প্রতীকী ছবি
খুনের অস্ত্র সেভেন এম এম পিস্তলটি চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ বেআইনি ভাবেই কিনেছিল অমিত আগরওয়াল। ফুলবাগানের আবাসনে ঢুকে শাশুড়িকে খুন করে আত্মঘাতী হওয়ার আগে অমিত সেটি সম্ভবত রেখেছিল শ্বশুরবাড়ি থেকে হাঁটা দূরত্ব ১৫০ই, মানিকতলা মেন রোডের ফ্ল্যাটে। যেটি অমিতের স্ত্রী শিল্পীর নামে কেনা। তবে তার চাবি থাকত অমিতের কাছেই। সে-ই মাঝেমধ্যে ব্যবহার করত ফ্ল্যাটটি। তদন্তে এমনটাই জানা গিয়েছে।
তদন্তে আরও জানা গিয়েছে, সোমবার বেঙ্গালুরু থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে পৌঁছে অমিত ছেলেকে বেলঘরিয়ায় দাদার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। বিমানবন্দর থেকেই সে একটি অ্যাপ-ক্যাব বুক করে পৌঁছয় মানিকতলা মেন রোডের ফ্ল্যাটে। বিমানবন্দর থেকে বেরোনো এবং মানিকতলার ফ্ল্যাটে ঢোকার সময়ে অমিতের হাতে একটি ফোল্ডার ছিল। কিন্তু ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরোনোর সময়ে তার হাতে ছিল ল্যাপটপের ব্যাগ। শাশুড়িকে খুন করে অমিতের আত্মঘাতী হওয়ার পরে যে ব্যাগটি শ্বশুরবাড়ি থেকে মিলেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, এই পুরো ঘটনাক্রম ধরা পড়েছে কলকাতা বিমানবন্দর এবং মানিকতলা ফ্ল্যাটের সিসি ক্যামেরার ফুটেজে। এক কর্তা জানাচ্ছেন, তাঁদের অনুমান অমিত ওই ফ্ল্যাটে আগেই খুনের অস্ত্র, সেভেন এমএম পিস্তল রেখেছিল। ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্তকারীরা অমিতের মোবাইলের লক খোলার চেষ্টা করেন। দু’বার ভুল পাসওয়ার্ড দিলেও তৃতীয় বার চারটে শূন্য দিতেই সেটি খুলে যায়। সেখান থেকেই অমিত ও তার ছেলের উড়ানের টিকিট-সহ বহু তথ্য মেলে। অমিত স্ত্রীকে করা সব ফোন রেকর্ড করত। সে সবও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। মোবাইল ঘেঁটেই বিমানবন্দর থেকে মানিকতলা মেন রোডের ওই ফ্ল্যাট পর্যন্ত আসা ক্যাবটির চালকের খোঁজ মেলে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে বিস্তারিত তথ্য মিলেছে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, অমিত ওই দিন বিকেল সাড়ে ৫টা নাগাদ তিন বন্ধুকে মেল করে লেখে, ‘আশা করি এ বার সব ঠিক হবে। ভাল থেকো।’ তার ১৫ মিনিট পরে সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ সে শ্বশুরবাড়িতে ঢোকে।
বেআইনি অস্ত্রটি অমিত কার থেকে কিনেছিল সেই খোঁজ চলছে। তবে তদন্তকারীদের বক্তব্য, সেটি যখনই কেনা হোক, ৬৭ পাতার সুইসাইড নোট থেকে স্পষ্ট, স্ত্রী শিল্পী ও শ্বশুরবাড়ির সদস্যদের খুন করার পরিকল্পনা ছিল তার দীর্ঘদিনের। কারণ, বিয়ের পর থেকে বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনার মাধ্যমে শ্বশুরবাড়ির সকলের প্রতি ক্ষোভ ঝরে পড়েছে সেই নোটে। এমনকি, তাঁদের কী করে খুন করা যায় এক লাইনে কিছু ভাবনাও অমিত সেখানে লিখেছিল। একটি নয়, একাধিক পরিকল্পনার কথাই উল্লেখ রয়েছে সেখানে। এমনকি, ভাড়াটে লাগিয়ে খুনের কথাও তার মাথায় এসেছিল। পরে ঠিক করে নিজেই শেষ করবে তার ‘মহাভারত’-এর জীবন। ‘কৌরবরূপী’ শ্বশুরবাড়ির লোকেদের নিজেই শাস্তি দেবে সে।