alipore zoo

বয়স বাড়ায় অভিমানী বাবু, দাঁতে ব্যথা পাপ্পুর

শুধু তুচ্ছ কারণে রাগ-অভিমানই নয়, বয়স হওয়ার ফলে একটুতেই সর্দি-কাশি এবং পেটের গোলমালও হচ্ছে বাবুর।

Advertisement

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১০:০০
Share:

প্রবীণ: চিড়িয়াখানায় পাপ্পু (বাঁ দিকে) ও বাবু। নিজস্ব চিত্র

এক দিন খাবার দিতে একটু দেরি হয়েছিল। সে কী রাগ তখন! প্রথমে তো খাবারটা ছুড়েই ফেলে দিয়েছিল। তার পরে অনেক আদর, সাধ্যসাধনা আর মাথায় হাত বোলানোর পরে খাবার মুখে তোলে সে। সেই ঘটনার পর থেকেই তটস্থ থাকেন সকলে। খাবার দিতে ঘড়ির কাঁটায় যেন সামান্য নড়চড়ও না হয়।

Advertisement

শিম্পাঞ্জি বাবু বর্তমানে আলিপুর চিড়িয়াখানার দুই প্রবীণ সদস্যের এক জন। চিড়িয়াখানার নথি তেমনটাই বলছে। ১৯৮৬ সালে জন্ম তার। এই মুহূর্তে বয়স ৩৪ বছর। এখন শিম্পাঞ্জির গড় আয়ু ৪০-৪৫ বছর। সে দিক থেকে ধরলে বাবু বার্ধক্যে পৌঁছে গিয়েছে। চিড়িয়াখানার অধিকর্তা আশিসকুমার সামন্ত বলছেন, ‘‘বয়স হয়েছে বলেই এখন বাবুর ঘনঘন রাগ-অভিমান হয়। অনেক চেষ্টা করে সেই রাগ ভাঙাতে হয়।’’

শুধু তুচ্ছ কারণে রাগ-অভিমানই নয়, বয়স হওয়ার ফলে একটুতেই সর্দি-কাশি এবং পেটের গোলমালও হচ্ছে বাবুর। ফলে হামেশাই তাকে নানা রকম ওষুধ খেতে হয়। কিন্তু ভীষণ ‘মুডি’ বাবুর আবার ওষুধ পছন্দ নয়। সেই কারণে তাকে ওষুধ দিতে হয় ঠান্ডা পানীয়ের সঙ্গে মিশিয়ে। ঠান্ডা পানীয়ের ভক্ত বাবু ঢকঢক করে তা খেয়েও ফেলে বলে চিড়িয়াখানা সূত্রের খবর।

Advertisement

বাবুর পাশাপাশি চিড়িয়াখানার আর এক প্রবীণ সদস্য হল জলহস্তী পাপ্পু। ১৯৮৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর জন্মানো পাপ্পুকে মুম্বইয়ের ‘বীরমাতা জিজাবাঈ ভোঁসলে উদ্যান’ থেকে আলিপুরে আনা হয়েছিল বছর পনেরো আগে। পশু চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, একটি জলহস্তীর গড় আয়ু ৫০ বছর। সেই হিসেবে বর্তমানে ৩৬ বছর বয়সি পাপ্পু প্রৌঢ়ত্বে পৌঁছেছে। আর বয়সজনিত কারণে তার দাঁতের সমস্যাও শুরু হয়েছে।

চিড়িয়াখানার আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, বয়সের কারণে পাপ্পুর দাঁত বড় হতে শুরু করেছিল। তার পরে এক সময়ে সেই দাঁত বেঁকে মুখের পাশ দিয়ে উল্টো ভাবে উঠে যায়। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘দাঁতের যন্ত্রণায় ক’দিন খাওয়াই

ছেড়ে দিয়েছিল পাপ্পু। তখন অ্যান্টিবায়োটিক ও ব্যথা কমানোর ওষুধ দিতে হয়েছিল। এখনও ওর দাঁতে ব্যথা হলেই সেই ওষুধগুলো দিতে হয়।’’ এমনিতে প্রবীণ দুই সদস্যের দিকে বাড়তি নজর থাকে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের। আশিসবাবুর কথায়, ‘‘সকালে-বিকেলে চিকিৎসকেরা রোজ ওদের শারীরিক পরীক্ষা করেন। সেই সঙ্গে ওদের দু’জনের দেখভালের জন্য নিযুক্ত কর্মীরাও সব সময়ে নজর রাখেন।’’

চিড়িয়াখানার নথি বলছে, অতীতে অদ্বৈত নামের ‘আলড্যাব্রা জায়ান্ট টরটয়েজ’ প্রজাতির একটি কচ্ছপ ছিল দেশের প্রবীণতম প্রাণী। ২০০৬ সালের ২২ মার্চ যখন অদ্বৈত মারা যায়, তখন তার বয়স ছিল আড়াইশো বছরেরও বেশি। তার প্রজাতিরই দু’টি কচ্ছপ এখন রয়েছে চিড়িয়াখানায়। কথা (পুরুষ) ও কলি (মহিলা) নামের ওই দু’টি কচ্ছপের বয়স যথাক্রমে ৪১ ও ৩৬ বছর। অদ্বৈতের বয়সের কাছে যা কিছুই নয় বলে জানাচ্ছেন চিড়িয়াখানার আধিকারিকেরা।

তাঁরা এ-ও জানাচ্ছেন, বাবু ও পাপ্পু এই মুহূর্তে চিড়িয়াখানা পরিবারের প্রবীণ দুই সদস্য হলেও খাওয়াদাওয়ার ব্যাপারে তাদের তেমন কোনও অনীহা দেখা যায়নি। পাপ্পু যেখানে প্রতিদিন ৪০-৪৫ কেজি গাজর ও নানা ধরনের আনাজ খায়, সেখানে বাবুর খাবারের তালিকায় আপেল, আঙুর, কলা, শসা, গাজর থেকে শুরু করে লেটুস, টোম্যাটো, পেঁয়াজ, পেঁপে সবই থাকে। গরমে আবার সেই তালিকায় যুক্ত হয় আম-তরমুজের মতো মরসুমি ফল।

তার মানে খাওয়াদাওয়া পুরোদমেই চলছে দু’জনের?

চিড়িয়াখানা-অধিকর্তা হাসতে হাসতে বললেন, ‘‘হ্যাঁ, পুরোদমেই। কেন, বয়স হলে কি খাদ্যরসিক হওয়া যায় না?’’

সত্যিই তো! বয়সের সঙ্গে কবেই বা আর খাদ্যরসিক হওয়ার সম্পর্ক ছিল!

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement