ধুন্ধুমার: রেলকর্মী স্পেশ্যালে উঠতে বাধা দেওয়ার পরে রেলপুলিশের সঙ্গে হাতাহাতি সাধারণ যাত্রীদের। শনিবার, হাওড়া স্টেশনে। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার
রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট বিশেষ ট্রেনে সাধারণ যাত্রীদের উঠতে বাধা দেওয়ায় শনিবার চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হল হাওড়া স্টেশনে। অভিযোগ, আরপিএফের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন যাত্রীরা। পরিস্থিতি সামলাতে আরপিএফ জওয়ানদের দফায় দফায় লাঠি চালাতে হয়। বিক্ষোভকারী যাত্রীদের অভিযোগ, বিনা কারণে আরপিএফ লাঠি চালিয়েছে। শুক্রবার রাতেও একই কারণে যাত্রী বিক্ষোভ হয়। রেলের বক্তব্য, শুক্র ও শনিবারের যাত্রী বিক্ষোভের কথা জানিয়ে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে রেলপুলিশের ডিজি ও হাওড়ার পুলিশ কমিশনারকে জানানো হয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে লোকাল ট্রেন চালু না হওয়ায় অনেক সাধারণ যাত্রীই প্রায় প্রতিদিন উঠে পড়ছেন রেলকর্মীদের জন্য নির্দিষ্ট ট্রেনে। রেলের তরফে বার বার বলার পরেও যাত্রীদের একাংশ নিয়ম না মানায় প্রায়ই গোলমাল হচ্ছে। শনিবার সন্ধ্যায় কয়েকশো পুরুষ ও মহিলা যাত্রী হাওড়া স্টেশনে আসেন স্পেশ্যাল ট্রেন ধরতে। তখনই তাঁদের আটকানো হয়। এ নিয়ে প্রথমে বচসা, পরে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি চলে। যাত্রীদের অভিযোগ, আরপিএফ লাঠি চালাতে শুরু করে। যদিও রেলের তরফে অভিযোগ অস্বীকার করে বলা হয়েছে এ দিন হাওড়া স্টেশনের বাইরে রেলপুলিশ বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয়।
হাওড়ার ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার ইশাক খান বলেন, “আইনশৃঙ্খলার সমস্যার কথা রেলের তরফে প্রশাসনিক আধিকারিকদের জানানো হয়েছে।” এ দিন তিনি জানান, স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে হাওড়া থেকে দিনে ৪৫৫টি ট্রেন চলে। প্রায় সাড়ে চার-পাঁচ লক্ষ যাত্রী যাতায়াত করেন। করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের নির্দেশিকা ছাড়া সাধারণের জন্য রেলের পরিষেবা খুলে দেওয়া সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন: ‘রাজনৈতিক চাপ সামলে কি ঠেকানো যাবে বাজি-দূষণ’
আরও পড়ুন: গয়না কিনতে গিয়ে জাল নোট দিয়ে গ্রেফতার
রেলকর্তাদের দাবি, সাধারণ যাত্রীদের স্পেশ্যাল ট্রেনে উঠতে চাওয়া নিয়ে যে সমস্যা হচ্ছে তা জানিয়ে পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজারের অফিস থেকে দু’দফায় রাজ্যকে চিঠি লেখা হয়েছে। ফোনেও প্রশাসনিক কর্তাদের সঙ্গে একাধিক বার কথা হয়েছে। তবে রাজ্য কিছু জানায়নি। এ দিনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার সুনীত শর্মাকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন, দিনের নির্দিষ্ট সময়ে সীমিত সংখ্যক ট্রেন চালানো নিয়ে আলোচনার বিষয়ে রাজ্য চিন্তাভাবনা করছে।
এ দিন রেলকর্মীদের বিশেষ ট্রেন ধরতে আসা যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন রাজ্য পুলিশের কয়েক জন মহিলা পুলিশকর্মী। তাঁদের অভিযোগ, পরিচয়পত্র দেখানোর পরেও তাঁদের উপরে লাঠি চালান আরপিএফ জওয়ানরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বর্ধমানের মগরার বাসিন্দা, রাজ্য পুলিশের এক মহিলা কর্মী বলেন, ‘‘প্রতিদিনই ডিউটিতে যেতে হয়। এ দিনও ডিউটি করে ট্রেন ধরতে এসে এক ধারে দাঁড়িয়ে ছিলাম। আরপিএফ আমার হাতে-পিঠে লাঠি মেরেছে।’’
একই অভিযোগ কোভিড-চিকিৎসায় যুক্ত সরকারি হাসপাতালের কর্মীদের। মণিদান মল্লিক নামে কলকাতা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের এক কর্মী বলেন, “হাতজোড় করে বলেছিলাম, তিন দিন ধরে টানা কোভিড আক্রান্তদের সেবা করেছি। বাড়ি ফিরতে পারিনি। আমাদের ট্রেনে উঠতে দেওয়া হোক। এর পরেও ওরা লাঠি চালায়।’’
অভিযোগ, প্রায় এক ঘণ্টা ধরে স্টেশন চত্বরে যাত্রী বিক্ষোভ চললেও পূর্ব রেলের কোনও পদস্থ কর্তা ঘটনাস্থলে যাননি। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আরপিএফ লাঠি চালিয়েছে, এই অভিযোগ ঠিক নয়। কোভিড প্রোটোকল মেনে আরপিএফ শুধুমাত্র স্পেশ্যাল ট্রেনে উঠতে বাধা দিয়েছে।’’
এ দিকে যাত্রীদের উপরে লাঠি চালানোর ঘটনায় প্রতিবাদ করেছে এপিডিআর। তাদের তরফে রঞ্জিত শূর বলেন, “হাওড়ায় লাঠি চালানোর নির্দেশ যাঁরা দিয়েছিলেন, সেই দোষীদের চিহ্নিত করে শাস্তি দিতে হবে। যাতে এর পুনরাবৃত্তি না হয়, রেল তা নিশ্চিত করুক।’’ সেই সঙ্গে তাঁর দাবি, অবিলম্বে রাজ্যে লোকাল ট্রেন চালাতে রাজ্য সরকার উদ্যোগী হোক।