আলোকিত: যতীন দাস পার্কে বসানো হয়েছে এই আলো। —নিজস্ব চিত্র।
দিনে কাজে লাগবে না। তাই সেই সৌর বিদ্যুৎ দেওয়া হবে সিইএসসি-র গ্রিডে। সন্ধ্যায় যখন আলো জ্বালানোর প্রয়োজন হবে, তখন সেই একই পরিমাণ বিদ্যুৎ ফিরিয়ে নেওয়া হবে সিইএসসি-র গ্রিড থেকে।
মঙ্গলবার এমনই বিশেষ ধরনের সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমে বাতিস্তম্ভ উদ্বোধন হল কলকাতা পুরসভার দু’টি উদ্যানে। নয়া এই ব্যবস্থায় পুরসভার উদ্যানগুলির বিদ্যুৎ বিলের খরচ অনেকটাই কমবে বলে দাবি করা হচ্ছে। এ দিন ম্যাডক্স স্কোয়ারে এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, যতীন দাস পার্কে বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়।
সাধারণত সৌর বিদ্যুৎ চালিত বাতিস্তম্ভগুলিতে দিনের বেলায় বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার পরে একটি ব্যাটারিতে জমা হয়। সন্ধ্যায় সেই ব্যাটারির মাধ্যমেই বাতিস্তম্ভের আলোগুলি জ্বলে। ওই বিদ্যুৎ কাউকে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকে না। কিন্তু নতুন এই বাতিস্তম্ভগুলি একটু অন্য ভাবে তৈরি। এর মাথায় বসানো হয়েছে বিশেষ ধরনের ‘বুদ্ধিমান’ (ইনটেলিজেন্ট কন্ট্রোলার) যন্ত্র। সেই যন্ত্র স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে সিইএসসি-কে বিদ্যুৎ দেওয়া-নেওয়া করবে এবং একই সঙ্গে তার মিটারের মাধ্যমে প্রতি ইউনিটের হিসেবও রাখবে।
প্রকল্পের অন্যতম পরামর্শদাতা শান্তিপদ গণচৌধুরী জানান, দিনে সূর্যের আলো ব্যবহার করে বাতিস্তম্ভের মাথায় যে বিদ্যুৎ তৈরি হবে, তা সিইএসসি-কে দিয়ে দেওয়া হবে। গড়ে প্রতি দিন প্রতিটি বাতিস্তম্ভ থেকে সিইএসসি-র গ্রিডে দেওয়া হবে এক ইউনিটের কিছু বেশি সৌর বিদ্যুৎ। শান্তিপদবাবুর দাবি, সন্ধ্যায় ওই বুদ্ধিমান যন্ত্রটি আলো জ্বালানোর জন্য সিইএসসি-র গ্রিড থেকে ঠিক ওই পরিমাণ বিদ্যুৎ নেবে। তাঁর কথায়, ‘‘যে পরিমাণ সৌর বিদ্যুৎ সে গ্রিডে দেবে, সারা বছর ধরে ঠিক ততখানি বিদ্যুৎ গ্রিড থেকে নেওয়ার চেষ্টা করবে। আবহাওয়ার কারণে বছরের বেশ কিছু দিন গ্রিড থেকে বেশি বিদ্যুৎ নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে তার দাম সিইএসসি-কে মিটিয়ে দেবে পুরসভা।’’ বছরে সেই বিল অনেক কম হবে বলেই শান্তিপদবাবু দাবি করেছেন।
কলকাতা পুরসভার উদ্যোগে আপাতত ম্যাডক্স স্কোয়ার ও যতীন দাস পার্কে এই বিশেষ প্রযুক্তির ৩২টি বাতিস্তম্ভ লাগানো হল। প্রতিটি স্তম্ভে ১২০ ওয়াটের এলইডি বাল্ব লাগানো হয়েছে। সেগুলি ৮ ঘণ্টা জ্বলতে এক ইউনিটের মতো বিদ্যুৎ খরচ হবে।
বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেববাবু বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে আমরা শহরের প্রতিটি উদ্যানে এমন সৌর আলো লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পরিবেশের কারণে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তার ব্যবহার বাড়ানোই এখন আমাদের অন্যতম লক্ষ্য।’’ তিনি জানান, এই প্রকল্পের যাবতীয় খরচ বিদ্যুৎ দফতর দিচ্ছে। ভবিষ্যতেও আরও ৩০টি উদ্যানে এমন প্রকল্প গড়ে উঠবে।