—প্রতীকী চিত্র।
বিভিন্ন ধরনের বাণিজ্যিক পরিষেবায় যুক্ত অ্যাপ-নির্ভর মোটরবাইক সরকারি নিয়ন্ত্রণের আওতায় আনতে সম্প্রতি গতি বাড়িয়েছে রাজ্য সরকার। এ জন্য আলাদা নম্বর প্লেট এবং লাইসেন্স দেওয়া হবে। এর পরের ধাপে ওই পরিষেবায় শৃঙ্খলা আনতে বিশেষ নির্দেশিকা জারি করতে চায় প্রশাসন। ইতিমধ্যেই পরিবহণ দফতরের তরফে যার প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে।
রাজ্যের পরিবহণ সচিব সৌমিত্র মোহনের নেতৃত্বে চলতি মাসেই এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বৈঠকের পরে অ্যাপ-নির্ভর সংস্থাগুলিকে বলা হয়েছে, তাদের কারও কোনও বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মতামত থাকলে তা লিখিত আকারে জানাতে হবে। সেই সঙ্গে বাইকচালকদের ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের মতামতও নেওয়া হয়েছে। সব দিক পর্যালোচনা করেই বাণিজ্যিক বাইক পরিষেবা নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে পূর্ণাঙ্গ নির্দেশিকা জারি করতে চায় পরিবহণ দফতর। নতুন নির্দেশিকার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায়িত্বও নির্দিষ্ট করে দিতে চায় পরিবহণ দফতর।
বৃহত্তর কলকাতায় প্রায় ১৫ হাজার মোটরবাইক-ট্যাক্সি বিভিন্ন অ্যাপ-নির্ভর সংস্থার মাধ্যমে যাত্রী পরিবহণের কাজে যুক্ত। এ ছাড়াও প্রায় ১ লক্ষ ১০ হাজার বাইক বিভিন্ন ই-কমার্স সংস্থা ও খাবার সরবরাহকারী সংস্থার কাজে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে। এত দিন বাণিজ্যিক পরিষেবায় যুক্ত বাইক আলাদা ভাবে চিহ্নিত করার ব্যবস্থা ছিল না। যার ফলে নানা ভাবে মোটরযান আইন লঙ্ঘিত হচ্ছিল বলে অভিযোগ। এর পাশাপাশি, সরকার বাণিজ্যিক বাইকের জন্য রাজস্বও পাচ্ছিল না। তা ছাড়া, সেই ব্যবস্থায় বাইক-ট্যাক্সির চালক বা যাত্রী, কোনও পক্ষই বিমার সুবিধা পাচ্ছিলেন না।
সম্প্রতি বিমা সংস্থাগুলির সঙ্গে পরিবহণ দফতরের আলোচনায় এই সমস্যা দূর হয়েছে। এত দিন বাণিজ্যিক লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা না থাকায় বাইকচালকদের এক দিকে যেমন পুলিশি হয়রানির মধ্যে পড়তে হত, তেমনই বহু ক্ষেত্রে কোন বাইক কে, কখন চালাচ্ছেন, তার কোনও হদিস অ্যাপ সংস্থার কাছেও থাকত না। একই অ্যাপ সংস্থার অধীনে একটি বাইক বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন চালাতেন। পাশাপাশি, একই ব্যক্তি এক-এক সময়ে এক-এক ধরনের অ্যাপে পরিষেবা দেওয়ার কাজে যুক্ত হতেন। এমন ঘটনা অহরহ নজরে এসেছে। ফলে কেউ কোনও ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়লে তাঁকে খুঁজে বার করতে সমস্যা হত। বিভিন্ন সময়ে ১৮ বছরের কমবয়সি বা অপ্রাপ্তবয়স্কদেরও অ্যাপ-বাইক সংস্থায় কাজ করতে দেখা গিয়েছে। ফলে পথ-নিরাপত্তার বিষয়টিও উপেক্ষিত হচ্ছিল। অ্যাপ সংস্থাগুলির কাছেও বিস্তারিত তথ্য থাকত না।
নতুন ব্যবস্থায় এই প্রবণতা রোখা যাবে বলেই মনে করছেন পরিবহণ দফতরের কর্তারা। প্রাথমিক ভাবে লাইসেন্স দেওয়ার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। যাত্রিবাহী বাইকগুলিকে এই প্রক্রিয়ায় আগে শামিল করার কথা ভাবা হয়েছে। অ্যাপ-নির্ভর বাইক পরিষেবা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষের লিখিত প্রস্তাব পাওয়ার পরে সেগুলি খতিয়ে দেখে নতুন নির্দেশিকা জারি করবে পরিবহণ দফতর। সেই প্রক্রিয়ায় কয়েক মাস সময় লাগতে পারে।