শুভেন্দু ধর (বাঁ দিকে) ও প্রদীপ ছবি সংগৃহীত
মাঝরাতে ভাড়াবাড়ির বারান্দায় শুয়ে এক বন্ধু। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে, সেই সঙ্গে গোঙানি। চারপাশে কটু গন্ধ। অপর বন্ধু শুয়ে ঘরের মধ্যে, খাটের উপরে। তাঁকে ডাকলেও সাড়া মিলছে না। বুধবার গভীর রাতে, শ্যামপুকুর থানা এলাকার নন্দলাল বসু লেনের একটি ভাড়াবাড়িতে এমন দৃশ্য দেখে প্রতিবেশীরা খবর দেন পুলিশে। সেই সঙ্গে অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে তাঁরাই দুই বন্ধুকে আর জি কর হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু কাউকেই বাঁচানো যায়নি। বৃহস্পতিবার সকালে দু’ঘণ্টার ব্যবধানে মারা গেলেন দুই বন্ধু।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃতদের নাম প্রদীপ সাহা (৪০) এবং শুভেন্দু ধর (৪০)। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, হাতে কোনও কাজ না থাকায় মানসিক অবসাদে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন দু’জনে। পারিবারিক এবং স্থানীয় সূত্রেও উঠে এসেছে একই তথ্য। যদিও তাঁদের ঘর থেকে কোনও সুইসাইড নোট মেলেনি।
নন্দলাল বসু লেনের একটি ঘরে ভাড়া থাকতেন প্রদীপ-শুভেন্দু। প্রদীপের দাদা, পেশায় বাস কন্ডাক্টর উদয় সাহা আগে ওই ভাড়াবাড়িতে থাকতেন। বিয়ের পরে স্ত্রীকে নিয়ে তিনি বেলঘরিয়ায় থাকেন। স্থানীয়েরা জানান, ছোট থেকেই প্রদীপ এবং শুভেন্দু ভাল বন্ধু ছিলেন। দু’জনে একই সঙ্গে এক জায়গায় কাজ করতেন। কাজ ছাড়তেনও একসঙ্গে। কোনও জায়গাতেই তাঁরা বেশি দিন কাজ করতেন না। তবে বর্তমানে তাঁদের কোনও কাজ ছিল না।
দুই বন্ধুর ঘরের লাগোয়া আরও কয়েকটি ঘরে বেশ কয়েকটি পরিবার ভাড়া থাকে। এক প্রতিবেশী শ্রাবণী সাহা বলেন, ‘‘বুধবার রাত ১২টা ৪০ মিনিট নাগাদ আমি শৌচাগারে যেতে গিয়ে দেখি, বারান্দায় শুয়ে শুভেন্দু গোঙাচ্ছেন, বমি করছেন। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরোচ্ছে। তখন অন্যদের ডেকে তুলি। সকলে ঘরে ঢুকে দেখি, বাপি (প্রদীপের ডাক নাম) খাটে শুয়ে, তাঁর গা পুরো ঠান্ডা। এর পরে পড়শিরাই অ্যাম্বুল্যান্স ডাকেন। খবর যায় শ্যামপুকুর থানায়। পুলিশ এবং প্রতিবেশীরা মিলে ওঁদের অ্যাম্বুল্যান্সে আর জি করে নিয়ে যান।’’ সেখানেই চিকিৎসাধীন ছিলেন দু’জনে। এর পরে বৃহস্পতিবার ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ মারা যান প্রদীপ। পরে সকাল সাড়ে ৭টা নাগাদ মৃত্যু হয় শুভেন্দুরও। হাসপাতালে দুই বন্ধুর দেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে।
খবর পেয়ে বুধবার রাতেই ঘটনাস্থলে আসেন উদয়। বৃহস্পতিবার সকালে প্রদীপের বৌদি লক্ষ্মী সাহা দে ঘটনাস্থলে এসে দাবি করেন, কাজ না থাকায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন দুই বন্ধু।
লক্ষ্মী বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে দুই বন্ধু একটি গেঞ্জি কারখানায় কাজ করতেন। তার পরে দু’জনে একটি শাড়ির দোকানে ঢুকেছিলেন। কিন্তু দু’মাস আগে সেটাও ছেড়ে দেন। ওঁরা এক জায়গায় বেশি দিন কাজ করতেন না, ফলে মাঝেমধ্যেই ওঁদের হাতে কাজ থাকত না।’’ তাঁর আরও দাবি, সম্প্রতি দুই বন্ধু তাঁকে ফোন করে জানিয়েছিলেন যে, হাতে টাকা নেই, তাই কর্মহীন বসে থাকতে ভাল লাগছে না। আগে যে গেঞ্জি কারখানায় কাজ করছিলেন দু’জনে, সেখানেই ফিরতে চাইছিলেন তাঁরা।
খবর পেয়ে এ দিন সকালে বরাহনগর থেকে আসেন প্রদীপের দিদি তপতী সাহা। ভাইয়ের মৃত্যুতে কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না তিনি। প্রতিবেশী সুজাতা মল্লিক বলেন, ‘‘দু’জনে এত ভাল বন্ধু। এমন যে একটা ঘটনা ঘটে যাবে, কে ভেবেছিল!’’