একমুখী: চিৎপুর লকগেট উড়ালপুল দিয়ে চলছে গাড়ি। রবিবার। নিজস্ব চিত্র
টালা সেতুর বিকল্প রাস্তা হিসেবে লকগেট উড়ালপুল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে সেই ব্যবহারের পদ্ধতি নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ওই উড়ালপুল একমুখী হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই যাতায়াতে অনেকটা সময় লাগছে বলে জানাচ্ছে পুলিশ-প্রশাসনের একটি অংশ। আজ, সোমবার অফিস শুরু হওয়ার পরে গাড়ির চাপ বাড়লে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাবে বলেই আশঙ্কা করেছেন তাদের অনেকে।
তবে সেতু-বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলছেন যে, শুধু ছোট গাড়ি যদি উড়ালপুল দিয়ে চালানো হয়, তা হলে ওই উড়ালপুল দ্বিমুখী হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এমনকি, গতি নিয়ন্ত্রণ করে দ্বিমুখী ভাবে বাসও তার উপর দিয়ে চালানো যেতে পারে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সেটাই করা উচিত বলে মনে করছেন তাঁরা। ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের বর্তমান নির্দেশিকায় উল্লেখ রয়েছে, উড়ালপুল চওড়া হওয়ার কথা সাড়ে সাত মিটার।
কিন্তু ২০০৪-’০৫ নাগাদ যখন উড়ালপুলটি চালু হয়েছিল, তখনকার নিয়ম অনুযায়ী সাড়ে পাঁচ মিটারেই দু’লেন করা যেত। ফলে সেই নিয়ম অনুযায়ী সাড়ে ছ’মিটার চওড়া ধরেই লকগেট উড়ালপুল করা হয়েছিল। বর্তমান পরিস্থিতিতে, নির্দেশিকায় উল্লিখিত নিয়ম থেকে এক মিটার কম থাকাই সমস্যার মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা। যদিও তারও সমাধান রয়েছে বলে মত তাঁদের।
সেতু-বিশেষজ্ঞ বিশ্বজিৎ সোম জানাচ্ছেন, ছোট গাড়ি সাধারণত দু’মিটার চওড়া হয়। ফলে দ্বিমুখী দু’টি ছোট গাড়ি গেলেও তাতে সমস্যা হওয়ারই কথা নয়। বাসের ক্ষেত্রে সর্বাধিক চওড়ার মাত্রা হল ২.৬ মিটার। তা-ও সেটি ভলভো বাসের ক্ষেত্রে। এখন যেহেতু ওই উড়ালপুল দিয়ে ভলভো বাস চালানোর প্রশ্ন নেই, ফলে উভয় দিকে বাস চালানোটাও অসম্ভব নয়। কারণ, সাধারণ বাস ২.৪ মিটার চওড়া হয়। বিশ্বজিৎবাবুর কথায়, ‘‘গতি নিয়ন্ত্রণ করে ওই উড়ালপুল দিয়ে উভয় দিকে বাসও চালানো যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে অস্থায়ী রবারের ডিভাইডার রেখে দু’দিকে বাস বা গাড়ি চালানো সম্ভব।’’ আর এক সেতু-বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘‘ইন্ডিয়ান রোড কংগ্রেসের বর্তমান নির্দেশিকা অনুযায়ী ওই উড়ালপুলের চওড়া কম। তাই হয়তো পুলিশ সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। কিন্তু গাড়ির চাপ সামলাতে দ্বিমুখী ভাবে উড়ালপুল ব্যবহারের কথা ভাবাই যেতে পারে।’’ কিন্তু এখনও পর্যন্ত পুলিশ-প্রশাসনের তরফে ওই উড়ালপুল দ্বিমুখী ভাবে ব্যবহারের কথা ভাবা হচ্ছে না।
তথ্য বলছে, প্রাথমিক ভাবে হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনার্সের (এইচআরবিসি) তরফে উড়ালপুলটি নিয়ে চার লেনের পরিকল্পনা হয়েছিল। এলাকা ঘিঞ্জি হওয়ায় তা বাতিল করে দু’লেনের করা হয়েছিল। বিভিন্ন কারণে ওই উড়ালপুল তৈরির নির্ধারিত সময়ও পিছোয়। শেষ পর্যন্ত ২০০৪-’০৫ সাল নাগাদ সেটি চালু হয়। এইচআরবিসি-র তরফে যে বেসরকারি সংস্থাকে উড়লপুল তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সেই সংস্থার তরফে সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উড়ালপুলটি উদ্বোধন করার কথা ছিল। কিন্তু নির্বাচন-বিধির কারণে তা এমনিই চালু করা হয়েছিল। তখনকার সমস্ত নিয়ম মেনেই সেটি তৈরি করা হয়েছিল।’’