যে সমস্ত এলাকায় নীল ও সবুজ বালতি বিলি করা হয়েছে, সেখানেও দু’রকম বর্জ্য আলাদা করার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। প্রতীকী ছবি।
পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা আলাদা করার জন্য কলকাতা পুরসভার তরফে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সবুজ এবং নীল বালতি পৌঁছে দেওয়ার কাজ গত ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে। পুরসভা সূত্রের খবর, শহরের ৮০ শতাংশ এলাকায় এই বালতি বিলির কাজ শেষ হয়েছে। আগামী দু’-তিন মাসের মধ্যে বাকি ২০ শতাংশ এলাকাতেও ওই কাজ শেষ করতে চায় পুরসভা। কিন্তু পুরসভা সূত্রেরই খবর, যে সমস্ত এলাকায় নীল ও সবুজ বালতি বিলি করা হয়েছে, সেখানেও দু’রকম বর্জ্য আলাদা করার কাজ ঠিকমতো হচ্ছে না। এর কারণ হিসাবে অধিকাংশ পুরপ্রতিনিধিই মনে করছেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করা যায়নি। আবার পুরসভার বিরুদ্ধে নাগরিকদের পাল্টা অভিযোগ, বালতি বিলিটুকুই করা হয়েছে। কিন্তু জঞ্জাল নেওয়ার জন্য পুরকর্মীরা সময়মতো বাড়িতে আসেন না। যদিও পুরসভা এই অভিযোগ মানতে চায়নি।
শহরের পরিবেশ বাঁচাতে পরিবেশ আদালতের নির্দেশেই বর্জ্য পৃথকীকরণের পদক্ষেপ করেছিল পুরসভা। কিন্তু অভিযোগ, বাড়িতে নীল ও সবুজ বালতি থাকলেও সেগুলিতে আলাদা ভাবে জঞ্জাল রাখা বা তা থেকে জঞ্জাল সংগ্রহ করা— কোনওটাই পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে না। গোটা প্রক্রিয়ায় বিস্তর গরমিল দেখা যাচ্ছে। যদিও পুরসভার মেয়র পারিষদ (কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা) দেবব্রত মজুমদার বললেন, ‘‘পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য আলাদা করার জন্য মানুষকে সচেতন করতে লাগাতার প্রচার চলছে। কিছু এলাকা থেকে অভিযোগ এলেও বহু জায়গায় এই কাজে সাফল্যও মিলেছে। পরিবেশ বাঁচাতেই এই পদক্ষেপ। সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের বিনীত আবেদন, পুরসভার দেওয়া নীল ও সবুজ বালতিতে পচনশীল এবং অপচনশীল আবর্জনা ঠিক ভাবে রাখুন। তার পরে পুরকর্মীদের দিন।’’
অভিযোগ, পুরসভার বালতি পাওয়ার পরে অনেকেই তাতে আবর্জনা না রেখে বাড়ির নানা সামগ্রী রাখছেন বা জলের বালতি হিসাবে ব্যবহার করছেন। শহরের বস্তি এলাকায় এই প্রবণতা বেশি করে দেখা যাচ্ছে। উত্তর কলকাতার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তরুণ সাহা বললেন, ‘‘আমার বরোর সমস্ত ওয়ার্ডে নীল, সবুজ বালতি দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু মানুষের সাড়া তেমন ভাবে মিলছে না। এর জন্য পুরসভার তরফে আরও নজরদারি বাড়ানোর প্রয়োজন রয়েছে।’’ উত্তর কলকাতার একটি ওয়ার্ডের তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি অমল চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘বহুতল আবাসনের উপরের তলার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। পুরকর্মীরা ময়লা সংগ্রহ করতে গেলেও তাঁরা নীচে নামতে চান না। এর জন্য পুরসভার তরফে লাগাতার মাইকে প্রচার করা হচ্ছে।’’ ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস পুরপ্রতিনিধি সন্তোষ পাঠকের অভিযোগ, ‘‘আমার এলাকার বেশির ভাগ গরিব বস্তিবাসী নীল, সবুজ বালতিতে ঘরের সামগ্রী রাখছেন। পুরসভার উচিত, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নজরদারি চালানো।’’
বাম পুরপ্রতিনিধি মধুছন্দা দেব আবার গুরুতর অভিযোগ এনেছেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমার পার্শ্ববর্তী ওয়ার্ডে দক্ষিণ শহরতলি থেকে প্রচুর পরিচারিকা নিয়মিত যাতায়াত করেন। কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময়ে ঢাকুরিয়া স্টেশনে তাঁদের অনেকের হাতে নীল, সবুজ বালতি দেখা গিয়েছে বলে শুনেছি। জিজ্ঞাসা করায় তাঁদের বলতে শোনা গিয়েছে, তাঁরা যে বাড়িতে কাজ করেন, সেই বাড়ির মালিকেরা ওই বালতি দিয়েছেন।’’ যদিও পুরসভার জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, এমনটা হওয়ার কথা নয়। তাঁদেরই এক জন বলেন, ‘‘একমাত্র পুরসভার দেওয়া নীল-সবুজ বালতি থেকেই আমরা জঞ্জাল সংগ্রহের কাজ করব। অন্য কোনও পাত্রে জমানো জঞ্জাল কোনও মতেই নেব না।’’
নীল, সবুজ বালতি দেওয়ার পরে নাগরিকদের মধ্যে সচেতনতার প্রচারে পুরসভাকে আরও সক্রিয় হতে একাধিক বার আবেদন করেছিলেন বলে দাবি ৪৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল পুরপ্রতিনিধি বিশ্বরূপ দে-র। তিনি বলেন, ‘‘শুধু সচেতনতার প্রচারেই কাজ হবে না। নীল, সবুজ বালতিতে ঠিকমতো ময়লা না ফেললে সাধারণ মানুষকে জরিমানা করার কথাও ভাবতে হবে।’’ জঞ্জাল অপসারণ বিভাগের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘‘আগে শহরের সমস্ত ওয়ার্ডে নীল, সবুজ বালতি দিয়ে সেখানে পচনশীল ও অপচনশীল ময়লা ফেলার গুরুত্ব নাগরিকদের বার বার বোঝানো হবে। একাধিক বার সচেতন করেও কাজ না হলে পুরসভা নিশ্চয়ই পুর আইন অনুযায়ী জরিমানার ব্যবস্থা করবে।’’