প্রয়াত বাঙালি অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তীর প্রথম স্ত্রী হেলেনা লিউক। বলিপাড়া সূত্রে খবর, রবিবার আমেরিকায় মৃত্যু হয় তাঁর। জানা গিয়েছে, দীর্ঘ দিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন তিনি।
আশির দশকে হিন্দি ফিল্মজগতের একাধিক ছবিতে অভিনয় করেছিলেন হেলেনা। তবে পেশাগত জীবন তেমন সফল ছিল না তাঁর। ব্যক্তিগত জীবনেও থিতু হতে পারেননি তিনি। মিঠুনের সঙ্গে মাত্র চার মাসের বিবাহিত জীবন ছিল তাঁর।
হেলেনার বাবা ছিলেন তুরস্কের বাসিন্দা। তাঁর মা ছিলেন অ্যাংলো-ইন্ডিয়ান খ্রিস্টান। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ ছিল হেলেনার। বড় পর্দায় অভিনয়ের আগে টানা ন’বছর গুজরাতি নাটকে অভিনয় করেছিলেন তিনি।
গুজরাতি ভাষার ছবিতেও অভিনয়ের চেষ্টা করেছিলেন হেলেনা। কিন্তু ভাল চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ না পাওয়ার কারণে বলিউডে ভাগ্যান্বেষণ করেছিলেন তিনি।
সত্তরের দশকের শেষ দিকে বলিউডে নিজের জায়গা করে নিতে চেয়েছিলেন মডেল-অভিনেত্রী হেলেনা। ১৯৮০ সালে ‘জুদাই’ ছবিতে পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করেছিলেন হেলেনা। জিতেন্দ্র এবং রেখা অভিনীত এই হিট ছবিতে হেলেনার উপস্থিতি তেমন নজর কাড়তে পারেনি।
আশির দশকে ‘সাথ সাথ’ ছবিতে একটি ছোট চরিত্রে হেলেনাকে দেখা গিয়েছিল। ‘আও পেয়ার করেঁ’, ‘দো গুলাব’ এবং ‘ভাই আখির ভাই হোতা হ্যায়’ নামের হিন্দি ছবিতেও অভিনয় করেছিলেন হেলেনা। কিন্তু কোনও ছবিই বক্স অফিসে তেমন ব্যবসা করতে পারেনি।
বলিপাড়ায় কানাঘুষো শোনা যায়, বলি অভিনেতা জাভেদ খানের সঙ্গে কলেজজীবন থেকেই প্রেমের সম্পর্ক ছিল হেলেনার। চার বছর প্রেমপর্ব চলার পরে হঠাৎই বিচ্ছেদ হয়ে যায় তাঁদের। এই বিচ্ছেদের পরমুহূর্তেই নাকি হেলেনার সঙ্গে মিঠুনের আলাপ হয়।
বলিপাড়ার একাংশের দাবি, হেলেনার সঙ্গে পরিচয়ের আগে মিঠুনের সম্পর্ক ছিল অভিনেত্রী সারিকার সঙ্গে। কিন্তু সেই প্রেমে ধাক্কা খেয়ে নাকি একাকিত্ববোধে ভুগতে শুরু করেছিলেন মিঠুন। তখনই হেলেনার সঙ্গে অভিনেতার পরিচয়, প্রেম এবং পরিণয়।
১৯৭৯ সালে মিঠুন বিয়ে করেছিলেন হেলেনাকে। মাত্র চার মাস সংসারের পর সেই সম্পর্কে ইতি টানেন দু’জনেই। একই বছর অভিনেত্রী যোগিতা বালীকে বিয়ে করেছিলেন মিঠুন।
বলিউডের জনশ্রুতি, মিঠুনের পারিবারিক সমস্যা নাকি ছায়া ফেলেছিল মিঠুন-হেলেনার দাম্পত্যজীবনে। সেই সময় নাকি হেলেনার জীবনে আবার ফিরে এসেছিলেন জাভেদ খান। হেলেনাও নাকি জাভেদের প্রতি নরম হয়ে পড়েছিলেন। সব মিলিয়েই নাকি মিঠুন এবং হেলেনার দাম্পত্যে ছেদ আসে। অন্য দিকে, জাভেদের সঙ্গেও হেলেনার প্রেম পরিণতি পায়নি।
বলিউডের আশির দশকের এক পত্রিকায় হেলেনার প্রেমজীবন নিয়ে চর্চা হয়েছিল। পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল হেলেনার সঙ্গে তৎকালীন উদীয়মান অভিনেতা বিজয়েন্দ্র ঘটগের সম্পর্ক। তবে তা কানাঘুষোর পর্যায়েই থেকে যায়।
হেলেনাকে ১৯৮৮ সালের ‘এক নয়া রিস্তা’ ছবিতে শেষ অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। সেই ছবিতেও হেলেনা নজর কাড়তে পারেননি। পরে অভিনয় ছেড়ে নিউ ইয়র্কে চলে গিয়েছিলেন তিনি।
বিদেশি এক বিমান সংস্থায় বিমানকর্মী হিসাবে কাজ করা শুরু করেছিলেন হেলেনা। পরে আর বড় পর্দায় দেখা যায়নি তাঁকে। মৃত্যুর আগের দিন ফেসবুকে হেলেনা পোস্ট করেছিলেন, ‘‘কেমন একটা লাগছে। নানা ধরনের অনুভূতি কাজ করছে মনের মধ্যে। কিছুই বুঝতে পারছি না।’’ এই পোস্ট ঘিরেও তৈরি হয়েছে রহস্য।
এক পুরনো সাক্ষাৎকারে মিঠুনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে হেলেনা বলেছিলেন, ‘‘মিঠুনকে বিয়ে করেছিলাম বলে আমি আফসোস করি। ও অভিনেতা হিসাবে যতই সফল হোক না কেন, আমি আর কোনও দিন ওর সঙ্গে থাকতে চাইব না। ওই চার মাস আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো ছিল। ওই সময়টুকু আমার জীবন থেকে মুছে গেলেই ভাল হত। মিঠুন আমায় বুঝিয়েছিল যে, আমরা একে অপরের জন্যই তৈরি। আমিও সেই ফাঁদে পা ফেলেছিলাম।’’
হেলেনা আরও বলেছিলেন, ‘‘মিঠুন মহিলাদের সঙ্গে খুব খারাপ ব্যবহার করত। আমি প্রতি দিন ওর জন্য বাড়িতে অপেক্ষা করতাম। ও সারা দিনে আমায় মাত্র চার ঘণ্টা সময় দিত। খুবই অবুঝ ছিল ও। আমায় সন্দেহও করত খুব। ও ধরেই নিয়েছিল আমার সঙ্গে আমার প্রাক্তন প্রেমিকের (জাভেদ খান) সম্পর্ক রয়েছে। আমি শুধু ওই বিয়েটা থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলাম। কোনও ক্ষতিপূরণও চাইনি।’’