বাধা: নয়াপট্টির ওই ক্লাব ভাঙতে গেলে এই ভাবেই প্রতিরোধের মুখে পড়ে পুলিশ। —নিজস্ব চিত্র।
বেআইনি বলে ঘোষিত ক্লাবের চার পাশে ১৪৪ ধারা বলবৎ রয়েছে। তা সত্ত্বেও পর পর দু’দিন ধরে বিধাননগরের নয়াপট্টিতে ওই ক্লাবের সামনে জড়ো হয়ে সেটি ভাঙার কাজে বাধা দিয়েছেন সমর্থকেরা। নিগ্রহ করা হয়েছে পুলিশ ও পুর আধিকারিকদের। তার পরেও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। অবশ্য বিধাননগর কমিশনারেটের দাবি, অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। তবে, তারা প্রশ্ন তুলেছে ১৪৪ ধারার মেয়াদ নিয়ে।
গত ডিসেম্বরে ওই ক্লাব ঘিরে বিধাননগরের মহকুমাশাসকের আদালতে ১৪৪ ধারা জারির আবেদন করে একটি পরিবার। আবেদন মেনে নিয়ে আদালত জানিয়ে দেয়, মামলাধীন সম্পত্তির ভিতরে কিংবা আশপাশে কোনও ধরনের বেআইনি কাজকর্ম করা চলবে না। সম্পত্তি যাঁদের, তাঁদেরও বিরক্ত করা চলবে না। সেই নির্দেশ যাতে পালিত হয়, স্থানীয় থানাকেও সে দিকে নজর রাখতে বলেছিল আদালত। তা সত্ত্বেও সেই জায়গাতেই জমায়েত ঠেকানোর কোনও চেষ্টা পুলিশ করেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিধাননগরের নয়াপট্টিতে পুরপ্রতিনিধি জয়দেব নস্করের সভাপতিত্বে চলা আদিত্য স্মৃতি সঙ্ঘ নামে ওই ক্লাবটিকে ভাঙার চেষ্টার ঘটনায় মহকুমাশাসকের আদালতের নির্দেশ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে, এমনই অভিযোগ সেখানকার বাসিন্দা প্রামাণিক পরিবারের। বিধাননগর পুরসভার ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের নয়াপট্টিতে একটি জমির উপরে তৈরি হওয়া ওই ক্লাব বেআইনি বলে ঘোষণা করে কলকাতা হাই কোর্ট সেটি ভেঙে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। গত ৯ জানুয়ারি এবং গত শুক্রবার ওই ক্লাব ভাঙতে গিয়ে সমর্থকদের হাতে নিগৃহীত হয়েছেন পুলিশ ও পুরসভার আধিকারিকেরা। শুক্রবার ক্লাবের সমর্থকেরা পুলিশ ও পুর আধিকারিকদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দেন বলেও অভিযোগ।
প্রামাণিকেরা জানাচ্ছেন, তাঁদের জমিতে বেআইনি ভাবে ওই ক্লাব তৈরি হয়েছে। পরিবারের সদস্য বাপ্পা প্রামাণিকের দাবি, আদালতে প্রমাণ হয়ে গিয়েছে যে, জমি তাঁদের।
বাপ্পার কথায়, ‘‘আমাদের জমি দখল করে পুরপ্রতিনিধি জয়দেব নস্কর
ক্লাব তৈরি করেছেন। জমির
মালিকানা প্রমাণের লড়াই চলাকালীনই আমরা অকুস্থলে ১৪৪ ধারা জারির জন্য মহকুমাশাসকের আদালতে আবেদন করি। সেই আবেদন মঞ্জুর হয়। তার ১১ দিনের মাথায় বারাসত দেওয়ানি আপিল আদালত পুনরায় আমাদের জমির মালিক হিসাবে স্বীকৃতি দেয়। রাজ্য সরকার তা মেনে নেয়।
বাপ্পার ভাই গণেশ জানান, তাঁদের মামলার ভিত্তিতে হাই কোর্টের দেওয়া নির্দেশে বিধাননগর পুরসভা তদন্ত করে ক্লাবটিকে বেআইনি বলে ঘোষণা করে সেটি ভাঙার নির্দেশ দিয়েছিল। গণেশ বলেন, ‘‘জয়দেবরা হাই কোর্ট থেকে সুপ্রিম কোর্ট, সর্বত্র হারার পরে লোকজন জড়ো করে ওই জায়গা দখলে রাখছিলেন। গত ডিসেম্বরে তখনই ১৪৪ ধারার আবেদন করি। আশ্চর্য হচ্ছি যে, ১৪৪ ধারা জারি থাকা সত্ত্বেও সেখানে লোকজন ভিড় করে আগুন জ্বালাচ্ছেন, সরকারি কর্মীদের গায়ে কেরোসিন ঢেলে দিচ্ছেন। এখানে কবে আর আইনের প্রতিষ্ঠা হবে?’’
ক্লাব ভাঙতে গিয়ে হেনস্থার শিকার হওয়ায় শুক্রবার রাতে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে বিধাননগর পুরসভা। ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করা বিক্ষোভকারীদের মুখ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দেখাও গিয়েছে। তা সত্ত্বেও কাউকে গ্রেফতার করা যায়নি। বিধাননগর কমিশনারেটের ব্যাখ্যা, ৯ জানুয়ারি ১৪৪ ধারা অগ্রাহ্য করা হলেও শুক্রবার সম্ভবত তা হয়নি। কারণ, ১৪৪ ধারার মেয়াদ ফুরিয়ে গিয়েছে। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে, ওই জায়গায় ১৪৪ ধারা এখনও জারি রয়েছে কি না। তবে, শুক্রবারের ঘটনায় সরকারি আধিকারিকদের উপরে হামলাকারীদের খোঁজ চলছে।’’ যদিও আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘‘যে হেতু ১৪৪ ধারার অধীনে মামলার নিষ্পত্তি ঘটেছে, তাই ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।’’
উল্লেখ্য, এই বিধাননগর কমিশনারেটের অধীনেই বিকাশ ভবন চত্বরে ১৪৪ ধারা জারির পরে সেখানে চাকরিপ্রার্থী কিংবা অন্য যে কোনও ধরনের আন্দোলন ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়। অথচ, গত ডিসেম্বর থেকে একটি বেআইনি ক্লাবের চার পাশে ১৪৪ ধারা জারির নির্দেশ
থাকা সত্ত্বেও স্থানীয় থানা কেন তা জানতে পারল না, সেই প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। প্রামাণিক পরিবারের অভিযোগ, গত ডিসেম্বরে ১৪৪ ধারা জারির কাগজও থানায় জমা দিয়েছিল তারা। কিন্তু থানা তা গ্রহণের কোনও প্রতিলিপি দেয়নি।