মন খারাপ: পল্লব হাজারির (ইনসেটে) অপেক্ষায় তাঁর পোষ্য রকি। রবিবার, প্রমোদনগরের বাড়িতে। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য
দুই বন্ধুর সঙ্গে বর্ষবরণের পার্টিতে গিয়েছিলেন তরুণটি। তার পরে আর বাড়ি ফেরেননি। বন্ধুর মাকে নিয়ে দুই বন্ধুই থানায় গিয়েছিল নিখোঁজ ডায়েরি করতে। দু’বেলা বন্ধুর বাড়ি গিয়ে মাকে সান্ত্বনাও দিয়ে আসত। কিন্তু শনিবার রাতে ওই তরুণ নিখোঁজের ঘটনায় দমদম থানার পুলিশ যাদের গ্রেফতার করল, তারা ওই দুই বন্ধুই!
চমকের বাকি ছিল আরও। জেরায় পুলিশ জানতে পারল, বিশাল যাদব এবং সম্রাট নস্কর নামে ওই দু’জন খুনই করেছে তাদের বন্ধু পল্লব হাজারিকে (১৮)। তাদের সঙ্গেই পার্টি করতে গিয়েছিলেন পল্লব। দক্ষিণ দমদমের প্রমোদনগরে জঞ্জাল ফেলার মাঠ থেকে শনিবার রাতে উদ্ধার হয় ওই তরুণের দেহ। একটি পরিত্যক্ত গাড়ির মধ্যে দেহটি মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিল বিশাল ও সম্রাট। পুলিশ জানিয়েছে, নেশার জন্য পল্লবের কাছে টাকা চেয়েছিল দু’জন। দিতে রাজি হননি পল্লব। সেই জন্যই তাঁকে পিটিয়ে খুন করে তারা। এর পরে ভাড়া বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে দু’জন।
পল্লবের বাবা শ্যামল হাজারি পেশায় রাজমিস্ত্রি। মা চম্পাদেবী পরিচারিকার কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘‘কিছু দিন হল ছেলেটা ঠিকাদারের কাছে কলের পাইপলাইনের কাজ শুরু করেছিল। দু’পয়সা আয় করে আমার হাতে দিচ্ছিল।’’ চম্পাদেবী জানান, ৩১ ডিসেম্বর রাতে বন্ধুদের সঙ্গে পিকনিক করেছিলেন পল্লব। সে দিনই কাজ করে পাওয়া ৮০০ টাকা ছিল তাঁর কাছে। রাত ১২টা নাগাদ বাড়ি ফিরে মাকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা জানান ছেলে। তখনই বিশাল আর সম্রাট এসে তাঁকে ডেকে বলে, “চল, পার্টি হচ্ছে। কিছু ক্ষণ পরে বাড়ি ফিরবি।” মাকে পল্লব বলেন, “তুমি ঘুমিয়ে পড়। আমি একটু পরেই ফিরে আসছি।”
ভোরে ঘুম ভেঙে চম্পাদেবী দেখেন, ছেলে বাড়ি ফেরেননি। তাঁকে ফোন করলেও বেজে গিয়েছিল। সকালে বিশালের কাছে ছুটে যান চম্পাদেবী। প্রথমে বিশাল তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করে, পার্টি শেষে বেশি রাতে বাড়ি ফিরেছে পল্লব। বেলায় বিশাল ও সম্রাট বন্ধুর বাড়ি গিয়ে তাঁর মাকে থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করতে বলে।
আশপাশের থানা এবং হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে ওই তরুণের সন্ধান পায়নি পুলিশ। শেষে জট কাটে মোবাইলের সূত্রে। পুলিশ জানিয়েছে, পল্লবের মোবাইলে শেষ ফোন গিয়েছিল বিশাল এবং সম্রাটের। এর পরেই শনিবার থানায় ডেকে পাঠানো হয় দু’জনকে। দীর্ঘ ক্ষণ তারা একই কথা বারবার বলে। কিন্তু পুলিশি জেরার মারপ্যাঁচে খেই হারিয়ে ফেলে। দু’জনকে আলাদা জেরা করতেই জানা যায় আসল ঘটনা।
তদন্তকারীরা জেনেছেন, তিন জনের পার্টিতে মদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। মদ কেনার জন্য বিশাল ও সম্রাট ৮০০ টাকা চায় পল্লবের কাছে। কিন্তু দিতে রাজি হননি তিনি। তার পরেই কাঠ দিয়ে দু’জন পল্লবকে বেদম পেটায়। জঞ্জাল ফেলার মাঠে নিয়ে গিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করতে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলে দেয়। ওই মাঠে প্রচুর অকেজো গাড়ি রয়েছে। তারই একটিতে বন্ধুর দেহ রেখে মাটি চাপা দিয়ে ফিরে আসে বিশাল ও সম্রাট। পল্লবের দেহের পাশেই ছিল তাঁর মোবাইলটি।
বাড়ির পোষা কুকুর রকি বড় প্রিয় ছিল পল্লবের। তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকে নাওয়া-খাওয়া প্রায় ত্যাগ করেছে সে। অচেনা লোক দেখলেও টুঁ শব্দ করছে না। খাটের পাশের খোলা জানলা দিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে রয়েছে সে।