বন্দে ভারত উড়ানের দুই যাত্রী। কলকাতা বিমানবন্দরে। ফাইল চিত্র
যাত্রী প্রায় নেই বললেই চলে। সংখ্যাটা এতই কম যে, জ্বালানির খরচটুকুও উঠছে না। তাই রাজ্য সরকার চাইলেও কলকাতা থেকে লন্ডনের সরাসরি উড়ানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।দূরপাল্লার উড়ানের ক্ষেত্রে সাধারণ শ্রেণির পাশাপাশি বিজ়নেস শ্রেণির আসনেও পর্যাপ্ত যাত্রী প্রয়োজন হয়। না-হলে উড়ান চালানোর খরচ তোলাটা মুশকিল হয়ে পড়ে। কলকাতার ক্ষেত্রে সেই পুরনো যুক্তিই আবার উঠে আসছে।
এই শহর থেকে ইউরোপ বা আমেরিকায় যাওয়ার বিজ়নেস শ্রেণির যাত্রী মেলে না— ঠিক এই যুক্তিতেই এক সময়ে কলকাতা-ফ্রাঙ্কফুর্ট উড়ান তুলে নিয়েছিল জার্মান সংস্থা লুফৎহানসা। লন্ডনের সরাসরি উড়ান তুলে নিয়েছিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ়।
কেন্দ্রীয় সরকারের ‘বন্দে ভারত’ প্রকল্পে এয়ার ইন্ডিয়া এখন দেশের আটটি শহর থেকে লন্ডনের সরাসরি উড়ান চালাচ্ছে। ওই উড়ান সংস্থা সূত্রের খবর, দেশের সেই আটটি শহরের মধ্যে কলকাতা থেকে যাত্রীর সংখ্যা একেবারে কমের দিকে। বিজ়নেস শ্রেণিতে তো বটেই, সাধারণ শ্রেণিতেও যাত্রী হচ্ছে না।
বর্তমানে কলকাতা থেকে সপ্তাহে দু’দিন লন্ডনের উড়ান যাতায়াত করছে। প্রতি বুধবার মধ্যরাতে আসছে, বৃহস্পতিবার ভোরে লন্ডন ফিরে যাচ্ছে। আবার শনিবার মধ্যরাতে এসে ফিরছে রবিবার ভোরে। যাত্রী কম হওয়ায় নভেম্বর থেকে সপ্তাহে এক দিন করে ওই উড়ান চলবে বলে জানিয়েছে এয়ার ইন্ডিয়া। শনিবার মধ্যরাতে এসে তা রবিবার ভোরে ফিরে যাবে।
আরও পড়ুন: সরকারি বাজার অনিশ্চিত, নিষিদ্ধ বাজির রমরমার শঙ্কা
এই মুহূর্তে আটটি শহর থেকে লন্ডনে যেতে ‘বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার’ বিমান চালাচ্ছে এয়ার ইন্ডিয়া। তাতে ২১৮টি সাধারণ শ্রেণির এবং ১৮টি বিজ়নেস শ্রেণির আসন রয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গত চার দিনে লন্ডন থেকে এ শহরে এসেছেন যথাক্রমে ২৫, ১২৫, ৭৮ এবং ৯২ জন। কলকাতা থেকে গিয়েছেন ৪৭, ৬০, ৩৫ এবং ৪৭ জন।
আরও পড়ুন: ঠেকে শিখে ‘দায়িত্ববোধের’ কালীপুজো
উড়ানে ওঠার আগে ‘কোভিড নেগেটিভ’ শংসাপত্র নিয়ে উঠতে হবে— প্রথমে ভাবা হয়েছিল, রাজ্য সরকারের এই নিয়মের কারণেই লন্ডন থেকে যাত্রী বেশি হচ্ছে না। কারণ, লন্ডন থেকে ওই শংসাপত্র জোগাড় করা মুশকিল হচ্ছিল। বিষয়টি গোচরে আসায় রাজ্য সরকার শুধু লন্ডনের উড়ানের জন্য নিয়ম পরিবর্তন করে জানিয়ে দেয়, কারও সঙ্গে ওই শংসাপত্র না থাকলেও তিনি আসতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কলকাতায় নেমে পরীক্ষা করিয়ে নিলেই হবে। সেই নিয়ম শুরু হয় গত ২২ অক্টোবর থেকে।
কিন্তু তার পরেও যে দু’টি উড়ান এসেছে, তাতে যথাক্রমে ৭৮ এবং ৯২ জন যাত্রী এসেছেন। অর্থাৎ, মোট আসনের ৩৩ এবং ৩৮ শতাংশ। উড়ান সংস্থা জানিয়েছে, দিল্লি ও মুম্বই থেকে লন্ডনের যে সরাসরি উড়ান চলছে, তাতে গড়ে ৭২ থেকে ৭৫ শতাংশ যাত্রী যাতায়াত করছেন। ওই সংস্থার এক কর্তার কথায়, “কোভিডের আগেও দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু থেকে লন্ডনের সরাসরি উড়ান ছিল। অমৃতসর থেকে ব্রিটেনের অন্যান্য শহরেও উড়ান যেত। পরে ‘বন্দে ভারত’ প্রকল্পে নতুন করে কলকাতার সঙ্গে গোয়া, কোচি এবং আমদাবাদ থেকে লন্ডনের সরাসরি উড়ান চালানো শুরু হয়। আমদাবাদের যাত্রী-সংখ্যা তুলনায় কম। কিন্তু গোয়া এবং কোচি থেকে প্রচুর যাত্রী হচ্ছে।”
শুধু আসার নয়, কলকাতা থেকে লন্ডন যাওয়ার যাত্রীও কম। নিয়ম অনুযায়ী, লন্ডনে নামলে ১৪ দিনের জন্য গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকতে হচ্ছে। এখান থেকে যেতে চাওয়া অধিকাংশ যাত্রীরই লন্ডনে ১৪ দিন গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকার মতো জায়গা নেই। হোটেলে থাকতে গেলে প্রচুর খরচ।
‘ট্র্যাভেল এজেন্টস ফেডারেশন অব ইন্ডিয়া’র পূর্ব ভারতের চেয়ারম্যান অনিল পঞ্জাবির কথায়, “এখন কোভিড পরিস্থিতিতে লোকজন যাতায়াত করতে ভয় পাচ্ছেন। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা হলেও বদলেছে। না হলে কলকাতা থেকে এমিরেটস, কাতার ও ইতিহাদ কী করে ভাল যাত্রী পাচ্ছে? এয়ার ইন্ডিয়াকে আরও সক্রিয় ভাবে বিজ্ঞাপন করতে হবে।” অনিলের ধারণা, তাতেই যাত্রী বাড়বে।