এ বার মহালয়ার ঠিক আগে মণ্ডপে মণ্ডপে অভিনব আগমনি আসরটি বসছে ইউনেস্কোর আগ্রহেই। ফাইল ছবি
প্রাক্-পুজো উদ্যাপনে তাঁরা আসছেন, শহরের মঞ্চে বলে গিয়েছেন এ দেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি এরিক ফল্ট। ‘দুর্গাপুজো শিল্প’ মেলে ধরায় তাঁদের প্রথম পদক্ষেপটি মহালয়ার আগেই দেখতে চলেছে কলকাতা।
নিছকই ধর্মীয় আচার নয়। কলকাতার দুর্গাপুজোর একটি চলমান শিল্প প্রদর্শশালা হয়ে ওঠার দিকটিকেই ইউনেস্কো স্বীকৃতি দিয়েছে। এ শহরে ইউনেস্কোর সঙ্গে গাঁটছড়ায় পুজো বিষয়ক প্রথম অনুষ্ঠানটি তাই ‘দুর্গাপূজা আর্ট প্রিভিউ শো’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর পুজো উদ্বোধনের ব্যস্ততায় এমনিতে মহালয়া থেকেই বাঙালির ঠাকুর দেখা শুরু হয়ে যায়। এ বার মহালয়ার ঠিক আগে মণ্ডপে মণ্ডপে অভিনব আগমনি আসরটি বসছে ইউনেস্কোর আগ্রহেই। উৎসব উপদেষ্টা, শিল্পী, শিল্পরসিক, স্থপতিদের একটি নতুন মঞ্চ ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং ইউনেস্কোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিকল্পনাটির শরিক। সহযোগিতা করছে রাজ্য সরকার।
ইউনেস্কোর কর্তা এরিক ফল্ট ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে তাঁদের ঐতিহ্য বিষয়ক কনভেনশনের সদস্য বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিদের নিয়ে কলকাতায় আসার আশ্বাস দিয়েছেন। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ, কোচির শিল্পরসিক অতিথিরাও আসছেন শহরে। মুখ্যমন্ত্রী রেড রোডের মঞ্চে ইউনেস্কোর অতিথিদের স্বাগত জানান। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “বিদেশি অতিথিরাও নিজেদের উদ্যোগেই আসতে আগ্রহী। তাঁদের সহযোগিতায় আমরা তৈরি।”
তবে এ যাত্রায় লক্ষ রাখা হচ্ছে, পুজোর আগে শহরে বিদেশি অতিথিদের কর্মকাণ্ডে যান চলাচল থেকে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা যেন ছন্দ না হারায়। এই উদ্যোগটির অন্যতম আহ্বায়ক, উৎসব উপদেষ্টা ধ্রুবজ্যোতি বসু বলছেন, “আমরা মহালয়ার ঠিক আগে ২২, ২৩, ২৪ সেপ্টেম্বর নৈশ প্রদর্শনীর আয়োজন করছি। ২০২২-এ পুজোর এই নতুন অধ্যায় উপলক্ষে ২২টি পুজোকে বেছে নেওয়া হয়েছে। পুজোর আচার, প্রতিমায় প্রাণ-প্রতিষ্ঠার ঢের আগে পুজোকে শিল্প হিসেবে দেখতেই অতিথিরা আসবেন। রাতের আলোয় মণ্ডপে গণপরিসরের শিল্পকে (ইনস্টলেশন আর্ট) দুর্লভ ভঙ্গিতে মেলে ধরা হবে।” তাঁর কথায়, “পুজোর ভিড় শুরুর আগেই বিদেশি, বিশিষ্ট অতিথিদের ফাঁকায় ফাঁকায় মণ্ডপ, প্রতিমার শিল্প দেখাতে চাই। এর মাধ্যমে পরে রাজ্যে পর্যটনেরও নানা দিক খুলে যাবে।” রাজ্যের পর্যটন-কর্তারাও মনে করেন, পুজোর শিল্পসম্ভারের প্রদর্শনীটি পর্যটনের প্রসারে সাহায্য করবে।
এই মুহূর্তে সারা বিশ্বে পরিচিত ‘কোচি বিয়েনাল’ বা কোচির গ্যালারিভিত্তিক শিল্প প্রদর্শনীর আয়োজকেরাও এই প্রাক্-প্রদর্শনীতে কলকাতায় আসবেন। দুর্গাপুজো ঘিরে নানা উদ্যোগে তাঁদেরও শামিল করার কথা চলছে। তবে শহরের অতিথিদের জন্যও ফাঁকায় ফাঁকায় পুজো-শিল্প দেখার সুযোগ থাকবে। পুজো আর্ট প্রিভিউ শোয়ের শরিকেরা বলছেন, নির্দিষ্ট কিউআর কোডের মাধ্যমেই মণ্ডপে ঢোকা যাবে। আপাতত বাছাই অতিথিরা এই সুযোগ পাবেন। মাসআর্ট.ইন বলে একটি ওয়েবসাইটে নির্দিষ্ট সময়ে এ বিষয়ে ঘোষণা হবে। বিভিন্ন মণ্ডপে আলাদা আলোর থিম থাকবে। প্রাক্-প্রদর্শনীর রুটে ইচ্ছে মতো ওঠানামা করা যাবে, এমন বাসে (‘হপ অন, হপ অফ’) কিউআর কোড দেখিয়ে ওঠা যাবে। এ ছাড়া, দু’টি বনেদি বাড়িতে এবং দু’টি সাবেক বারোয়ারি মণ্ডপে পুজোর নির্মাণপর্বও দেখবেন ইউনেস্কোর অতিথিরা। ইনট্যানজিবল হেরিটেজ কনভেনশনের কর্তা টিম কার্টিস শুক্রবার পিংলায় পটচিত্র দেখতে গিয়েছিলেন। আজ, শনিবার কলকাতায় কয়েকটি মণ্ডপের প্রস্তুতি দেখতে পারেন তিনি।