বিষণ্ণ: উমার দেহ নিয়ে পরিজনেরা চলে যাওয়ার পরে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন সহকর্মীরা। শুক্রবার। ছবি: শৌভিক দে
পুলিশ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসায় গাফিলতির কোনও অভিযোগ না করেই শুক্রবার আমরি-র নার্স উমা সেস-এর মৃতদেহ নিয়ে চলে গেলেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
যাঁর মৃত্যু নিয়ে বৃহস্পতিবার সারা দিন সল্টলেকের ওই হাসপাতালে তুলকালাম কাণ্ড হল, হাসপাতালের কর্মীরা বিক্ষোভে সামিল হলেন- এ দিন যে ভাবে তার যবনিকাপাত হল তাতে বিস্মিত ওই নার্সের সহকর্মীরা।
হাসপাতালের সিইও রূপক বড়ুয়া এ দিন জানিয়েছেন, ওই নার্সের পরিবারকে তাঁরা পাঁচ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেবেন। তা হলে কি ক্ষতিপূরণ দিয়েই পুরো বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়া হল? রূপকবাবু জানিয়েছেন, ‘‘এটা ক্ষতিপূরণ নয়। আর্থিক সাহায্য।’’ হাসপাতাল সূত্রে খবর, পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
যে সব ক্ষেত্রে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ উঠবে সেখানেই কি এ ভাবে আর্থিক সাহায্যের ব্যবস্থা করবেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ? এ ব্যাপারে অবশ্য হাসপাতালের কোনও বক্তব্য মেলেনি। কথা বলতে চাননি উমার পরিবারের লোকেরাও।
আরও পড়ুন: শ্রাবন্তীর অভিমান জানত শুধু তাঁর ডায়েরি
কর্তব্যরত অবস্থায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ার পরেও উমার যথাযথ চিকিৎসা হয়নি বলে অভিযোগ। ঠিক সময়ে আমরি হাসপাতালে চিকিৎসা হলে উমাকে বাঁচানো যেত বলেও মনে করছেন তাঁর সহকর্মীরা। উমার বাড়ি ওড়িশায়। তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি নিয়ে পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ করা হয়নি। ময়না তদন্ত ছাড়াই তাঁর মৃতদেহ পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে তাঁর সহকর্মীরা হতাশ। এক কর্মী বলেন, ‘‘উমার পরিবার অভিযোগ দায়ের করলে হাসপাতালের অনেক অনিয়ম ও অবিচার সামনে আসত।’’ এ দিন উমার দেহ হাসপাতাল থেকে বেরোনোর পথে কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে কর্মীই।
ওই ঘটনার তদন্তে এ দিন চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে আমরি। ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ শুশ্রুত বন্দ্যোপাধ্যায়কে ওই কমিটির মাথায় বসানো হয়েছে। ওই নার্সের চিকিৎসায় কেউ বাধা দিয়েছিল কী না এবং অসুস্থ হওয়ার পরে তাঁর যথাযথ চিকিৎসা হয়েছিল কী না তা খতিয়ে দেখবে ওই কমিটি। হাসপাতাল সূত্রে বলা হয়, উমার ব্যাপারে কেউ চিকিৎসায় বাধা দিয়েছেন বলে প্রমাণিত হলে দোষীকে শাস্তি পেতে হবে। চার সদস্যের তদন্ত কমিটিকে সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
উমার পরিবার পুলিশ এবং হাসপাতালের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের করা না হলেও, আমরির ঘটনার পর বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত কর্মীরা নিজেরা কতটা চিকিৎসা-সংক্রান্ত সুযোগসুবিধা পান তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। আমরি-র তরফে রূপক বরুয়া দাবি করেছেন, কর্মীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া তাঁদের হাসপাতালের নীতি-র অন্তর্ভুক্ত। গত ১৫ ডিসেম্বর হাসপাতালের নতুন বিধি প্রকাশিত হয়েছে, সেখানে এ বিষয়ে স্পষ্ট করে বলাও রয়েছে। সল্টলেকেরই অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালের মুখপাত্র জানান, হাসপাতালের ‘অন রোল’ কর্মীদের জন্য ইএসআই স্কিমের পাশাপাশি আড়াই লক্ষ টাকার বিমা করানো হয়। চুক্তিভিত্তিক কর্মীদেরইএসআই স্কিমে চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে জরুরি ভিত্তিতে জীবন বাঁচানোই প্রাথমিক লক্ষ্য হয় এবং সে ক্ষেত্রে ওই হাসপাতালেই তাঁদের চিকিৎসার ব্যবস্থা হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। বাইপাসের ধারের আরেকটি বেসরকারি হাসপাতালের তরফে জানানো হয়েছে, যে সব কর্মীর বেতন মাসিক ২১ হাজার টাকার ভিতর তাঁরা ইএসআই স্কিমে চিকিৎসার সুবিধা পান। ২১ হাজারের বেশি বেতনপ্রাপ্ত কর্মীদের পরিবারের চার জনের জন্য ২ লক্ষ টাকার বিমা করানো হয়। তবে জরুরি পরিস্থিতিতে হাসপাতাল প্রয়োজনমতো যাবতীয় চিকিৎসার ভার নেয়।