সম্প্রতি ১৫ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় অনুষ্ঠিত হল অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয় কনভোকেশন। এই কনভোকেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দু’জন নোবেল পুরস্কার জয়ী — প্রফেসর রোল্ড হফম্যান (কেমিস্ট্রি নোবেল, ১৯৭৬), এভং ক্লড কোহেন তনৌজি (ফিজিক্স নোবেল, ১৯৯৭)। উপস্থিত ছিলেন এমআইটি টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ডঃ পার্থ ঘোষ। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৮৪ জন ছাত্রছাত্রীও এই অনুষ্ঠানে সামিল ছিলেন। অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চতুর্থ কনভোকেশনে ২৭ জন শিক্ষার্থীর হাতে সোনা এবং রূপোর মেডেল তুলে দেওয়া হল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তাদের অবিভাবকেরাও। ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজনেস, ল’, বিজ্ঞান, লিবারাল আর্টস, মিডিয়া, জীবন বিজ্ঞান, ফার্মাসি এবং এডুকেশন, — সমস্ত বিভাগ থেকেই ছাত্রছাত্রীরা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও অনেক দর্শক অনলাইনে এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন।
প্রধান অতিথি কেমিস্ট হফম্যান একদিকে বিজ্ঞান সংক্রান্ত ক্রিয়েটিভ দিক যেমন তাঁর বক্তৃতায় তুলে ধরলেন, আবার অন্যদিকে হিউমানিটিস এবং আর্ট অর্থাৎ মানবিকতা ও শিল্পকে তুলে ধরলেন সমান ভাবে। তার মতে বিজ্ঞান এবং শিল্প উভয়ই মনুষ্য সৃষ্টির সঙ্গে একত্রিত। তিনি ক্রিয়েটিভ অ্যাক্টকেও মিশ্র সংস্কৃতিতে অভিহিত করেন এবং তারই সঙ্গে সমস্ত স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের এই ক্রিয়েটিভ আর্টকে প্র্যাকটিস করার কথা বলেছেন।
অন্যদিকে আরেকজন নোবেলজয়ী তনৌজি বিজ্ঞানের মৌলিক গবেষণার গুরুত্বকে স্পষ্ট করে উল্লেখ করেন এবং তিনি একথাও বলেন যে আলোক ও পরমাণু ইতিহাসের প্রতিলিপি দেখায়, এই মৌলিক গবেষণা আমাদের ধারণার পরিবর্তন করে ( আপেক্ষিকতা, কোয়ান্টাম ফিজিক্স ইত্যাদির মাধ্যমে ) তথা বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করে। কীভাবে আলোক-পরমানু মিথস্ক্রিয়াকে আরও ভাল ভাবে বোঝা যায় সে কথাও তিনি তাঁর বক্তৃতায় ব্যাখ্যা করেছেন। নতুন আলোক উৎস, লেজার আবিষ্কার, পারমানবিক নিয়ন্ত্রণের জন্য নতুন প্রকল্প উদ্ভাবনের কথাও তিনি বলেন।
প্রফেসর পার্থ ঘোষ সমস্ত স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের নিজেদের সঙ্গে আশেপাশের মানুষদের ও পরিবেশকে সম্মান করার কথা তুলে ধরেছেন তার বক্তৃতায়। তাঁর কথায় বিশ্ববিদ্যালয় পড়াশোনা শেষ করে অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায় এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের তাদের লক্ষ্যে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করার কথাও তিনি বলেন। তিনি তাদের লক্ষ্য স্থির করতে, বড় স্বপ্ন দেখতে এবং সেই স্বপ্নের কাছে যাওয়ার উপায়গুলি, ও তার যথাযথ সময়ের কথাও মনে রাখার কথা বলেছেন।
অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রফেসর সমিত রায় এই পরিস্থিতিতেও এই কনভোকেশনের সমস্ত পারিপার্শ্বিক বিষয় সংক্রান্ত কথা তার বক্তৃতায় তুলে ধরেন। সরকারের সমস্ত নিয়ম নিতী মেনে, সুরক্ষা বিধি পালন করেই এই কনভোকেশনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। তিনি সকলকে সারা জীবন যথার্থ শিক্ষা গ্রহনের কথা বলেন।
ভাইস চ্যান্সেলর ডঃ দীপেন্দ্র ঝাঁ, গত এক বছর ধরে কী ভাবে সমস্ত ক্যাম্পাসে তারা সমস্ত নিয়ম মেনেছেন, এবং তার জন্য প্যান্ডেমিকের সময়েও তারা কী ভাবে নিজেদের সেরাটা ধরে রেখেছেন সে কথাও উল্লেখ করেন। একই সঙ্গে তিনি জানান সবচেয়ে ভাল পরিকাঠামোর তালিকাতেও তারাই সর্বসেরা। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ইঞ্জিনিয়ারিং এবং বিজনেস স্কুলের স্বীকৃতি পাওয়া থেকে শুরু করে ই- প্রিপেয়ারনেস এর জন্য কিউ এস আই লিড অ্যাওয়ার্ড, নতুন ভাবে এই বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজানো, ৩০ টি বিশেষ প্রোজেক্ট কাজ করা, বছরে আইডিয়া প্লাস ম্যাগাজিন সম্প্রচার করা, কোভিড ১৯ এর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য টাস্ক ফোর্স গঠন, অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যাল কেয়ার লঞ্চ, এবং ফ্যাকাল্টির সদস্যদের জন্য বিভিন্ন সমীক্ষা আয়োজন এই সমস্ত বিষয়কে উল্লেখ করেছেন তাঁর বক্তৃতার মাধ্যমে। তিনি আরও বলেন যে এই নতুন বছর তথা ২০২১, নানান ধরণের প্রোজেক্টে কাজ করার জন্য বিভিন্ন ডিজাইন, নতুন চিন্তা ভাবনা, এবং সোশ্যাল আউটরিচের জন্য উদযাপিত হবে।