এসএসকেএম হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারকে মারধরের ঘটনায় দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, ধৃত দুষ্টু দাস ও মানস দাস চেতলার বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার রাতে চেতলার বাড়ি থেকে তাঁদের ধরে পুলিশ। ওই দু’জনের নাম এফআইআর-এ ছিল বলে পুলিশ সূত্রের খবর।
বুধবার এসএসকেএমে পথ দুর্ঘটনায় আহত চেতলার এক অটোচালক বাপি দাসের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ তোলেন এলাকার অটোচালকদের একাংশ। তখন ইমার্জেন্সি ডিউটিতে থাকা এক জুনিয়র ডাক্তারকে উত্তেজিত অটোচালকেরা মারধর করেন বলেও অভিযোগ। আক্রান্ত চিকিৎসক অভয় সরকার উডবার্ন ওয়ার্ডে ভর্তি। এখন তাঁর অবস্থা স্থিতিশীল।
বৃহস্পতিবার এ নিয়ে বিক্ষোভ দেখান জুনিয়র ডাক্তারেরা। নিহত অটোচালকের পরিবার শুক্রবার ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে সুপারের কাছে কর্তব্যে গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করেছেন। সেই অভিযোগপত্র পুলিশকে পাঠানো হয়েছে।
চিকিৎসককে মারের ঘটনায় অজয় ঘোষ, দুষ্টু দাস ও মানস দাস নামে চেতলার বাসিন্দা তিন যুবকের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, ওই তিন জনই রাজ্যের এক প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ।
বৃহস্পতিবার পিজি-র জুনিয়র ডাক্তারেরা যখন সহকর্মীর মার খাওয়ার প্রতিবাদে এবং নিজেদের নিরাপত্তার দাবিতে কর্মবিরতি শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন তাঁদের দাবি মেনে, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তা কার্যকর করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেন সুপার মানস সরকার। তাতে বলা হয়েছে, ১) দোষীদের গ্রেফতার করা হবে। ২) গুরুতর অসুস্থ বা আহতেরা ইমার্জেন্সিতে এলে সেখানেই তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল করার পরিকাঠামো রাখতে হবে। ৩) ইমার্জেন্সিতে গুরুতর অসুস্থ কেউ এলেই তখনকার ইউনিট হেড-কে জানিয়ে রোগীকে ওয়ার্ডে শিফ্ট করতে হবে। ৪) ইমার্জেন্সি ও সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্লকে ঢোকার মুখে কোল্যাপসিব্ল গেট লাগাতে হবে, তাতে তালা দিয়ে রাখতে হবে ও রক্ষী মোতায়েন করতে হবে। যাতে বাইরের লোক বা রোগীর সঙ্গীরা দল বেঁধে ঢুকে না পড়তে পারেন।
জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে শুক্রবার জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টা তাঁরা অপেক্ষা করবেন। দেখবেন কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রতিশ্রুতি পালন করেন কিনা। না করলে কর্মবিরতির পথে হাঁটবেন তাঁরা। যদিও এসএসকেএম কর্তৃপক্ষের মতে, দোষীরা ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছে। গেট ও নিরাপত্তাকর্মী বসে গিয়েছে। বাকিগুলিও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হয়ে যাবে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, ‘‘চিকিৎসক ঠিক চিকিৎসা করেননি মনে করলে রোগীর বাড়ির লোক পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাতেই পারেন। কিন্তু প্রথমেই মারধর শুরু করাটা বিপজ্জনক প্রবণতা।’’ তাঁর কথায়, ‘‘সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকেরা অনেক অসুবিধার মধ্যে অনেক চাপে কাজ করেন। তাঁরা কেউই রোগীর ক্ষতি চান না। কিন্তু মানুষের মানসিকতা না বদলালে শত নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েন করেও হামলা আটকানো কঠিন।’’