জাতীয় সড়কে টোটো। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ১৬ মার্চ ২০২৫। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।
সবটাই চোখের সামনে ঘটছে। কিন্তু কারও চোখে পড়ছে না। চাপড়ার টোটো ও গাড়ির ধাক্কায় সাত জনের মৃত্যুর ঘটনার পরে পুলিশ-প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সাধারণ মানুষের বক্তব্য এটাই। অনেকেই বলছেন, আইন আছে। আছেন তার রক্ষকেরাও। কিন্তু প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে আইনের রক্ষকদের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে আইন ভাঙছেন টোটো চালকেরা। জাতীয় ও রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে তারা যাতায়াত করছে। কখনও যাত্রী নিয়ে আবার কখনও পণ্য সামগ্রী নিয়ে। সবাই দেখেছে। কিন্তু কেউই কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
জাতীয় সড়কের পাশাপাশি রাজ্য সড়কেও টোটো চলাচল আইনত নিষেধ। কিন্তু সেই নিষেধাজ্ঞাকে কার্যত বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সর্বত্রই যে টোটোর অবাধ বিচরণ তা চাপড়ার এই দুর্ঘটনা আরও একবার চোখে আঙুল দিয়ে তা প্রমাণ করে দিল। মাস কয়েক আগে একই ভাবে কৃষ্ণনগরের কাছে ওভারব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় একটি গাড়ি ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল নাকাশিপাড়়ার কালাবাগা এলাকার বাসিন্দা খোকা শেখের (৪৫)। তিনি প্রতিদিন জাতীয় সড়ক ধরে যাত্রী নিয়ে কৃষ্ণনগর স্টেশনে আসতেন। এই দীর্ঘ রাস্তা তিনটি থানা এলাকার উপর দিয়ে গিয়েছে। অথচ কোনও দিনই কোনও থানার পুলিশই তাকে বাধা দেয়নি বা জরিমানা করেনি। তখনই এই প্রশ্ন তুলে সরব হয়েছিল নাগরিক সমাজ।
ফের চাপড়ায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হওয়ায় এ বারে সরাসরি প্রশাসনের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, আইন যখন আছে তখন কেন সেই আইন বলবৎ করা হচ্ছে না? পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের চোখের সামনে দিয়ে কী করে দিনের পর দিন বিপজ্জনক ভাবে রাজ্য ও জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছে টোটো? প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে তাহলে কী এর পিছনে অন্য গল্প লুকিয়ে রয়েছে? কোনও রাজনৈতিক চাপ, নাকি নজরদারির ক্ষেত্রে নেহাতই অনীহা কাজ করছে? তা না হলে জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের উপর টোটো ও অটো দুর্ঘটনায় প্রাণ যাওয়ার পরও কেন পদক্ষেপ হচ্ছে না?
প্রতিবার দুর্ঘটনায় প্রাণ যাওয়ার পরে জাতীয় সড়কের উপর টোটো ও অটো চলাচল নিয়ে কড়াকড় শুরু হয়। কিন্তু কিছু দিন পরে সেই একই চিত্র ধরা পড়ে। ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের পরে পুলিশ-প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঢাকঢোল পিটিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, কোনও ভাবেই টোটো ও অটো চলতে দেওয়া হবে না। কিন্তু তা আরও কথার কথা হয়ে রয়ে গিয়েছে। অভিযোগ, জাগুলি থেকে পলাশী পর্যন্ত প্রতিদিন প্রচুর টোটো জাতীয় সড়ক দিয়ে চালাচল করে। এই রাস্তা দিয়েই যাতায়াত করেন থানার পুলিশ কর্মী থেকে শুরু করে পুলিশ ও পরিবহণ দফতরের পদস্থ কর্তারাও। তাদের চোখেও কি কিছু পড়ে না!
কয়েক মাস আগে কৃষ্ণনগরের কাছে জাতীয় সড়কের উপর গাড়ির ধাক্কায় এক টোটো চালকের মৃত্যুর পরে জেলার পুলিশ ও আঞ্চলিক পরিবহণ দফতরের পক্ষ থেকে যৌথ ভাবে অভিযান চালানো হয়। প্রচুর টোটোকে জাতীয় সড়কে চলাচল করার জন্য আটকও করা হয়েছিল। পরে অবশ্য ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।
জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক অসীম মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা বসে নেই। পুলিশের পাশাপাশি লাগাতার অভিযান চালাচ্ছি। বেশ কিছু টোটোকে রীতিমত মোটা অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছে। আশা করছি, আমরা দ্রুত পুরোপুরি বন্ধ করতে পারব।”
কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “বেশির ভাগ মানুষ এখন টোটোর উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে গ্রামের দিক থেকে যে সমস্ত রাস্তা রাজ্য ও জাতীয় সড়কের সঙ্গে মেশে সেখানেই বেশি সমস্যা হচ্ছে। আমরা টোটো চালকদের সচতেন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করতে পারতে পারব।”