নাগরিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলছেন ফিরহাদ হাকিম। সোমবার, পুরভবনে। নিজস্ব চিত্র
শহরের ফুটপাথ কিংবা রাস্তা জুড়ে হকার বসা নিয়ে এমনিতেই বিব্রত পুর-প্রশাসন। তা সামাল দেওয়ার কাজে ধীরে চলো নীতি নিয়েছে পুরসভা। সোমবার ‘টক টু মেয়র’ অনুষ্ঠানের সূচনাতে মেয়রের কাছে টেলিফোনে প্রথম প্রশ্নটিও এল সেই ফুটপাতে দোকান গজিয়ে ওঠা নিয়েই। প্রশ্নকর্তা উল্টোডাঙার এক বাসিন্দা তরুণ নন্দন।
‘‘আপনি কি মহানাগরিক বলছেন?
‘‘হ্যাঁ, আমি মেয়র ববি হাকিম বলছি। কী সমস্যা বলুন।’’ ফোনের ওপার থেকে উত্তর এল, ‘‘উল্টোডাঙা বিধাননগর মেন রোডের দু’পাশে ফুটপাত জুড়ে হকার বসে আছে। একটু ব্যবস্থা নিন।’’ ফিরহাদ জানান, দেখে নিয়ে জানাবেন। পরবর্তী আধ ঘণ্টায় প্রায় ২৬ জন ফোন করলেন মেয়রের কাছে। কেউ জানালেন পানীয় জল কিংবা রাস্তায় জঞ্জাল জমার সমস্যা কথা, আবার কেউ জানালেন বাড়ির পাশেই বেআইনি বহুতল গড়ে ওঠার অভিযোগ। মেয়র প্রায় সকলকেই জানান যে সমস্যার সমাধানকারী সংশ্লিষ্ট সব দফতরের অফিসারেরা তাঁর সঙ্গেই রয়েছেন। দিন সাতেকের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মেয়র টেলিফোনকারীদের আবারও ফোন করে সমস্যার কথা জানাতে বলেন।
বেহাত: উল্টোডাঙায় স্টেশন সংলগ্ন রাস্তার ফুটপাত হকারদের দখলে। সোমবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
এলাকার সমস্যা নিয়ে টেলিফোনে সরাসরি নাগরিকদের সঙ্গে মেয়রের কথাবার্তা কলকাতা পুরসভার ইতিহাসে প্রথম বলেই দাবি কর্তৃপক্ষের। তাঁদের ব্যাখ্যা, কলকাতায় ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বাস করেন। রাস্তাঘাট ভাল রাখা, দৈনিক জঞ্জাল সাফ, পানীয় জল সরবরাহ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য পরিষেবা— নিকাশি ব্যবস্থা সুষ্ঠু রাখা-সহ শহরের রাস্তায় আলো জ্বালানো, বেআইনি নির্মাণ আটকানোর মত বিভিন্ন দায়িত্ব সামলাতে হয় পুরসভাকে। আর তা নিয়ে প্রতিদিনই অজস্র অভিযোগ শুনতে হয় পুর প্রশাসনকেও। ‘টক টু মেয়র’ শুরু হওয়ায় এ বারে অভিযোগের পরিমাণ আরও বাড়বে বলেই মনে করছেন কর্তৃপক্ষ। কতটা সমাধান করা যাবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যাচ্ছে।
কেন পুর প্রশাসন এমন সিদ্ধান্ত নিলেন?
মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কাউন্সিলর হিসেবে বহু বছর কাজ করেছি। সেই অভিজ্ঞতায় দেখেছি পুর পরিষেবার ক্ষেত্রে এমন কিছু সমস্যা হয়, যা পুর প্রশাসনের নজরে আসে না। অথচ পুরসভায় ওই কাজের জন্য লোক রয়েছে। শুধু দেখভালের জন্য কাজ হয়না। সেটা মাথায় রেখেই টক টু মেয়র।’’ যদিও বিজেপি কাউন্সিলর মীনাদেবী পুরোহিত, বিজয় ওঝা’দের কথায়, ‘‘সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে বিজেপির বাড়বাড়ন্ত দেখে চিন্তিত তৃণমূল। তাই এই সিদ্ধান্ত। তারও জবাব দিয়েছেন মেয়র। বলেন, ‘‘কলকাতায় তৃণমূল অনেক এগিয়ে। তাই ওঁদের কথার কোনও গুরুত্ব নেই।’’
আগামী বছর কলকাতায় পুরভোট। পুরসভা সূত্রে জানানো হয়েছে, প্রতি বুধবার বিকেল ৪টে থেকে ৫টা পর্যন্ত মেয়র সব দফতরের অফিসারদের সঙ্গে নিয়ে সমস্যা সমাধানে হাজির থাকবেন ১৮০০৩৪৫১২১৩ টেলিফোনের সামনে। সরাসরি মেয়রের সঙ্গে সংযোগের ওই অনুষ্ঠান ঘিরে পুরবাসীদের আগ্রহ বাড়ছে ঠিকই। সুষ্ঠু পুর-পরিষেবা পাওয়ার পাশাপাশি বেআইনি বিল্ডিং, বেআইনি দখলদারদের বিরুদ্ধে পুর-প্রশাসন কতটা কঠোর হতে পারে এখন তা দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন শহরবাসী।
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।