Maternal Mortality

Maternal Mortality: মাতৃমৃত্যুতে শীর্ষে শহরের দুই হাসপাতাল, অস্বস্তিতে রাজ্য

কলকাতার মতো শহরে পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে বা জন্মের ঠিক পরে মারা গিয়েছেন ৭৮ জন মা।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ অগস্ট ২০২২ ০৬:১৭
Share:

জন্মের অব্যবহিত পরে মায়ের মৃত্যুর একের পর এক ঘটনা লজ্জা এবং অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে। প্রতীকী ছবি

কোনও অজ-পাড়াগাঁয়ে নয়, খাস কলকাতা শহরে প্রথম সারির সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে অথবা জন্মের অব্যবহিত পরে মায়ের মৃত্যুর একের পর এক ঘটনা লজ্জা এবং অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে।

Advertisement

সরকারের লক্ষ্য, মাতৃমৃত্যু বা ‘মেটারনাল ডেথ’ শূন্যে নামিয়ে আনা। এর জন্য একাধিক প্রকল্প ও কর্মসূচি রয়েছে। খরচ হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। তা সত্ত্বেও কলকাতার মতো শহরে পাঁচটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চলতি বছরের প্রথম ছ’মাসে সন্তানের জন্ম দিতে গিয়ে বা জন্মের ঠিক পরে মারা গিয়েছেন ৭৮ জন মা। এই তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারি রিপোর্টেই!

এর কারণ খুঁজতে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য ভবনে একাধিক বৈঠক হয়েছে। রেফার কম করা, সিজ়ারের সংখ্যা কমানোর মতো কিছু নির্দেশও পাঠানো হয়েছে সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেই সব পদক্ষেপ কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা নিয়ে সংশয়ী স্বাস্থ্যকর্তারা।

Advertisement

চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত মাতৃমৃত্যুতে শীর্ষে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ এবং আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। দু’জায়গাতেই মারা গিয়েছেন ২৩ জন করে প্রসূতি। তৃতীয় স্থানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল। সেখানে মারা গিয়েছেন ১৭ জন। এই সময়কালে সবচেয়ে কম প্রসূতি মারা গিয়েছেন এন আর এস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, ৬ জন।

মাতৃমৃত্যু বাড়ার কারণ হিসাবে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘শুনতে খারাপ লাগলেও বলতে বাধ্য হচ্ছি, এসএসকেএম, ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ, চিত্তরঞ্জন সেবা সদন এবং এমন অনেক হাসপাতাল প্রায় প্রতিদিন বহু সঙ্কটজনক রোগীকে প্রসবের জন্য আমাদের কাছে রেফার করে। এসএসকেএম তো অনেক সময়ে রোগীকে এ-ও বলে পাঠায়, ‘ন্যাশনাল আমাদের সেকেন্ড ক্যাম্পাস। ওখানে ভর্তি করান।’ সেই সব রোগী এখানে মারা গেলে দুর্নাম হয় আমাদের।’’

যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসএসকেএম এবং ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ। ডায়মন্ড হারবার মেডিক্যাল কলেজের সুপার উৎপল দাঁ বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন অভিযোগ।’’ আর এসএসকেএমের স্ত্রী-রোগ বিভাগের প্রধান সুভাষচন্দ্র বিশ্বাসের বক্তব্য, ‘‘ন্যাশনালই তো ভর্তি না-নিয়ে আমাদের কাছে অনেক সঙ্কটজনক প্রসূতিকে রেফার করছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘চিত্তরঞ্জন সেবা সদনে চিকিৎসক নেই বলে ওখান থেকেও অনেক ক্রিটিক্যাল কেস আমাদের রেফার করা হয়। হাওড়া, হুগলি, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, বীরভূমের মতো জেলা থেকে প্রতিদিন এমন আসন্নপ্রসবাদের পিজিতে পাঠানো হয়, যাঁদের শারীরিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ। কখনও কখনও ভেন্টিলেশন দিয়ে পাঠানো হয় তাঁদের। তার আগে জানানোও হয় না। আমাদের চিকিৎসকেরা অত্যন্ত দক্ষ বলে এর পরেও এসএসকেএমে মাতৃমৃত্যু অনেক কম।’’ প্রসঙ্গত, জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত এসএসকেএমে মাতৃমৃত্যুর সংখ্যা ৯।

ন্যাশনালের মতোই মাতৃমৃত্যু বেশি আর জি কর হাসপাতালে। সেখানকার চিকিৎসকদের যুক্তি, বারাসত, বসিরহাট-সহ প্রায় গোটা উত্তর ২৪ পরগনা এবং হুগলির একটা বড় অংশ থেকে প্রতিদিন স্রোতের মতো রোগী রেফার করা হয় তাঁদের কাছে। ওই রোগীদের একটা বড় অংশ আসন্নপ্রসবা এবং তাঁদের অবস্থা থাকে সঙ্কটজনক। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরপরই অনেকের মৃত্যু হয়। কেউ কেউ ধকল সইতে না পেরে সন্তানের জন্মের ঠিক পরে মারা যান। আর জি করের চিকিৎসকদের একাংশের আরও অভিযোগ, সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ থেকেও সঙ্কটজনক প্রসূতিদের পাঠানো হচ্ছে এখানে। যদিও এই অভিযোগ মানতে চাননি সাগর দত্ত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের অনেকের আবার মত, মেডিক্যাল কলেজের এক শ্রেণির চিকিৎসক সাধারণ প্রসব করাতে চান না সময়াভাবে। তাঁদের ঝোঁক সিজ়ারের দিকে। রাজ্য পরিবার কল্যাণ আধিকারিক অসীম দাস মালাকারের কথায়, ‘‘অহেতুক সিজ়ার আটকাতে পারলে মাতৃমৃত্যু অনেক কমানো যাবে। কারণ, অনেক সময়ে সরকারি হাসপাতালে সদ্য প্রসূতির সিজ়ার-পরবর্তী যত্নে ত্রুটি থেকে যায়। তখন মায়ের মৃত্যু হয়। আমরা সব দিক খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’’

আর জি করের ক্ষেত্রে অনেকটাই মিলে যাচ্ছে অসীমবাবুর এই যুক্তি। কারণ, জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত সময়কালে কলকাতার হাসপাতালগুলির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সিজ়ার হয়েছে আর জি করে (২৯৩০টি)। সেখানে মাতৃমৃত্যুও বেশি। কিন্তু ন্যাশনাল মেডিক্যালে ওই সময়সীমায় তুলনায় কম সিজ়ার হওয়া সত্ত্বেও (১৮৬০টি) মাতৃমৃত্যু বেশি হয়েছে। আবার এসএসকেএম ও কলকাতা মেডিক্যালে সিজ়ার বেশি হলেও (যথাক্রমে ২৪৩৫ ও ২৫০৮) মাতৃমৃত্যু কিছুটা কম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement