ভেঙে দেওয়া হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কেরল হাই কোর্টের এ বিষয়ে নির্দেশও রয়েছে যে, কোনও মানসিক রোগীকে ‘নির্জন কালকুঠুরি’তে রাখা যাবে না।”

রত্নাবলী প্রশ্ন তুলেছিলেন রোগী কল্যাণ সমিতির ভূমিকা নিয়েও। রোগী কল্যাণ সমিতির তরফে বিধায়ক স্বর্ণকমল সাহা জানান, ওই হাসপাতালে শয্যার থেকে বেশি রোগী রয়েছেন। রোগীকে হাসপাতালে রেখে যায় পরিবার। কিন্তু তাঁদের ফিরিয়ে নিতে কেউ আসেন না। তাতেই রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে পাভলভে খারাপ খাবার দেওয়ার অভিযোগ মানেননি স্বর্ণকমল। তাঁর বক্তব্য, ‘ডায়েট চার্ট’ অনুযায়ী রোগীদের নিয়মিত মাছ-মাংস দেওয়ার কথা। তিনি বলেন, ‘‘রোগীদের খাদ্যতালিকা নিয়ে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমাদের মিটিংয়ে আগে এই অভিযোগ শুনিনি।” আবার রত্নাবলীর মতে, ‘‘স্বাস্থ্য ভবনের কর্তাদের হাসপাতাল পরিদর্শনেই বোঝা যাচ্ছে, পরিষেবার উন্নতিতে তাঁদের সদিচ্ছা রয়েছে। কিন্তু বাকিদেরও নিজেদের ভূমিকা পালন করা উচিত।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তেফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement