মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি। ছবি সংগৃহীত
ইউনেস্কো-স্বীকৃতির আবহে দুর্গাপুজোকে রাজনীতির আওতার বাইরে রাখতে বললেন কেন্দ্রের সংস্কৃতি প্রতি মন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি। কিন্তু তিনি নিজেই পুজো নিয়ে রাজনীতি করছেন বলে রাজ্যের শাসক দলের নেতাদের মনে হয়েছে।
শনিবার ভারতীয় জাদুঘরের দুর্গাপুজোর ইউনেস্কো স্বীকৃতির জন্য একটি অনুষ্ঠানে ছিলেন মীনাক্ষী। দুর্গাপুজোর কৃতিত্ব নিয়ে ক্ষুদ্র রাজনীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘সব বিষয়ে আপন পর ভেদ করা মানসিক ক্ষুদ্রতার লক্ষণ!’’ ‘বসুধৈব কুটুম্বকম’ শ্লোকও আওড়ান মীনাক্ষী। সেই সঙ্গে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের মন্ত্রী প্রাক-পুজো কলকাতায় দাঁড়িয়ে বলেছেন, ‘‘এটা প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতা (লার্জ হার্ট), গুজরাতি হয়েও তিনি কলকাতার স্বীকৃতির জন্য চাপ দিয়েছেন।’’
পরে অবশ্য কেন্দ্রের বিদেশ এবং সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী ব্যাখ্যা দেন, ‘‘দুর্গাপুজোর এই স্বীকৃতি সব ভারতীয়ের কাছেই আনন্দের। এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে কলকাতা অন্য কারও থেকে কম আপন নয়।’’ ভারতীয় জাদুঘরের দুর্গাপুজোর ইউনেস্কো স্বীকৃতির উদ্যাপন অনুষ্ঠানে এ দিন ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের নাচ দেখেন মীনাক্ষী। এই শহরের দুর্গাপুজোর অনন্য চরিত্র নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ইউনেস্কোর কাছে আর্জিতে প্রথমে কলকাতার নাম ছিল না। উপদেষ্টাদের পরামর্শ মতো দুর্গাপুজোর সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট জায়গার নাম দরকার হয়। তাই পরে কলকাতার নাম যোগ দেয়। এটা কনভিনিয়েন্সের (সুবিধা বা স্বাচ্ছন্দ্য) জন্য, সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতাও রয়েছে।’’
পরে মীনাক্ষীর মন্তব্য প্রসঙ্গে তৃণমূলের মুখপাত্র সুখেন্দুশেখর রায় বলেন, ‘‘দেশের বহুমাত্রিক সংস্কৃতির ইতিহাস বিজেপির কেউ জানেন না। বাংলা সহ গোটা দেশে দুর্গাপুজোয় এখন সব ধর্ম, সব প্রদেশের মানুষ জড়িয়ে। মানুষের তৈরি ইতিহাসের কৃতিত্ব যাঁরা দাবি করছেন তাঁদের মনে করাব, কয়েক মাস আগে বিধানসভা ভোটের সময় রাজ্যে তাঁরাই এসে তা নিয়ে মিথ্যাচার করে গিয়েছিলেন। এখানে পুজো হয় না, পুজোয় বাধা দেওয়া হয়, যাঁরা বলেছিলেন, তাঁরাই আজ সাফল্যের দাবি করছেন!’’
এ দিন কলকাতায় ভারতীয় জাদুঘরে ‘দুর্গা: দ্য ডিভাইন পাওয়ার’-শীর্ষক একটি প্রদর্শনীর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনে আসেন কেন্দ্রের বিদেশ এবং সংস্কৃতি দফতরের প্রতিমন্ত্রী মীনাক্ষী লেখি। একই সময়ে দুর্গাপুজোর ইউনেস্কো-স্বীকৃতির উদ্যাপন অনুষ্ঠানও জাদুঘরের উঠোনে বসে দেখেন তিনি। সেখানেই দুর্গাপুজোর ইউনেস্কো-স্বীকৃতির পিছনে কেন্দ্রের ভূমিকা ফের ফলাও করে তুলে ধরেন মীনাক্ষী। তাঁর বক্তব্য, ‘‘২০১২ এবং ২০১৮য় দু’বার দুর্গাপুজোর জন্য ইউনেস্কো-স্বীকৃতির আর্জি জানানো হলেও তা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। এর পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই সবাই এক হয়ে এই স্বীকৃতি অর্জনের চেষ্টা করেছেন। শিক্ষা মন্ত্রক, সংস্কৃতি মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক— সবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’’ মীনাক্ষী বলেন, ‘‘বিভিন্ন দেশে ভারতের রাষ্ট্রদূতেরা, কলকাতার গবেষক, তাঁদের সহযোগীরা ইউনেস্কোর কাছে আবেদনে শামিল হয়েছিলেন।’’
মীনাক্ষী আরও বলেন, ‘‘এই পুজো হল মাতৃশক্তি আরাধনার পরম্পরার অঙ্গ। জাদুঘরের প্রদর্শনীতে দেখা যাচ্ছে খ্রিস্টের জন্মের ২০ হাজার বছর আগেও তার নমুনা ছিল। এবং আমরা যা অখণ্ড ভারতের অংশ বলে মনে করি, সেই পাকিস্তানেও এই দেবীমূর্তির নিদর্শন তৈরি রয়েছে।’’ তবে মহালয়ার আগের দিন কলকাতায় এসে চোরবাগানের শীলবাড়িতে ঘুরলেও কলকাতার দুর্গাপুজোর বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলাদা করে তিনি কিছু বলেননি। দুর্গাপুজোর উৎসবের ধর্মের ঊর্ধ্বে ওঠা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে অবশ্য বলেন, ‘‘বিভিন্ন ধর্মের কারিগর, শিল্পীরা দুর্গাপুজোয় জড়িত। এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি!’’