—ফাইল চিত্র।
নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করতে এত দিন দুই পরিবারের থেকেই আইন না ভাঙার মুচলেকা লিখিয়ে ছেড়ে দিত পুলিশ। কিন্তু তাতে এই প্রবণতা আটকানো যাচ্ছে না বলেই অভিজ্ঞতা পুলিশের একটি অংশের। এ বার তাই বিয়ের আসর থেকে পাত্রের ঠাঁই হল সোজা শ্রীঘরে। আর পাত্রী গেল সরকারি হোমে। শুক্রবার রাতে সোনারপুর এবং নরেন্দ্রপুরে দুই নাবালিকার বিয়ে এ ভাবেই কড়া হাতে রুখে দিল পুলিশ।
চাইল্ডলাইনের (বারুইপুর) কোঅর্ডিনেটর অভিজিৎ বসু জানান, শুক্রবার রাতে খবর আসে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার সন্তোষপুরে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন এক বাবা। পাত্রের বাড়ি হাওড়ার উলুবেড়িয়ায়। হেল্পলাইন মারফত বিয়ের খবর পৌঁছে যায় রাজ্য শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের কাছে। সেখান থেকে খবর যায় দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও চাইল্ডলাইনে। রাত পৌনে ১১টা নাগাদ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে পুলিশ দেখে, বিয়ে প্রায় শেষ। পাত্র-পাত্রী তখনও পিঁড়িতে বসে। পাত্রীর বয়সের নথি চায় পুলিশ। যা দেখে জানা যায়, পনেরোয় পা দিয়েছে কিশোরী। স্থানীয় স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। পাত্রের বয়স একুশ। দু’জনের ফেসবুকে আলাপ।
অভিজিতের কথায়, ‘‘পাত্র ও পাত্রী-সহ পরিবারের কয়েক জনকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। মামলা রুজু হয়। পাত্র ও তাঁর জামাইবাবুকে গ্রেফতার করা হয়। শারীরিক পরীক্ষার পরে নাবালিকাকে স্থানীয় হোমে পাঠানো হয়।’’
অন্য ঘটনাটিরও খবর আসে ওই সন্ধ্যায়। নরেন্দ্রপুর থানার এক আধিকারিক জানান, নয়াবাদ এলাকায় এক নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে খবর আসে তাঁদের কাছে। দ্রুত সেখানে পৌঁছয় পুলিশ। দেখা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গিয়েছে।তিনি বলেন, ‘‘আমরা পৌঁছে দেখি পাত্র-পাত্রী পাশাপাশি বসে। মেয়েটির মা নেই। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে বাবা কাজ করার ক্ষমতা হারিয়েছেন। মেয়েটির বয়স সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েই পাত্র-পাত্রীকে থানায় নিয়ে আসি। পাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। শারীরিক পরীক্ষার পরে ওই বালিকাকে হোমে পাঠানো হয়। কারণ, তাকে দেখাশোনা করার মতো কেউ নেই।’’
দু’টি ক্ষেত্রেই ‘দ্য প্রহিবিশন ফর চাইল্ড ম্যারেজ অ্যাক্ট’-এ (২০০৬) গ্রেফতার করা হয় দুই পাত্র-সহ তিন জনকে। এক পুলিশ আধিকারিক জানাচ্ছেন, অভিজ্ঞতা বলছে, প্রশাসনের চাপে মুচলেকা দিয়ে নাবালিকা মেয়ের বিয়ে না-দেওয়ার অঙ্গীকার করেও পরে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করছেন অনেকে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা চাইল্ড লাইনের এক সদস্যের কথায়, ‘‘প্রথম বার বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরে অত্যন্ত সন্তর্পণে নাবালিকার বিয়ে দিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। তাই নাবালিকাদের বিয়ে বন্ধ করতে গ্রেফতারের মতো কড়া পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’
শিশু অধিকার রক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী বলেন, “সন্তোষপুরের ঘটনাটির খবর পেতেই প্রশাসন ও পুলিশকে জানিয়েছিলাম।” তাঁর পরামর্শ, এই সময়ে সকলকে অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। লকডাউনে বহু মানুষের হাতে টাকা কম। তাঁদের অসহায়তার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিয়ের মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেশ জুড়ে নারী পাচার চক্র সক্রিয় হচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রশাসনের।