—নিজস্ব চিত্র।
ফিরহাদ জানিয়েছেন, কেএমআরসিএল-এর কাজের সময় বৌবাজারে নিয়মিত ভূমি পরীক্ষা করা হবে। সেই কাজে নজরদারি করতে হবে ওই কর্তৃপক্ষকে।
ফিরহাদের দাবি, মেট্রোর কাজের জন্য বৌবাজারের নিকাশি ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা মেনে নিয়েছে কেএমআরসিএল। কী কী ক্ষতি হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আসন্ন বর্ষায় পাম্প ইত্যাদি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
কেএমআরসিএল-এর থেকে ভূমি পরীক্ষা, ফাটলধরা বাড়িগুলির স্বাস্থ্যপরীক্ষা, সমীক্ষার ডিজাইন-সহ একাধিক রিপোর্ট চেয়েছে কলকাতা পুরসভা। বৌবাজার নিয়ে গঠিত কলকাতা পুরসভার দল ওই রিপোর্টগুলির উপর ভিত্তি করে একটি বিশ্লেষণী রিপোর্ট তৈরি করবে। কলকাতা পুরসভার ওই দলে রয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দু’জন অধ্যাপক-সহ পুরসভার বিল্ডিং,সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের আধিকারিকেরা।
বৌবাজারে কেন পর পর বাড়িতে ধস? ফিরহাদের ক্ষোভের মুখে পড়ল কেএমআরসিএল। ফিরহাদ বলেন, ‘‘এক বার বিপর্যয়ের পরেও কী ভাবে আবারও দুর্ঘটনা হয়? সাবধানতা অবলম্বন করা হয়নি কি? কেএমআরসিএলকে প্রশ্ন ফিরহাদের। যদিও সাবধানতা অবলম্বন করেই বৌবাজারে কাজ করা হয়েছে বলে দাবি কেএমআরসিএল কর্তৃপক্ষের।
এখনও বেশ কিছু মানুষ বৌবাজারে জোর করে থেকে গিয়েছেন। দাবি করলেন ফিরহাদ। তিনি আরও বলেন, বৌবাজারে মাটি পরীক্ষা করানো হবে। শুক্রবার সন্ধ্যায় সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান তিনি।
বৌবাজারের আরও ৮-৯টি বাড়ি থাকার উপযুক্ত নয়। সাংবাদিক বৈঠকে বললেন ফিরহাদ হাকিম। শুক্রবার বৌবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠকে পুরকর্তারা ছাড়াও ছিলেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ এবং কেএমআরসিএল-এর কর্তারা। তাঁদের সঙ্গে বৈঠক করেন ফিরহাদ।
মেট্রোর কাজে দেরি হওয়ায় যাদের ওখানে বাড়ি তৈরি হওয়ার কথা ছিল, তাদের দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে আগাম জানিয়েছেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
বৌবাজার চত্বরে মেট্রো রেলের কাজ শেষ হতে অন্তত তিন মাস সময় বেশি লাগবে বলে জানালেন কেএমআরসিএল-এর প্ল্যানিং এন্ড প্রোজেক্ট ডিরেক্টর এন সি কারনালি। অগস্ট-সেপ্টেম্বর নাগাদ শেষ হবে বলে মনে করা হচ্ছিল। এখন সেটা ডিসেম্বর হয়ে যেতে পারে। মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বর্ষা আসছে। প্রয়োজনে কাজ বন্ধ রাখতেও হতে পারে। তাতে আরও দেরি হবে কাজে।
দুটি পৃথক কমিটি গঠন করা হবে বৌবাজারের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য। সুড়ঙ্গ থেকে কেন জল ঢুকল তা ক্ষতিয়ে দেখবেন প্রথম কমিটির বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয় কমিটি দেখবে ফাটলের ফলে কতগুলি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর পাশাপাশি, দ্বিতীয় কমিটির বিশেষজ্ঞদের উপর বাড়তি দায়িত্ব থাকবে। তাঁরা খতিয়ে দেখবেন বৌবাজারের দুর্গা পিতুরি লেনের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি গুলি ভাঙতে হবে নাকি মেরামত করে নিলেই চলবে।
বৌবাজারের পরিস্থিতি নিয়ে আজ পুরসভার সঙ্গে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষের বৈঠক। বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন বৌবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির বাসিন্দাদের প্রতিনিধিও।
মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গে জল ঢোকা নিয়ন্ত্রণ করতে বৃহস্পতিবার রাতেই শুরু হয় কাজ। মেট্রোর তরফে এক আধিকারিক আশ্বস্ত করে জানিয়েছেন, ওই সুড়ঙ্গেপথে আর জল ঢোকার আশঙ্কা নেই। পুরসভার তরফেও জানানো হয়েছে, জল যাতে আর না ঢোকে তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
বৌবাজার চত্বরে মেট্রো রেলের খোঁড়া সুড়ঙ্গ পথে জল ঢুকতে শুরু করায় বিপত্তির সূত্রপাত দুর্গা পিতুরি লেনে। ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশ কয়েকটি বাড়ি। শুক্রবার মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ওই সুড়ঙ্গপথে জল ঢোকা বন্ধ করা গিয়ছে।
বুধবার রাতে বৌবাজারেই পর পর বাড়িতে ফাটলের ঘটনা আড়াই বছর আগের সেই দুঃসহ স্মৃতি ফের মনে করিয়ে দিল ভুক্তভোগীদের। পুরনো পাড়ায় আর ফেরা হবে কি না, সেটাই এখন ভাবাচ্ছে বৌবাজারের ‘ঘরছাড়া’ পরিবারগুলিকে। আড়াই বছর আগে বাড়িছাড়া কয়েকটি পরিবারকে পরে ফেরানো হলেও অধিকাংশই এখনও রয়েছেন মেট্রোর তরফে দেওয়া ভাড়া বাড়িতে।
এই সেই পুরনো বৌবাজার, যেখানে তিন বছর আগে মেট্রো রেলের সুড়ঙ্গ খোঁড়ার সময়ে বাড়ি ভাঙার আতঙ্কে বিনিদ্র রাত কাটিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দারা। বৃহস্পতিবার ফের বাড়িতে ফাটল দেখা দিতে শুরু করা আতঙ্ক পড়েন বাসিন্দারা। অনেক বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র থাকতে শুরু করেছেন। তাঁদের মনেও রয়েছে ফেলে আসা বাড়ি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা।