যাদবপুরকে দেশভক্তির পাঠ দেবেন বিজয়বর্গীয়

যাদবপুরে স্লোগান-বিতর্কে ‘যথোপযুক্ত ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সেই সঙ্গেই উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে স্লোগান-কাণ্ডের সবিস্তার রিপোর্ট তলব করে অস্বস্তি বাড়িয়েছিল হাইকোর্ট।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০২:৫৭
Share:

শনিবার আসানসোলের কর্মিসভায়। ছবি: শৈলেন সরকার।

যাদবপুরে স্লোগান-বিতর্কে ‘যথোপযুক্ত ব্যবস্থা’ নেওয়ার হুঁশিয়ারি আগেই দিয়েছিলেন রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী। সেই সঙ্গেই উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের কাছে স্লোগান-কাণ্ডের সবিস্তার রিপোর্ট তলব করে অস্বস্তি বাড়িয়েছিল হাইকোর্ট। এ বার শনিবার আর এক কাঠি সুর চড়িয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের ‘সবক’ শেখানোর ফতোয়া জারি করলেন এ রাজ্যে বিজেপি-র কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাস বিজয়বর্গীয়।

Advertisement

এ দিন আসানসোলে এক কর্মিসভায় বিজেপি-র ওই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘‘বিধানসভা ভোটে জিতে আমরা সরকার গড়তে পারলে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-সহ যেখানেই দেশবিরোধী স্লোগান উঠবে, যারা এই স্লোগান দেবে, তাদের লাথি মেরে বার করে দেব।’’

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্লোগান নিয়ে বিজেপি-র সুর চড়ানো অবশ্য নতুন নয়। দিন কয়েক আগে, দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হুমকি ছিল— ‘‘আমরা ক্ষমতায় থাকলে যাদবপুরের ভিতরে ঢুকে কলার ধরে দেশবিরোধীদের বার করতাম।’’ আসানসোলে দলীয় কর্মীদের সামনে এ দিন সেই জিগিরই ফের তুললেন কৈলাস। বললেন— ‘‘আপ লোগ কেয়া কর রহে হ্যায় (কী করছেন আপনারা)? দেশবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে যারা, তাদের ‘সবক’ (শিক্ষা) শেখাতে পারছেন না!’’ তার পরেই তাঁর হুমকি— ‘‘যাদবপুরের ছাত্রদের এমন দেশভক্তির পাঠ শেখাব যে, যারা বিদেশের টাকা খেয়ে দেশবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে বা দেবে, আমাদের ছাত্রেরা তাদের এমন সবক শেখাবে যে জেল পর্যন্ত যাওয়ার দরকার হবে না।’’

Advertisement

যা শুনে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি অশোক রুদ্রের প্রতিক্রিয়া, ‘‘কৈলাস বিজয়বর্গীয় ওঁর রাজনৈতিক মতাদর্শ থেকেই এই সব বলেছেন।’’ এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসেরও প্রতিক্রিয়া, ‘‘এই বক্তব্য ওঁর রাজনৈতিক চিন্তার ফসল। ছাত্র আন্দোলন দাবির বৈধতার উপরে নির্ভর করে, কৈলাস বিজয়বর্গীয়ের ইচ্ছার উপরে নয়।’’

যাদবপুর নিয়ে রাজ্যপাল নীরবতা ভাঙার পরেই কপালে ভাঁজ পড়েছিল রাজ্যের বিদ্বজ্জনদের একাংশের। তাঁদের অনেকেরই মতে, দিন কয়েক আগে ঘণ্টা কয়েকের সফরে কলকাতা এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই রাজ্যপালকে যাদবপুর নিয়ে মুখ খোলার জন্য চাপ দিয়ে যান। তার পরেই ওই রাজ্যপালের মন্তব্য।

এ দিন বিজেপি নেতার চড়া সুর শুনে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য পবিত্র সরকার বলেন, ‘‘ক্ষমতায় থেকেও বিজেপি-র ক্ষমতাহীনতার ভাষা ফুটে বেরোচ্ছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রেরাই এর জবাব দেবেন।’’ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির (জুটা) সম্পাদক নীলাঞ্জনা গুপ্তের বক্তব্য, ‘‘দেশের আইন-কানুনের প্রতি আমাদের ভরসা রয়েছে। যাঁরা এ ভাবে আইন হাতে নেওয়ার কথা বলেন, তাঁদের দেশভক্তি কিংবা ভালবাসা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে।’’

দিন কয়েক আগে, যাদবপুর-কাণ্ড নিয়ে সংসদে সরব হয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। চব্বিশ ঘণ্টা কাটতে না কাটতেই মুখ খুলেছিলেন রাজ্যপাল। তবে ‘যথোপযুক্ত ব্যবস্থা’ বলতে তিনি ঠিক কী বোঝাচ্ছেন, স্পষ্ট করেননি তা। বিষয়টি তিনি সরাসরি উপাচার্যকেই জানাবেন বলে মন্তব্য করেছিলেন। তবে, স্লোগান দেওয়ার কারণে পড়ুয়াদের বিরুদ্ধে কোনও রকম ব্যবস্থা নিতে হলে তা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারক সংস্থা এগজিকিউটিভ কাউন্সিলের সুপারিশকে অগ্রাহ্য করেই নিতে হবে। কেননা দিন কয়েক আগে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতি সর্বসম্মত ভাবে কোনও পড়ুয়ার বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ দায়ের না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উপাচার্য সুরঞ্জন দাসও ছাত্রদের বাক্‌স্বাধীনতার পক্ষেই সওয়াল করেছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement