বাড়ছে হামলা, বাম মিছিলে প্রতিরোধের ডাক

পুরভোটের দিন যত কাছে আসছে, সন্ত্রাস নিয়ে আবহ তত উত্তপ্ত হচ্ছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টার অভিযোগে সরব হচ্ছে বিরোধীরা। সেই সঙ্গেই বহাল থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পুরভোট করানোর দাবি।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১১
Share:

মহাজাতি সদন থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত বাম মিছিল। মঙ্গলবার। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।

পুরভোটের দিন যত কাছে আসছে, সন্ত্রাস নিয়ে আবহ তত উত্তপ্ত হচ্ছে। শাসক দলের বিরুদ্ধে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করার চেষ্টার অভিযোগে সরব হচ্ছে বিরোধীরা। সেই সঙ্গেই বহাল থাকছে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পুরভোট করানোর দাবি।

Advertisement

কলকাতার উত্তর শহরতলি এবং শহরের বন্দর এলাকা, সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে এই দুই অঞ্চল থেকে বিরোধীদের প্রচারের হামলা চালানোর অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। উত্তরের কামারহাটিতে আক্রান্ত হয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায়, সিটু নেতা সুভাষ মুখোপাধ্যায়, স্থানীয় নেতা নন্দলাল বসু, এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাসেরা। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, বুধবার ১০ ঘণ্টার কামারহাটি বন্‌ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম। যাকে সমর্থন জানিয়েছে সিপিআই (এম-এল) লিবারেশনের মতো অন্য বামেরাও। বেলঘরিয়ায় আজই ঘটনার প্রতিবাদে সভা করতে যাচ্ছেন বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু এবং সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। একটি ঘটনার জেরে পুরভোটের প্রার্থ়ীদের পুলিশ আটক করার প্রতিবাদে আজ মালদহেও ১২ ঘণ্টার বন্‌ধ ডেকেছে সিপিএম।

তার আগে এ দিনই কলকাতার রাজপথে মহাজাতি সদন থেকে রানি রাসমণি অ্যাভিনিউ পর্যন্ত বামফ্রন্টের ‘মহামিছিলে’ ভিড় হয়েছিল চোখে পড়ার মতো। হামলার মুখে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার দিকে আঙুল তুলে যে মিছিলে আওয়াজ উঠেছে, ‘পুলিশ তুমি উর্দি ছাড়ো, তৃণমূলের ঝান্ডা ধরো’! কেন্দ্রীয় সরকারের জমি অধিগ্রহণ অধ্যাদেশ-সহ একগুচ্ছ দাবি নিয়ে ওই মিছিলের অন্যতম প্রতিপাদ্যই ছিল পুরভোটের মুখে সন্ত্রাসের প্রতিবাদ। বিমানবাবুদের এই সক্রিয় চেহারায় দেখে তৃণমূল নেতৃত্ব পাল্টা দাবি করেছেন, বামেরাই বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে।

Advertisement

বন্দরের গার্ডেনরিচ এলাকায় এ দিন প্রচার চলাকালীন কংগ্রেস প্রার্থীর মিছিলেও বোমাবাজির অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বোমায় জখম হয়েছেন দু’জন কংগ্রেস কর্মী। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ১৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কংগ্রেস প্রার্থী মমতাজ আলি শ’তিনেক সমর্থক নিয়ে মুদিয়ালি স্কুল এলাকা থেকে মিছিল করে হরিমোহন কলেজের দিকে আসছিলেন। আচমকাই দু’টি ক্যাম্বিস বলের আকারের বোমা অনেক উঁচু থেকে মিছিলের সামনে এসে পড়ে। বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়। ছত্রভঙ্গ হয়ে যায় কংগ্রেসে মিছিল। প্রায় আধ ঘণ্টা পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

ইমরান খান ও মহম্মদ জামসেদ নামে দুই কংগ্রেস কর্মীর চিকিৎসার পরে গার্ডেনরিচ থানায় তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। বন্দরের বিধায়ক তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ (ববি) হাকিম অবশ্য ঘটনাটিকে কংগ্রেসেরই ‘সাজানো ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন! মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘স্থানীয় কংগ্রেস নেতা মোক্তার আহমেদ নিজেদের মিছিলে বোমা মেরেছেন। ওই এলাকায় কংগ্রেস জনপ্রিয়তা হারিয়েছে। নিজেদের প্রচারে আনতেই এই চক্রান্ত!’’ যার প্রেক্ষিতে মোক্তারের পাল্টা কটাক্ষ,‘‘বন্দর এলাকায় সব সময় মোক্তারই বোমা ছোড়ে। আর মন্ত্রীর অনুগামী তৃণমূল কর্মীরা মন্দিরে গিয়ে ঘণ্টা বাজায়!’’

কংগ্রেস নেতা মানস ভুঁইয়া অভিযোগ করেছেন, গার্ডেনরিচ কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। রাজ্যের সর্বত্রই শাসক দল ভোটকে প্রহসনে পরিণত করতে চাইছে। কাটোয়ার বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন জায়গায় আক্রান্ত কংগ্রেস প্রার্থী ও কর্মীদের নিয়ে শুক্রবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনে বিচার চাইতে যাবেন মানসবাবুরা।

কলকাতায় সিপিআইয়ের মঞ্জুকুমার মজুমদার, আরএসপি-র সুকুমার ঘোষ, ফরওয়ার্ড ব্লকের হাফিজ আলি সৈরানিদের নিয়ে মিছিল করে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমানবাবু এ দিনই অভিযোগ করেছেন, ‘‘তৃণমূল গণতন্ত্রের টুঁটি টিপে ধরেছে! বেলঘরিয়ার নন্দননগরে পুলিশের সামনেই সিপিএম নেতাদের মারধর করা হয়েছে।’’ কী ভাবে মানসবাবু, সুভাষবাবুদের মারধর করা হয়েছে, তার উল্লেখ করে বিমানবাবু বলেন, ‘‘তৃণমূল বলছে, পুর-নির্বাচনে বামপন্থীরা অপ্রসঙ্গিক। যদি বামপন্থীরা অপ্রাসঙ্গিকই হয়, তা হলে তাদের উপরে হামলা আক্রমণ হচ্ছে কেন? তৃণমূলকে এর জবাব দিতে হবে।’’ তৃণমূলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বারবার প্রতিবাদ করেও কাজ না হলে প্রতিরোধ করারই ডাক দিয়েছেন বিমানবাবু। হাসপাতালে আহতদের সঙ্গেও এ দিন দেখা করতে যান বিমানবাবুরা। তার আগে রবীন দেব, সুজন চক্রবর্তী, নেপালদেব ভট্টাচার্য-সহ সিপিএম নেতারা স্থানীয় ভাবে প্রতিবাদ মিছিল করে বেলঘরিয়া থানায় দাবিপত্র জমা দেন।

নানা দিক থেকে অভিযোগের মুখে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ‘‘নখদন্তহীন সূর্যকান্ত মিশ্র দলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পর থেকেই কর্মীদের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নির্দেশ দিচ্ছেন। বিশৃঙ্খলা করে কলকাতাকে অশান্ত করার এই চেষ্টা মানুষ মেনে নেবে না।’’ বিশৃঙ্খলা তৈরি করলে প্রশাসন তার ব্যবস্থা নেবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন পার্থবাবু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement