প্রতীকী ছবি।
জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা মাধ্যমিক না দিয়েই পাশ করে গেল এ বারের দশম শ্রেণির পড়ুয়ারা। করোনার কারণে পরীক্ষা বাতিল বলে ঘোষণা করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু সত্যিই কি বাতিল করার প্রয়োজন ছিল? সরকারের সদিচ্ছা থাকলে কি পরীক্ষাটা নেওয়া যেত না?
ঢাকঢোল পিটিয়ে বিধানসভা ভোট হল। সামনেই উপনির্বাচন। এমনকি, জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাও হল অফলাইনে। পরীক্ষার দিনগুলিতে যদি সরকার তার সমস্ত পরিকাঠামো নিয়ে মাঠে নামত, তা হলে কি মাধ্যমিক নেওয়া যেত না?
আমরা শিক্ষকেরা মিলে সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছিলাম, পরীক্ষার আয়োজন করা হোক হোম সেন্টারে। অর্থাৎ, যে পড়ুয়া যে স্কুলে পড়ে, সেখানেই সে পরীক্ষা দিক। ছাত্রছাত্রীরা সাধারণত বাড়ির কাছের স্কুলেই পড়ে। তাই অতিমারির মধ্যে পরীক্ষা হলেও তাদের বাসে বা অন্য গণপরিবহণে বেশি দূরে যেতে হত না। সেই সঙ্গে স্কুলের চেনা পরিবেশে পরীক্ষা দেওয়ায় ওদের সুবিধাও হত। এখন অধিকাংশ স্কুলে পর্যাপ্ত সংখ্যক ক্লাসঘর রয়েছে। তার উপরে করোনার জন্য স্কুল এখন বন্ধ। তাই মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীরা দূরত্ব-বিধি মেনেই পরীক্ষা দিতে পারত। পাশাপাশি, আমরা এই প্রস্তাবও দিয়েছিলাম যে, পরীক্ষার দিনগুলিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য অতিরিক্ত বাস ও ট্রেন চালানো হোক।
আসলে সরকারের যা মনোভাব তাতে মনে হয়েছে, পরীক্ষাকে তারা কখনওই অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখেনি। সেটা রাখলে ফেব্রুয়ারি মাসে যখন সাধারণত মাধ্যমিক হয়, তখনই পরীক্ষা নিয়ে নেওয়া যেত। কারণ, ফেব্রুয়ারিতে করোনা সংক্রমণ অনেকটাই কমে গিয়েছিল। কিন্তু, তখন তো পরীক্ষার দিকে নজরই ছিল না কারও। সামনেই ছিল বিধানসভা নির্বাচন। ভোটের জন্য বিভিন্ন স্কুলে থাকতে শুরু করেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী। তখন পরীক্ষার কথা ভাবার সময় কোথায়? অথচ, কেরল বোর্ড কিন্তু করোনা সংক্রমণ চলাকালীনই দশম শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষা নিয়েছিল।
আমাদের এখানে পরীক্ষা বাতিল করার সিদ্ধান্ত যখন জুন মাসের গোড়ায় নেওয়া হল, তখন করোনা সংক্রমণ একটু একটু করে কমছে। গত শনিবার তো রাজ্য জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষাও করোনা-বিধি মেনে অফলাইনে হয়ে গেল। সেই পরীক্ষা দিতে বহু পরীক্ষার্থী অনেক দূর থেকে, এমনকি ভিন্ রাজ্য থেকেও এসেছিলেন। দূরত্ব-বিধি মেনে পরীক্ষা দিয়ে তাঁরাও খুশি। জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মতো মাধ্যমিকও জুলাইয়ের শেষে নেওয়া যেতে পারত।
আমরা শিক্ষকেরাই যে শুধু চেয়েছিলাম পরীক্ষা হোক, তা নয়। পরীক্ষা দিতে চেয়েছিল অধিকাংশ দশম শ্রেণির পড়ুয়াও। তারা অনেকেই পরীক্ষা বাতিলের সিদ্ধান্তে হতাশ হয়েছিল। ফল বেরোনোর পরে অনেকেই জানাচ্ছে, যতটা ভাল ফল তারা আশা করেছিল, হয়তো তার চেয়েও ভাল ফল হয়েছে। কিন্তু জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা না দেওয়ার আফশোসটা ওদের মধ্যে রয়েই গেল।
(মতামত ব্যক্তিগত)