— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কলকাতার এক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীকে ২০২৩ সালে ফাইনাল সিমেস্টার পরীক্ষার ঠিক আগের দিন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনুলেখকের অনুমোদন পত্র নিতে মুর্শিদাবাদ থেকে কলকাতায় আসতে বলেন। অফিসে আসার পরে তাঁরা জানতে পারেন যে অনুলেখককে সশরীরে না দেখে কর্মীরা তাঁদের অনুমোদন পত্র দেবেন না। রাত ৯টা পর্যন্ত অনুরোধ করে অবশেষে তাঁরা অনুমোদনপত্র পান। শেষ পর্যন্ত রাতের ট্রেনে তাঁরা পরীক্ষা কেন্দ্রের উদ্দেশে রওনা হন।
হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্র বিজ্ঞানের স্নাতকোত্তর স্তরের দৃষ্টিহীন ছাত্র আকাশ প্রধান জানালেন, কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পরীক্ষার (সিইউইটি) জন্য ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি (এনটিএ) জানিয়েছিল তারা অনুলেখকের ব্যবস্থা নিজেরা করবে। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। উল্টে পরীক্ষার্থীরা তা জোগাড় করতে গেলেও নানা ভোগান্তির মুখে ফেলা হয়েছে।
আর এক দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থী সীমা পালের বক্তব্য, সেট পরীক্ষার ক্ষেত্রে পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে পরীক্ষার ১০ দিন আগে অনুলেখকের বিষয়ে সম্মতি নিতে হয়। দৃষ্টিহীনদের পক্ষে তা
খুবই সমস্যার।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সরকারি চাকরির পরীক্ষায় দৃষ্টিহীন পরীক্ষার্থীরা হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ বহু দিনের। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ স্তরের পরীক্ষা, সব ক্ষেত্রে দৃষ্টিহীন পড়ুয়ারা অনুলেখকের সর্বোচ্চ যোগ্যতা, অতিরিক্ত সময়, অনুলেখক ব্যবহারের অনুমতির প্রক্রিয়া ইত্যাদি নিয়ে ভোগান্তির শিকার হয়ে চলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০১৩ সালে দেশের সামাজিক ন্যায় ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের প্রতিবন্ধকতা বিষয়ক দফতর প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য লিখিত পরীক্ষার ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট নির্দেশিকা প্রকাশ করে। ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ এবং ২০২২ সালে ওই দফতরের পক্ষ থেকে এই সংক্রান্ত আরও কয়েকটি সংশোধনী ও নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়।
রাজ্যের ‘প্রতিবন্ধী শিক্ষা সুরক্ষা মঞ্চ’-এর যুগ্ম আহ্বায়ক যীশু দেবনাথ জানালেন, কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিতে এই বিজ্ঞপ্তি কখনও পুরোপুরি, কখনও আংশিক ভাবে অনুসরণ করছে। তবে রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ড, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিয়োগকারী রাজ্য সরকারি সংস্থাগুলির ভূমিকা এই ক্ষেত্রে খুবই হতাশাজনক। তাঁর অভিযোগ, ২০২২ সালে আয়োজিত প্রাথমিক টেট এবং কিছু দিন আগে আয়োজিত পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ফুড ইনস্পেক্টর পরীক্ষার ক্ষেত্রে অনুলেখকের সর্বোচ্চ যোগ্যতার ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়। কয়েকটি জেলার সংশ্লিষ্ট দফতর পরীক্ষার আগের দিন পরীক্ষার্থীকে অনুলেখককে সঙ্গে নিয়ে অনুলিখনের অনুমোদন পত্র সংগ্রহ করতে দফতরে আসতে বলে। যীশু আরও জানালেন, যদিও কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় বলা হচ্ছে, অনুলেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতা সর্ব নিম্ন মাধ্যমিক পাশ হবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রায় সমস্ত চাকরির পরীক্ষাতেই অনুলেখকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নবম ও দশম শ্রেণি নির্ধারণ করা হয়।
এ ছাড়া কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীদের অনুলেখক সংক্রান্ত হেনস্থার কথাও নতুন নয়। অভিযোগ, অনেক পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার শংসাপত্র থাকলেও আবার চিকিৎসকদের থেকে স্বাক্ষর করিয়ে নতুন শংসাপত্র আনতে বলা হয়।
নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশন ব্লাইন্ড বয়েজ় অ্যাকাডেমির প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক বিশ্বজিৎ ঘোষ জানালেন, ‘‘এগুলি হেনস্থার নামান্তর। দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের যথাযথ শংসাপত্র থাকলেও পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার সময়ে নতুন করে এইগুলি করা খুবই অসুবিধাজনক। এই ক্ষেত্রে নিয়ম বিধি সহজ করা খুবই প্রয়োজন।’’ এই বিষয়ে রাজ্যের ডিজ়েবিলিটি কমিশনার নীলাঞ্জনা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘সব অভিযোগ আমাদের কাছে আসে না। যদি আসে নিশ্চয়ই বিষয়ের গুরুত্ব বুঝে সমাধানের চেষ্টা করা হবে।’’