প্রতীকী ছবি
বিহারের জামুই থেকে গ্রেফতার হল আমহার্স্ট স্ট্রিটে গুলি করে খুনের ঘটনার মূল অভিযুক্ত রাকেশকুমার দাস। বছর তেইশের এই তরুণের সঙ্গেই গ্রেফতার করা হয়েছে তার সঙ্গী মণীশ দাসকে। হুগলির বাসিন্দা ১৯ বছরের এই তরুণও সরাসরি অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে পুলিশের দাবি। ধৃতদের কাছ থেকে একটি সোনার চেন এবং সোনার লকেট উদ্ধার হয়েছে। এগুলি খুন হওয়া ব্যবসায়ী দীপক দাসের বলে জানিয়েছে লালবাজার। আজ, শনিবার ধৃতদের ট্রানজ়িট রিমান্ডে কলকাতায় নিয়ে এসে আদালতে তোলার কথা।
গত বুধবার আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটে দিনেদুপুরে খুন হন নির্মাণ ব্যবসায়ী দীপক দাস। ওই এলাকায় তাঁর দোকানে ঢুকে পর পর দু’টি গুলি ছুড়ে দুই দুষ্কৃতী চলে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। যাওয়ার আগে তারা দীপকের গলার সোনার চেনও টেনে ছিঁড়ে নেয়। এর পরে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা দীপককে মৃত ঘোষণা করেন। একটি গুলি লক্ষ্যভ্রষ্ট হলেও ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টে পুলিশ জানতে পারে, অন্য গুলিটি দীপকের মাথা ফুঁড়ে দেয়। সেই গুলিতেই তাঁর মৃত্যু হয়।
দ্রুত তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, চার ভাইয়ের মধ্যে দীপকই সবচেয়ে ছোট। অনেক কম বয়সে বাবা-মাকে হারানো দীপক তাঁর কাকার কাছে মানুষ। সোদপুর এলাকায় নিজের বাড়ি করলেও কাকার বাড়ির এলাকা, আমহার্স্ট স্ট্রিটের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব তৈরি হয়নি। এক সময়ে চপ্পলের ব্যবসা ছেড়ে দীপক পোলট্রির ব্যবসায় ঢোকেন। পরে শুরু করেন নির্মাণ ব্যবসা। সেই সূত্রেই আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকায় ভাড়ায় নেওয়া ঘরে অফিস তৈরি করেন। দীপকের একাধিক পরিচিতকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পারে রাকেশের নাম।
পোলট্রির ব্যবসা শুরু করার সময় থেকেই বিহারের বাসিন্দা রাকেশের সঙ্গে দীপকের পরিচয়। মধ্যমগ্রাম, সোদপুর এলাকায় জমি-বাড়ির ব্যবসায় রাকেশ ছিল দীপকের ডান হাত। বাড়ি ফাঁকা করানো থেকে শুরু করে কী ভাবে কোন জমি বিক্রি হবে— সবই বকলমে দেখত রাকেশ। পুলিশ জেনেছে, এই সূত্রেই মধ্যমগ্রাম, সোদপুর এলাকায় রাকেশের নামে পুলিশের কাছে একাধিক অভিযোগ জমা রয়েছে। কিন্তু আমহার্স্ট স্ট্রিটের নির্মাণ ব্যবসাই এই বন্ধুত্বে তাল কাটে। এই এলাকায় ‘মধ্যমগ্রাম-সোদপুর মডেল’ যে কাজে লাগবে না, তা বুঝতে পেরে রাকেশকে একাধিক বার সতর্ক করেন দীপক। এ নিয়েই গন্ডগোলের জেরে রাকেশকে আর প্রয়োজন নেই বলে জানিয়ে দেন তিনি। এর পরে ঝামেলা চরমে ওঠে দীপকের পোলট্রির ব্যবসায় রাকেশের বিনিয়োগ করা কিছু টাকা নিয়ে। সেই টাকা না পেলে রাকেশ দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিল। পুলিশের অনুমান, সেই হুমকিই বাস্তবায়িত হয়েছে
গত বুধবার।
চিত্রটা পরিষ্কার হতেই বিহারে যায় লালবাজারের বিশেষ তদন্তকারী দল। তত ক্ষণে কেশবচন্দ্র সেন স্ট্রিটের সিসি ক্যামেরায় ধরা পড়া আততায়ীদের ফুটেজও চলে এসেছিল পুলিশের কাছে। এর পরে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে দশটা নাগাদ রাকেশের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকেই গ্রেফতার করা হয় তাকে এবং মণীশকে। মৃতের সোনার চেন এবং লকেটের পাশাপাশি গুলি চালানোর দিন ধৃতেরা যে পোশাক পরে ছিল, তা-ও বাজেয়াপ্ত করা হয়। পুলিশ জেনেছে, বিহারের একাধিক দুষ্কৃতী দলের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে রাকেশের। সেই সূত্রেই সে আগ্নেয়াস্ত্র পেয়েছিল বলে তদন্তকারীদের অনুমান।
লালবাজারের এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘রাকেশ জেরায় বলেছে, এক সময়ে দীপকের সঙ্গে মিলে সে বহু কাজ করেছে। পোলট্রির ব্যবসাতেও সে কিছু টাকা বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু সেই টাকার লভ্যাংশ আর কিছুতেই দিতে চাইছিলেন না দীপক। এক সঙ্গে কাজ না করলেও সেই টাকা বুঝে নিতেই সে বুধবার এসেছিল। ধৃতের দাবি, এমন টাকার কথা দীপক জানেনই না বলায় বন্দুক থেকে গুলি চালিয়ে দেয় সে।’’