উপায়: গরমে শুকিয়ে যাওয়া আটকাতে বরফের উপরে ধনেপাতা রেখেছেন বিক্রেতা। শুক্রবার, কোলে মার্কেটে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
ঝুড়িতে কয়েক বান্ডিল ধনেপাতা রেখে বিক্রি করছিলেন কোলে মার্কেটের বিক্রেতা কামাল হোসেন। কিন্তু ঝুড়িতে ধনেপাতা যত না ছিল, তার চেয়ে বেশি ছিল বরফ। জিজ্ঞাসা করায় কামাল বললেন, ‘‘এই গরমে খেত থেকে ধনেপাতা আনতে আনতে শুকিয়ে যাচ্ছে। তাই ধনেপাতা বিক্রি করতে গিয়ে কিনতে হয়েছে ৪০০ টাকার বরফও।’’
কামাল একা নন। শুক্রবার দুপুরে ওই পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা গেল, বিক্রেতাদের ঝুড়িতে যতটা আনাজ থাকার কথা, রয়েছে তার চেয়ে অনেকটাই কম। প্রবল দহনের কারণে বাজারে সেই চেনা ব্যস্ততাও নেই। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, এই গরমে মার খেয়েছে আনাজের উৎপাদন। যার প্রভাব পড়েছে জোগানে। চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় বেড়ে গিয়েছে দাম। গড়িয়াহাট বাজারের কয়েক জন বিক্রেতা জানালেন, খেতের আনাজ কার্যত পুড়ছে। চাষিরা সেই আনাজ তুলবেন কখন?
গরমের অন্যতম প্রধান আনাজ পটল, ঢেঁড়স, ঝিঙে, লাউ— দাম বেড়েছে সবেরই। বিক্রেতারা জানাচ্ছেন, সাধারণত এই সময়ে পটল যেখানে কেজি প্রতি ২০-৩০ টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা, সেখানে তার দাম ছুঁয়েছে ৫০-৬০ টাকা, কোথাও কোথাও ৭০। ঝিঙে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকায়। গরম পড়ার আগে এক-একটি লাউ যেখানে ২০-২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল, এখন সেই দাম প্রায় দ্বিগুণ। দক্ষিণবঙ্গের বেশির ভাগ জায়গায় আলু ২২ থেকে ২৫ টাকা কেজি। জ্যোতি আলু ২৮, চন্দ্রমুখী ৩৫ টাকা। এক সপ্তাহে ১০০ গ্রাম রসুনের দাম ১৫-২০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৩০-৩৫ টাকা।
গড়িয়াহাট বাজারের বাজার সমিতির সম্পাদক দিলীপ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমাদের বাজারের আনাজ মূলত আসে শিয়ালদহ পাইকারি বাজার, ডায়মন্ড হারবার, ক্যানিং থেকে। তীব্র গরম পড়ার কিছু দিন পর থেকেই আনাজের জোগান কমতে শুরু করেছিল। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে তো আনাজের উৎপাদন আরও মার খাবে।’’ নদিয়ার এক আলু ব্যবসায়ী বাপন সাহা বলেন, “সব ক্ষেত্রেই জোগানের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলে দামের এই ঊর্ধ্বগতি।’’
আলু ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, এ বার আলু ওঠার পরে বাজারে যখন যাচ্ছিল, তখন দাম কিছুটা কম ছিল। কিন্তু পরে বেশি দাম পাওয়ার আশায় চাষি ও ব্যবসায়ীরা হিমঘরে আলু মজুত করায় খোলা বাজারে ঘাটতি তৈরি হয়েছে।
রাজারহাট থেকে কোলে মার্কেটে আনাজ বিক্রি করতে আসেন কয়েক জন চাষি। তাঁদের কথায়, ‘‘বিকেলে খেতে আনাজের গোড়ায় জল দিতে গিয়েছিলাম। দেখি, জল দেওয়ার প্রায় সঙ্গে সঙ্গে মাটি শুকিয়ে গেল। গাছের গোড়াই জল পাচ্ছে না। মাটির গভীরে জল যাবে কী ভাবে?’’
‘চাষি ভেন্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর প্রেসিডেন্ট তথা রাজ্য সরকারের টাস্ক ফোর্সের সদস্য কমল দে বলেন, ‘‘আগে এক বিঘা জমিতে এক ঘণ্টা শ্যালো পাম্প চালালে পুরো খেত জলে ভরে যেত। এখন সেই পাম্পই চালাতে হচ্ছে তিন থেকে চার ঘণ্টা। তা-ও সে ভাবে মাটি ভিজছে না। এক সপ্তাহের মধ্যে বৃষ্টি না হলে রোদে আনাজ আরও শুকোবে। ফলে, আরও কমবে জোগান।’’