সম্পূর্ণ মহিলা পরিচালিত লোকাল ট্রেন চালিয়ে শিয়ালদহ স্টেশন কর্তৃপক্ষ নজির গড়লেও মহিলা কামরার সুরক্ষায় সেই ফাঁক থেকে যাচ্ছেই। গত শনিবার বিকেলে তা হাড়ে হাড়ে টের পেলেন শিয়ালদহ-বনগাঁ শাখার মহিলা কামরার যাত্রীরা।
যাত্রীদের অভিযোগ, ওই দিন ভিড়ে ঠাসাঠাসি ট্রেনে কার্যত তাণ্ডব চালান এক বৃহন্নলা। কারও ব্যাগ ফেলে, কাউকে চড় মেরে, আঁচড়ে-কামড়েও দেন তিনি। অভিযোগ, যাঁরাই প্রতিবাদ করতে গিয়েছেন, তাঁদেরই চলন্ত ট্রেন থেকে ঠেলে ফেলার হুমকি দিয়েছেন ওই বৃহন্নলা।
ওই দিন বিরাটির বছর আটত্রিশের এক মহিলা যাত্রীর বাঁ হাতের বুড়ো আঙুলে কামড় বসান ওই বৃহন্নলা। তাঁর গালে ও চোখে নখ দিয়ে আঁচড়েও দেন তিনি। বিরাটি স্টেশনে জিআরপি এবং স্টেশন মাস্টারের কাছে ওই দিনই অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁকে বারাসতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ওই মহিলা বারাসত জিআরপি-তে অভিযোগ জমা দেন। জিআরপি সূত্রের খবর, ওই বৃহন্নলার খোঁজ এখনও পাওয়া যায়নি।
ঘটনার সূত্রপাত শনিবার বিকেলে। বিরাটির বাসিন্দা ওই মহিলা পেশায় ফিজ়িয়োথেরাপিস্ট। ওই দিন সাড়ে চারটে নাগাদ বিধাননগর স্টেশন থেকে বনগাঁ লোকালে ওঠেন। ভিড়ে ঠাসা কামরায় উঠে কোনও মতে কিছুটা দূরে গিয়ে দাঁড়ান। ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে এক বলশালী বৃহন্নলা ওই কামরায় উঠেই চেঁচামেচি শুরু করেন বলে অভিযোগ। কোনও মতে দাঁড়িয়ে থাকা ওই মহিলাকে সরে দাঁড়াতে বলেন বৃহন্নলা। অভিযোগ, মহিলা না সরায় তাঁকে চড় মারা হয়। অন্য মহিলারা প্রতিবাদ করতেই তাঁদেরও ধাক্কা দেন বৃহন্নলা। এর পরেই জানলা থেকে হুক দিয়ে ঝোলানো ব্যাগ টেনে ট্রেন থেকে ফেলে দেন তিনি। এরই মাঝে বিরাটির বাসিন্দা ওই যাত্রীর বুড়ো আঙুলে কামড়ে তাঁকে চলন্ত ট্রেনের কামরা থেকে ঠেলে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
ট্রেন বিরাটিতে পৌঁছতেই অন্য যাত্রীদের সাহায্যে ওই মহিলা ট্রেনের উল্টো দিকের দরজা দিয়ে লাফিয়ে নামেন বলে তাঁর দাবি। আতঙ্কিত যাত্রী কিছুটা ধাতস্থ হয়ে জিআরপি-র কাছে অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁকে বারাসতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁর কথায়, “ঘটনার পর থেকে মহিলা কামরায় উঠতেই ভয় পাচ্ছি। ট্রেনযাত্রা আতঙ্কের হয়ে গিয়েছে।”
রেল সূত্রের খবর, শিয়ালদহ শাখার কমবেশি সব লোকাল ট্রেনের মহিলা কামরাতেই বৃহন্নলাদের দাপট চলে। এমনকি মেল ও এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রীদের জিনিস কেড়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটে। রেলরক্ষী বাহিনী তৎপর হলে কিছুটা কমে। কিন্তু তাতেও বৃহন্নলাদের মহিলা কামরায় ওঠা বন্ধ করা যায়নি।
শিয়ালদহ রেল পুলিশের সুপার অশেষ বিশ্বাস বলেন, “মহিলা কামরার নিরাপত্তা আরপিএফ দেখে। আমাদের মহিলা পুলিশ কম। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা তদন্ত করে দেখা হবে।” পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র বলেন, “ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। খোঁজ নিয়ে দেখছি কী হয়েছে।”