প্রতীকী ছবি।
বিয়ের পরে স্কুলের চাকরি ছেড়ে দিয়েছিলেন তরুণী। কিন্তু স্বামীর দাবি ছিল, চাকরি করতেই হবে। সেই চাপ সহ্য করতে পারেননি বছর সাতাশের অনন্যা সাঁই। গত বছরের ২৪ নভেম্বর গড়িয়ার বাড়িতে উদ্ধার হয় তাঁর ঝুলন্ত দেহ। অভিযোগ ওঠে, ব্যাঙ্ককর্মী স্বামী অর্ণবের কাছ থেকে আসা চাপ সহ্য করতে না পেরে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন অনন্যা। বাবা-মাকে লেখা সুইসাইড নোটে তার প্রমাণও পেয়েছে পুলিশ।
২০১৭ সালের ১১ মার্চ হরিদেবপুরের সজনেবেড়িয়ায় ২৫ বছরের তনুশ্রী মাকাল চার দিন ধরে লড়াই চালিয়ে হাসপাতালে মারা যান। মৃত্যুকালীন জবানবন্দিতে অগ্নিদগ্ধ ওই বধূ পুলিশকে জানান, সাত বছরের বিবাহিত জীবন কাটানোর পরেও শ্বশুরবা়ড়ির লোকজন পণের দাবিতে অত্যাচার করতেন। এমনকী, গায়ে আগুন দেওয়ার জন্যও প্ররোচনা দিয়েছিলেন তাঁরা।
একই ভাবে ফুলবাগান, মানিকতলা থানাতেও পরপর কয়েকটি অভিযোগ দায়ের হয় পণের দাবিতে বধূকে অত্যাচার এবং তার জেরে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনার। অভিযোগ দায়েরের পরে পুলিশ স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে গ্রেফতারও করছে প্রায় সব ক’টি ঘটনায়। কিন্তু তার পরেও যে পণের দাবিতে অত্যাচার কমেনি, তার প্রমাণ ফের মিলল রবিবার সকালে হরিদেবপুর থানার মতিলাল গুপ্ত রো়ডে বছর চব্বিশের সদ্য বিবাহিতা পূজা দাসের মৃত্যুর ঘটনায়। পূজার পরিবারের অভিযোগ, বিয়ের এক সপ্তাহ পর থেকেই পণের দাবিতে অত্যাচার শুরু হয় তাঁর উপরে।
কলকাতা এবং সংলগ্ন থানা এলাকাগুলিতে গত কয়েক মাসে পরপর এ ভাবে পণের দাবিতে বধূর উপরে অত্যাচারের ঘটনার একাধিক ছবি ধরা পড়েছে। সেই ছবিতেই স্পষ্ট হয়েছে, খাস কলকাতাও এ বিষয়ে পা মিলিয়ে চলছে রাজ্যের অন্যান্য অঞ্চলের
সঙ্গে। সে তথ্য মিলেছে ২০১৬-র ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)-র রিপোর্টেও। ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৬ সালে এ রাজ্যে পণপ্রথার বলি হয়েছেন ৫৩৫ জন, যার মধ্যে শুধু এ শহরেই পণের বলির হয়ে মৃত্যুর সংখ্যা ১০। পাশাপাশি, মহিলাদের উপরে অত্যাচারের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ শীর্ষে থাকলেও স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির লোকেদের হাতে বধূ নির্যাতনের ঘটনায় এ রাজ্যের স্থান প্রথমে বলে ওই রিপোর্টে প্রকাশ।
পণপ্রথা বিরোধী আইন থাকা সত্ত্বেও একের পর এক তরুণী কেন বলি হচ্ছেন, গত কয়েক মাসে এ শহরে ঘটা পরপর কিছু ঘটনা সে প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। এ বিষয়ে অবশ্য শ্বশুরবাড়ির লোকজনের পাশাপাশি মেয়ের বা়ড়ির দিকেও আঙুল উঠছে। কারণ আইন অনুযায়ী, পণ নেওয়ার পাশাপাশি পণ দেওয়াও সমান অপরাধ। পণের দাবি উঠলে মেয়েদের পরিবার কেন বারবার মাথা নত করছে, সে প্রশ্নও উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে।
মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন লীনা গঙ্গোপাধ্যায়ও মনে করেন, এ বিষয়ে মেয়ের পরিবারের সমান দায়িত্ব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘বিয়ের পরে অনেক মেয়ের পরিবারই মনে করে ‘বেড়াল পার’ করে দিয়েছে। মেয়ের জন্য তাঁদের সব দায়িত্ব শেষ। তাই পণ চেয়ে মেয়েকে চাপ দেওয়ার কথা জেনেও বহু ক্ষেত্রেই বাড়ি থেকে মেয়েদের শ্বশুরবাড়িতে থেকে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। মেয়েদের পাশে দাঁড়ান না। তার ফলেই মর্মান্তিক কিছু ঘটনা সামনে আসে। প্রথম থেকেই তাই মেয়ের পরিবারকে মেয়ের পাশে দাঁড়াতে হবে এবং আইনের সাহায্য নিয়ে এগোতে হবে।’’